দয়াশীল আচরণে বিশ্বনবির অতুলনীয় শিক্ষা
মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে দয়াশীল ও উদার আত্মার অধিকারী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল নিজেই দয়াশীল ছিলেন না বরং তার উম্মতকেও তিনি এই শিক্ষাই দিয়েছেন। তারাও যেন সবার প্রতি দয়াশীলআচরণ করেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
– হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে দয়া প্রদর্শন করবে, রহমান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে ঊর্ধ্বালোকবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ)
– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন- ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি আমার সেবা-শুশ্রুষা করনি’।
বান্দা বলবে- ‘হে আমার প্রভু, তুমি সারা বিশ্বের প্রতিপালক। আমি তোমার সেবা-শুশ্রুষা কীভাবে করতে পারি’?
আল্লাহ তাআলা বলবেন- ‘আমার এক বান্দা অসুস্থ ছিল; তুমি তা জানার পরও তার সেবা-শুশ্রুষা করনি। তুমি তার শুশ্রুষা করলে তুমি আমাকে তার পাশে পেতে। এটি কি তুমি জানতে না’?
‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি’। এটি শুনে আদম সন্তান বলবে-
‘হে আমার প্রভু! তুমি তো বিশ্বপ্রতিপালক। আমি কীভাবে তোমাকে খাওয়াতে পারি’?
আল্লাহ তাআলা বলবেন- ‘তোমার কি মনে নেই? আমার এক বান্দা খাবার চেয়েছিল; তুমি তাকে খাবার খাওয়াওনি। তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে তাহলে তুমি আমার কাছে এর প্রতিদান পেতে, তুমি কি এটি জানতে না’?
‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি পান করাওনি’।
আদম সন্তান বলবে- ‘হে আমার প্রভু! তুমিই তো সারা বিশ্বের প্রতিপালক। তোমাকে আমি কীভাবে পানি পান করাতে পারি’?
এতে আল্লাহ তাআলা বলবেন- ‘আমার এক পিপাসার্ত বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি তাকে পানি পান করালে এর প্রতিদান তুমি আমার কাছে পেতে।’ (মুসলিম)
– হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সকল সৃষ্টি-প্রাণীকূল আল্লাহর পরিবার-পরিজন। অতএব, আল্লাহ তাআলার কাছে তার সৃষ্টজীবের মাঝে সে-ই প্রিয়ভাজন, যে তার অধীনস্ত ও সৃষ্টজীবের সঙ্গে দয়াশীলআচরণ করে এবং তাদের প্রয়োজনের প্রতি যত্নবান থাকে।’ (মিশকাত)
হাদিস অনুযায়ী আমাদের কিছু করণীয়-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুসলমানের কাছে অপর মুসলমানের ৬টি অধিকার প্রাপ্য রয়েছে। তাহলো-
– তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা।
– সে হাঁচি দিলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।
– সে অসুস্থ হলে তার শুশ্রুষার জন্য যাওয়া।
আল্লাহ্ তাআলার ফজলে অনেকেই নিজে থেকেই এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখেন এবং হাসপাতালে গিয়ে পরিচিত-অপরিচিত রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করেন। তাদের জন্য ফলফলাদি নিয়ে যান, ফুল নিয়ে যান। এটি সত্যিই খুব ভাল অভ্যাস। আর খেদমতে খালকের (সৃষ্টির সেবার) এই পদ্ধতি খুবই ভাল।
– সে ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেওয়া।
– সে মারা গেলে তার জানাযায় শামিল হওয়া।
– নিজের জন্য যা পছন্দ কর, অপরের জন্যও তা-ই পছন্দ করা। আর তার অবর্তমানে তার কল্যাণ কামনা করা।’ (দারেমি)
তাই আসুন, আমরা মানুষের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকি এবং অন্যের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করি। আমরা যদি অন্যের প্রতি দয়াশীল হই; তবে পরকালে আল্লাহ আমাদের সঙ্গেও অনুরূপ দয়াশীল আচরণ করবেন এবং আমাদের অস্থিরতা এবং সমস্যাসমূহ দূর করে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মানবতার সবাইকে পরস্পরের প্রতি উত্তম আচরণ ও দয়াশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।