জিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন ইত‌িবাচক রিপোর্ট

0

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম মার্কিন রাষ্ট্রদূত  ইউজিন বোস্টার ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তার সাথে জানুয়ারি, ১৯, ১৯৭৬ প্রথম বৈঠকে সর্বাগ্রে বাংলাদেশের পুলিশের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সেই অনুরোধ রাখেনি। বাংলাদেশের আর কোনো সরকারপ্রধান পুলিশের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের ওপর এমন গুরুত্ব দিয়ে বিদেশের সাহায্য কামনা করেছিলেন- এমন তথ্য পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্র জিয়ার অনুরোধ রক্ষা করলে  আজকের পুলিশবাহিনী অনেক বেশি আধুনিক হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে উন্নততর করতে পারত, আবার ভাবমর্যাদারসঙ্কটও দেখা দিত না।গোপনীয়তামুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের গোপন দলিল (ইও ১১৬৫২ : জিডিএস ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৬) থেকে এ তথ্য জানা যায়। রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টার ও ‘জেনারেল জিয়ার সাথে সংলাপ’-এর বিবরণ ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৬ টেলিগ্রামযোগে ওয়াশিংটন স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেরণ করা হয়। 

বিবরণে বোস্টার লিখেছেন : (প্যারাগ্রাফ-৩) ‘তিনি (জিয়া) বললেন, তিনি তার পুলিশের একটি গ্রুপকে নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠাতে চান (যেখানে অপরাধ দমনেআমাদের পুলিশের কর্মপদ্ধতি বাংলাদেশের পুলিশকে তাদের দেশে অপরাধ দমনে সাহায্য করবে) এবং আমাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে রাইফেল ও হালকা যোগাযোগ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য সাহায্য চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আমি এই অনুরোধের ব্যাপারটি জানি এবং আমি ওয়াশিংটন ডিসিকে এটা জানিয়েছিলাম। আমি তাকে বললাম, আমাদের আগেকার আলোচনাগুলো থেকে তিনি জানতে পারেন, আমরা সবচেয়ে আগ্রহী কৃষি উন্নয়ন এবং পরিবার-পরিকল্পনায়, আমরা মনে করি, এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমরা সবচেয়ে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারব।’ 

বোস্টার লিখেছেন : ‘(প্যারাগ্রাফ-৪) পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম প্রদান করার (জিয়ার) অনুরোধের বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্মলম্যান আমাকে বলেন,ডিনারে জিয়া তার কাছে একই অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করেন এবং যে অনুরোধ আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছিলাম, জিয়া তার পুনরুল্লেখ করেছেন।’ স্মলম্যান বলেন, তিনি জিয়াকে বলেন, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে কিছু করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে তিনি জিয়াকে বলেন, ব্রিটিশ সরকার আগের এক কর্মসূচি অনুযায়ী যেসব যোগাযোগ সরঞ্জাম দিয়েছে, তারপর আরো সরঞ্জাম দিতে পারত – এ আশা যেন তিনি না করেন। জিয়া বললেন, নৌবাহিনীর জন্য কিছু সাহায্য চাওয়ার জন্য কমডোর খান তার ওপর চাপ দিচ্ছেন। তিনি (স্মলম্যান) বলে দিয়েছেন, এরকম কিছু সাহায্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হতে হবে।’ 

বোস্টার লিখেছেন : ‘(প্যারা-৬) দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ব্যাপারে জিয়া গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করলেন যে তিনি সরকারের শাসনব্যবস্থা অধিকতর বিকেন্দ্রীকরণকরার চেষ্টা করছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতৎপরতাকে উৎসাহিত করতে এবং চোরাচালান আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে চান। আমার প্রশ্নের উত্তরে জিয়া দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত থাকবে বলে তার আশ্বাস ব্যক্ত করেন এবং আরো বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা বর্তমানে কোনো সমস্যা নয়।’ 

বোস্টারের সমাপনী বক্তব্য : (প্যারা-৭) ‘মন্তব্য : বাংলাদেশে শাসনক্ষমতা দৃঢ়ভাবে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিত্বরূপে আবির্ভূত হওয়ার পর জিয়ার সাথে এটা আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তাকে দেখেছি নিরুদ্বেগ, মৃদুভাষী এবং অভাবনীয় বন্ধুত্বসুলভ এবং তার নতুন দায়িত্ব সত্ত্বেও সম্পূর্ণভাবে মানসিক চাপমুক্ত। তাকে দেখে এবং তিনি যেভাবে কাজ করছেন, তা দেখে প্রতিভাত হয় – তিনি দায়িত্ব পালন আত্নবিশ্বাসের সাথে করছেন। জিয়ার মনের স্বাভাবিক নিরুদ্বেগ ভাব, সারল্য এবং বন্ধুত্বসুলভতা কিন্তু পাশাপাশি পারিপার্শ্বিকতার ওপর দৃষ্টিপাতে সীমাবদ্ধতা – যা বোস্টার উল্লেখ করেছেন,বাংলাদেশের আর কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সাথে মার্কিন প্রতিনিধির প্রথম বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট মার্কিন প্রতিনিধিওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছেন কি না আমাদের জানা নেই।

(c)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com