আদিবাসীদের মন পেতে মরিয়া বিজেপি-তৃণমূল

0

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আলোচনায় ওঠে এসেছে আদিবাসীরা। তাদের মন পেতে মরিয়া রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাঁকুড়ায় আদিবাসী এলাকায় সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, বাঁকুড়া সফরে এসে এক আদিবাসী বাড়িতে দুপুরের খাবার খান অমিত। একই এলাকায় দাঁড়িয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই ‘মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতি’কে কটাক্ষ করেন মমতা । ‘পাঁচ তারকা হোটেলের খাবার’ এনে লোক দেখাতে ওই বাড়িতে খেয়েছেন বলে তোপ দাগেন তিনি।

এর আগে বীরসা মুন্ডার বলে একটি অন্য মূর্তিতে মালা দিয়ে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন শাহ। তাকে ‘অপমান’ বলে মন্তব্য করে আদিবাসী বীরের জন্মদিনে রাজ্য সরকারের ছুটি ঘোষণাও করেন মমতা। যদিও দুই ইস্যুতেই পাল্টা কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

সোমবার বাঁকুড়ার খাতড়ায় সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কর্মসূচি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। ঘটনাচক্রে চলতি মাসের গোড়াতেই দুদিনের জন্য রাজ্য সফরে এসে বাঁকুড়ায় একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেন অমিত শাহ। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ৫ নভেম্বর চতুরডিহি গ্রামে বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ।

সেই সময় রাজ্যের শাসক দলের অনেকেই শাহর ওই কর্মসূচিকে ‘লোক দেখানো’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। সোমবার বাঁকুড়ার খাতড়ার সভা থেকে সেই সুরেই আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর।

মমতার কথায়, ‘‘এখানে আসার আগে একটা তফসিলি গ্রামে গিয়েছিলাম আমি। সবার সঙ্গে কথা হলো। তাদের সমস্যার কথা শুনলাম। ওদের খাটিয়াতেই বসেছিলাম। কিন্তু এটা নয় যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মতো পাঁচ তারকা হোটেলের বাসমতি চালের রান্না খাবার এনে বসে খেলাম। আর তার বাড়িতে রং করে, স্যানিটাইজ করে, টাকা দিয়ে বসে লোক দেখানো হলো।’’

কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, ‘‘তফসিলি বোনেরা ছাড়াচ্ছে ধনেপাতা, আর উনি খাচ্ছেন পোস্তর বড়া।’’

জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘ওদের আর আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। ওরা আদিবাসী বাড়িতে খাওয়ার তাৎপর্য বুঝতে পারবেন না।’’

আরও বলেন, “অমিত শাহ বাঁকুড়ায় গিয়ে খাটিয়ায় বসেছিলেন। সেই দেখে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও খাটিয়ায় বসেছেন। মানুষ সবই দেখছে। আর বিজেপি নেতাদের সাধারণ মানুষের বাড়িতে খাওয়ার অভ্যাস আছে। এটা ওর জানা নেই বোধ হয়!”

এ আগে অবশ্য মমতা সতর্কবার্তা দেন, “ভোটের আগে অনেক রাজনৈতিক দল আসবে। টাকা ছড়াবে। ব্যাংকে টাকা জমা দেবে। মনে রাখবেন, ওই টাকা জমিদারির টাকা নয়, আপনারই টাকা। টাকা নেবেন কিন্তু ভোট দেবেন না। আমরা এখন রেশনে পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। আগামী জুন মাস পর্যন্ত দেব। তার পরেও দেব। আমাদেরই সরকার থাকবে।”

শাহের বাঁকুড়া সফরেই একটি মূর্তিতে মালা দেওয়া ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বীরসা মুণ্ডার মূর্তি বলে বাঁকুড়ার পেয়ারাবাগানের একটি মূর্তিতে মালা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু পরে স্থানীয়রা দাবি করেন, ওই মূর্তি বীরসা মুন্ডার নয়, কোনো এক শিকারির। বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্বও পরে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেনে নিয়ে ওই মূর্তির নিচে বীরসা মুন্ডার ছবি এনে তাতে মালা দেন পরের দিন।

মমতার মতে, এটা শুধু ভুল নয়, ‘অপমান’। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে অমিত শাহের রোড শো থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘উনি এসেছিলেন। কী করলেন? একটা মূর্তিতে মালা দিলেন। পরে আপনারা বললেন, ওটা বীরসা মুন্ডা নয়। শিকারির মূর্তি। আমি শিকারিকেও সম্মান করি। তুমি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙবে, আবার বীরসা মুন্ডার বলে যে কোনো মূর্তিতে মালা দেবে, এটা অপমান।’’

অমিত শাহর সেই ‘ভুল’-এর রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগও ছাড়েননি মমতা। আদিবাসী সমাজের মন পেতে সেই বীরসা মুন্ডার জন্মদিনকেই রাজ্যে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করলেন তিনি। বলেন, ‘‘আগামী দিনে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনেও রাজ্যে ছুটি থাকবে।’’ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ছুটির উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আগামী বছরের ক্যালেন্ডারে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনও ছুটি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবে।’’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com