মার্কিন অস্ত্র কিনতে দিকে ছুটছে ভারত, পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন

0

২০ নভেম্বর চীন আর ভারত অনলাইনে তৃতীয় দ্বিপক্ষীয় উচ্চ পর্যায়ের ট্র্যাক-টু পর্যায়ের সংলাপে বসেছিল। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডোং জোর দিয়ে বলেছেন যে “চীন আর ভারতের উচিত পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা আর পারস্পরিক অর্জনের পথে টিকে থাকা। সন্দেহ আর হতাশার পথে দুই দেশের হাঁটা উচিত নয়, নেতিবাচক আর অধঃপতনের পথ তো দূরে থাক”।

সত্যি বলতে কি চীন আর ভারতের মধ্যে অসন্তোষের দীর্ঘ ইতিহাস চলে আসছে। ভারতের ঐতিহাসিক বোঝা আর প্রতিশোধের দরকার অনেক বেশি। তাছাড়া, নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘কূটনৈতিক সুবিধাবাদের’ চর্চা করছে এবং চীনের বিরুদ্ধে ‘সামরিক আভিযানিক কৌশল’ বাস্তবায়ন করছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন ভারতকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যাতে ভারত চীনকে তাদের প্রতিপক্ষ না ভেবে বরং অংশীদার মনে করে। তবে মনে হচ্ছে যে, ভারতের সাথে বন্ধুত্বের জন্য এ ধরনের কষ্টসাধ্য চেষ্টা চালানোর পরও দ্রুত কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। 

চলতি বছরের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় রক্তপাতের ঘটনার পর থেকে মোদি প্রশাসন হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করেছে এবং সমর্থন দিয়েছে, চীনা পণ্য বয়কট করেছে এবং বিভিন্নভাবে চীনা বিনিয়োগের উপর খড়্গহস্ত হয়েছে। চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার যে কৌশল নিয়েছে আমেরিকান সরকার, সেই পথ অনুসরণ করেছে ভারত। সামরিক দিক থেকে চীন-ভারত সীমান্তে অব্যাহতভাবে সেনা সমাগম বাড়িয়েছে ভারত। তারা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনেছে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে মিলে কোয়াড নিরাপত্তা সংলাপ মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করেছে, এবং ভারত মহাসাগরে কোয়াড দেশগুলোকে নিয়ে মালাবার নৌ মহড়া চালিয়েছে। কূটনৈতিকভাবে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি থেকে লাভবান হওয়ার  চেষ্টা করছে ভারতীয়রা। 

বিগত জুন মাস থেকে, চীন আর ভারত আট দফা কর্পস কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক করেছে। নবম দফা শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। চীন বারবার জোর দিয়ে ভারতকে বলেছে যাতে তারা ‘যৌক্তিক অবস্থান ও স্থিরতা বজায় রাখে, আরও পরিপক্ক মানসিকতা নিয়ে চীন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একই গন্তব্যের দিকে যাতে যাত্রা করে”। কিন্তু, চীনের বন্ধুপ্রতীম আচরণ মনে হচ্ছে ভারতের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। 

আসলে ভারতের কূটনীতিক কৌশলের পরিবর্তন শুরু হয়েছে কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তনের জন্য ২০১৯ সালের আগস্টে সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। মোদি সরকার একতরফাভাবে জাতিসংঘের প্রস্তাবনা লঙ্ঘন করে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এই অঞ্চলে ‘জম্মু ও কাশ্মীর ইউনিউন টেরিটোরি’ এবং ‘লাদাখ ইউনিয়ন টেরিটোরি’ গঠন করেছে, এবং এর মধ্য দিয়ে তারা সরাসরি চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কাশ্মীর বিবাদ ছিল, সেটার সাথে চীনকে যুক্ত করেছে। 

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে, চীন-ভারত সীমান্তের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে ভারত এবং সেখানে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা। তবে, ভারত সরকার তার কৌশলগত দুর্বলতা আর কূটনৈতিক জুয়া খেলার বিষয়ে আসলে গভীরভাবে ভাবেনি, বরং তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে পরীক্ষা করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। 

সমস্ত লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে ভারত হয়তো তার কৌশলগত উদ্দেশ্য পরিবর্তন করছে। চীনকে তারা উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে না দেখে তাদেরকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে তারা। তারা ভাবছে যে, ‘ড্রাগন আর হাতি একসাথে নাচতে পারে না”। 

গত বছরের শেষ দিকে রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) থেকে বের হয়ে যাওয়ার ভারতের ঘোষণা ছিল সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ। ১৫ নভেম্বর চীন অন্য ১৪টি দেশের সাথে আরসিইপি চুক্তি স্বাক্ষরের পর মোদি সরকার আর ভারতীয় মিডিয়া সরাসরি বা পরোক্ষভাবে চীনের ব্যাপারে ভারতের কৌশলগত উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে, সেটা হলো ভারত চীনের নেতৃত্বাধীন কোন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তিতে অংশ নেবে না। ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধনের মধ্যে যাওয়ার জন্য উদগ্রিব। 

নরেন্দ্র মোদি একটা নিচু জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং সেখান থেকে বেশি দূর পর্যন্ত তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। সে কারণে চীন-ভারত সম্পর্ক এবং আজকের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সঠিকভাবে দেখার ক্ষেত্রে তার কৌশলগত উচ্চতা এবং দূরদৃষ্টিতে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। 

চীনের ধৈর্য সীমিত। এবারে চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাষা ছিল শক্তিশালী। এটা একটা সতর্কবার্তার মতো। ভারত যেহেতু এশিয়া এবং সহযোগিতা চায় না, চীন ভারতকে আর ধরে রাখতে পারে না। ভারত যেহেতু এশিয়া এবং সহযোগিতা ছেড়ে দেয়ার জন্য এতটা বদ্ধপরিকর, সে কারণে ভারতকে ফেরানো চীনের জন্য খুবই কঠিন। 

আমাদের বোঝা উচিত যে, যুক্তরাষ্ট্র দুর্দশার মধ্যে আছে এবং চীন অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার সাথে সমস্যা মিটিয়ে ফেলছে। ভারতের যদি পরিস্কার মানসিকতা না থাকে, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com