সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক করা হতে পারে ৫ জন নেতার নাম আলোচনায়

0

সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর এখন শুরু হয়েছে মহানগর বিএনপি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। একজন যোগ্য নেতাকে আহবায়ক করার লক্ষে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা শুরু করছেন আলাপ-আলোচনা। সিলেট মহানগর বিএনপিতে কাকে আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হলে বিভাজন কমবে, সে লক্ষেই উপযুক্ত ব্যক্তির খোঁজে রয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, আহবায়ক করা হতে পারে এমন ৫ জন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হক, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরোজ্জামান সেলিমের মাঝ থেকে কাউকে করা হতে পারে আহবায়ক।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারী সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি পদে নাসিম হোসেইন ও সাধারন সম্পাদক পদে বদরোজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরের দিন ৮ জানুয়ারী সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।গত ২ অক্টোবর মেয়াদোতীর্ণ জেলা বিএনপির ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি করা হয়।সর্বশেষ ১ নভেম্বর দীর্ঘ ১৯ বছর পর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠনের পর এখন শুরু হয়ছে মহানগর বিএনপি গঠনের প্রক্রিয়া। কে হচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক এমন আলোচনা চলছে বিএনপি ঘরণার রাজনীতিতে।প্রতিটি বলয় থেকে কয়জন করে আহবায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন আলোচনা এখন সর্বত্র।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে ২৫ সদস্য বিশিষ্টের। কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহবায়ক করে বাকি ২৪ জনকে সদস্য রাখা হয়েছে।দলীয় কোন্দল মেঠাতে মহানগর বিএনপিতে একজনকে সদস্য সচিব করা হতে পারে বলছেন কেউ কেউ। তবে একথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হাসান।জেলা কমিটি যেভাবে হয়েছে এর বাহিরে কিছু হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।মহানগর বিএনপির কমিটি বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। কে দায়িত্ব পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, বিগত দিনে আমি কাউকে ফেভার করিনি কিংবা কাউকে ডিসফেভার করিনি। নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে মহানগর বিএনপির কমিটি করা হবে বলে তিনি জানান।

বিএনপির একটি অংশ চাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতা, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী-কে আহবায়ক করতে। জেলা বিএনপিতে আরিফ বলয়ের তেমন কেউ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এছাড়া জেলা যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে আরিফের পছন্দ ছিল সাদিকুর রহমানকে।১৯ বছর সাদিক ছিলেন জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। যুবদলের কমিটি গঠনের পর বিপক্ষে অবস্থান নেন আরিফসহ ৪ বিএনপি নেতা।তারা দল থেকে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন।

এজন্য আরিফকে খুশি করতে এবং সিলেট বিএনপির চলমান বিরোধ মেঠাতে তাঁকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক করা হতে পারে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে। ছাত্র জীবনে তিনি শুরু করেন রাজনীতি। যোগদেন ছাত্রদলের রাজনীতিতে।সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন আরিফ। দীর্ঘদিন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা আরিফের প্রভাব কম নয় সিলেটে।বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন। মহানগর বিএনপির কমিটিতে তাঁর আগ্রহ আছে কি-না জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর নামও বেশ আলোচনায় রয়েছে। ক্লিন ইমেজের ডা. শাহরিয়ার ছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের প্রথম সভাপতি।এছাড়া তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। মহানগর বিএনপির আহবায়ক করার বিষয়ে তিনি বলেন, আগাম কিছু বলা যাবেনা।

এদিকে আলোচনায় রয়েছে দলের দু’জন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার নাম। সিলেট বিএনপিতে এম এ হককে এক নামে সবাই চিনেন। তিনি এখন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। প্রবীণ এ নেতা সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। রাজনীতিতে তাঁর পদপদবী কম ছিলনা। জীবনের শেষ বয়সে তাঁকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক করে সম্মানিত করা হতে পারে বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন।

এম এ হকের সাথে আলোচনায় আছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হকের নাম।দলের কল্যাণে ও নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন জোরদার করতে দল যদি তাঁকে এ দায়িত্ব দেয় তাহলে কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক বদরোজ্জামান সেলিমের অনেক ভুমিকা রয়েছে সিলেট বিএনপিতে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন, তাঁর পরিবার সেখানে থাকার কারণে। দলের একটি সুত্র জানিয়েছে, গ্রীন সিগন্যাল পেলে তিনি দেশে চলে আসতে পারেন। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সাথে তাঁর রয়েছে যোগাযোগ। লন্ডনের একটি সুত্র জানিয়েছে, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল তাঁকে মেয়র পদে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্দ।এজন্য সেই রাগ-অভিমান মেঠাতে সেলিমকে শেষমেষ আহবায়ক করা হতে পারে।

বদরোজ্জামান সেলিম ১৯৭৮ সালে জাগো দলের মাধ্যমে শুরু করেন রাজনীতি। পরবর্তীতে সিলেট ছাত্রদলের মুল পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতিও ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন সেলিম।

এ প্রতিবেদকের সাথে রবিবার রাতে আলাপকালে সেলিম জানান, দলের সকল পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছি। দুর্দিনে দল ছেড়ে যাইনি। তিনি বলেন, দল যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করে তাহলে এই দায়িত্ব দেবে। সারা জীবন দলকে দিয়েছি। কিছু নেইনি। চেয়ে কোন পদ পদবী নিতে রাজি নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আবারো বলেন, প্রয়োজন হলে ‘কুল্লু খালাস’।
প্রসঙ্গত, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি তখন আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন; বলেন, ‘কুল্লু খালাস’। তখন থেকে সেলিমের নামের সাথে সিলেটের লোকজন ‘কুল্লু খালাস’ হিসেবে অভিহিত করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com