চরিত্রবানদের জন্য ৭ পুরস্কার

0

মানুষের চারিত্রিক সৌন্দর্যের বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ভালো গুণের চর্চা ও মন্দ স্বভাব পরিহারের মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তিত্ব গঠন ইসলামি শরিয়তের অন্যতম উদ্দেশ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানে প্রেরিত হয়েছি।’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ৮)

আত্মসম্মানবোধ মানুষের ব্যক্তিত্বের অন্যতম প্রধান দিক। আত্মসম্মানহীন মানুষ মানবীয় অনেক গুণাবলি থেকে বঞ্চিত। ইসলাম মানুষকে আত্মমর্যাদবোধসম্পন্ন হতে বলে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুমিন আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন আর আল্লাহ তাদের চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৬১)

জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ ও মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করবে তুমি যখন যেভাবেই থাকো না কেন। আর মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করবে। কেননা নেক কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে উত্তম চরিত্র অর্জনের মৌলিক তিনটি দিক বর্ণনা করেছেন। এসব গুণের মাধ্যমে মানুষ উত্তম চরিত্রের দীক্ষা লাভ করে। আর উত্তম চরিত্র উত্তম জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।

উত্তম চরিত্রের পুরস্কার

কোরআন-হাদিসে উত্তম চরিত্র অর্জন ও নৈতিক জীবনযাপনের বহু পুরস্কারের বিবরণ রয়েছে। এর কয়েকটি হলো

জান্নাত : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি সহায়ক হবে? মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

নেকি : আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিনে উত্তম চরিত্রের চেয়ে অন্য কিছু পাল্লায় বেশি ভারী হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)

ইমানে পূর্ণতা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইমানের হিসাবে সর্বোত্তম মুমিন সেই যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪০২)

লক্ষ্য পূরণ : চারিত্রিক পূর্ণতা দানকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার অন্যতম নববি মিশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৯৩৯)

উত্তম ইবাদত : সুন্দর ও উত্তম চরিত্র দিয়ে মুমিন নিয়মিত রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদ আদায়ের মর্যাদা অর্জন করবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে স্থায়ী রোজাদার ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সম্মান অর্জন করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

জান্নাতে ঘর : আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদ হলো ‘যে তার চরিত্র সুন্দর করবে আমি সর্বোত্তম জান্নাতে তার জন্য ঘরের জামিনদার হব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০২)

মহানবী (সা.)-এর নৈকট্য : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে আমার বেশি প্রিয় এবং আমার মজলিশের বেশি নিকটবর্তী তারাই থাকবে যারা তোমাদের ভেতর সর্বোত্তম চরিত্রবান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)

উত্তম চরিত্রের নিদর্শন

আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত তিনটি বিষয় ছাড়াও কোরআন ও হাদিসে উত্তম চরিত্রের আরও কিছু দিক বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘…যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে; যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন বাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)

হাসান (রা.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হচ্ছে বদান্যতা, দানশীলতা ও সহনশীলতা।’ (জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, ১৯/৮১)

আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হলো চেহারার প্রফুল্লতা, সৎপথে দান করা ও কষ্ট প্রদান থেকে বিরত থাকা।’ জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, ১৯/৮১)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com