কোরআনের ব্যাখ্যায় পরিবেশ ও প্রকৃতি

0

এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি/খোদা তোমার মেহেরবাণী। পৃথিবীতে মানুষ আসার বহু আগেই মেহেরবাণ খোদা তাঁর অপার নেয়ামতে প্রকৃতি ও পরিবেশকে সাজিয়েছেন।

এ পরিবেশ ও প্রকৃতির মৌলিক উপাদান হচ্ছে পানি ও মাটি। মূলত মাটি থেকেই গাছ-পালা, তরু-লতা ইত্যাদি উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি থেকে প্রাণ সঞ্চার করে।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনাধারা, যাতে তারা ফল খায়’ (সূরা ইয়াসিন : ৩৩)।

পরিবেশের আরেকটি আবশ্যিক উপাদান হচ্ছে আলো। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি অনুধাবন করে না, আমি রাত সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলোকিত।

এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’

(সূরা নমল : ৮৬)।

পরিবেশকে বসবাস উপযোগী তথা সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ইসলাম দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আল্লাহ বলন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে’ (সূরা আর রুম : ৪১)।

পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। কোরআনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও’ (সূরা বাকারা : ২২২)।

আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় ও জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় সৃষ্টি করেছেন গাছপালা ও পর্বতমালা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ’ (সূরা কাফ : ৭-৮)।

গাছ মানুষ ও পরিবেশের বন্ধু। সবুজ গাছপালার ওপরই নির্ভর করে মানুষসহ পরিপূর্ণ প্রাণী জগতের অস্তিত্ব। গাছপালা সংরক্ষণের নির্দেশ হুশিয়ারি দিয়ে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন’ (আবু দাউদ : ৫২৪১, বায়হাকী: ৬/১৪০)।

পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গাছ লাগানোর শিক্ষা আমরা মহানবী (সা.)-এর হাদিস থেকে পাই। তিনি বলেছেন, যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কেয়ামত হবে, তবু আজ একটি গাছ লাগাও।

কোরআনে পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর পেরেক বলে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু মানুষ অবাধে বনজঙ্গল উজাড় করে ও পাহাড় কেটে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসছে। অবুঝ মানুষ নিজের প্রতি কত বড় অবিচার করছে, তা আমাদের চারপাশে চোখ বোলালেই বোঝা যায়।

আমাদের অসচেতনতা ও অবহেলায় পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে বহুগুণে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ইমানের ৭৩টি শাখা, তন্মধ্যে সর্বোত্তমটি হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বনিুটি হল, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূর করা। তিনি আরও বলেছেন, পবিত্রতা ইমানের অর্ধাংশ।

রাসূল (সা.) পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা অভিশপ্ত তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাট, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক। আমরা অনেক সময় হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকি না। এতে করে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যের ক্ষতি হতে পারে।

রাসূল (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি মুখ ঢেকে নিতেন। পরিবেশের সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ইসলামে রয়েছে স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা; যা অনুসরণ করলে বিশ্বব্যাপী একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com