স্বস্তি ফিরছে না নিত্যপণ্যে
রাজধানীসহ দেশের সব বাজারে গত এক মাস ধরে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে আসতে শুরু করেছে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ। মাছের সরবরাহও পর্যাপ্ত। অধিকাংশ বাজারেই এখন মিলছে আগাম আলু। আমন তুলতে শুরু করেছেন কৃষক। তবুও স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের দামে। মাছের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাকি প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই চড়া।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল আগের মতোই ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, মোটা জাতের চাল তেমন বিক্রি হয় না। তবে এসব চাল কিনতে হলেও কেজিপ্রতি গুনতে হবে ৪৫-৪৮ টাকা। আমন ধানের চাল বাজারে এলেও দামে তেমন একটা পরিবর্তন হবে না জানিয়ে হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা আবদুল মালেক বলেন, ঢাকায় চিকন চালের চাহিদা বেশি। আর আমন মৌসুমে মোটা চাল বেশি হয়। তাই বোরো আসার আগ পর্যন্ত দাম কমছে না।
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, অল্প পরিমাণে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আনছেন কৃষকরা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় এই মসলার বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজ কিছুটা অপরিপক্ব। মূলত বাড়তি লাভের আশায় কৃষকরা এগুলো তুলছেন। প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকা দরে। শ্যামবাজার বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আবদুল মাজেদ বলেন, আগামী মাস থেকে পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। তখন দাম আরও কমবে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে দেখা মিলছে আগাম নতুন আলু। প্রায় এক মাস আগে স্বল্প পরিমাণে পণ্যটি এলেও এখন পর্যাপ্ত মিলছে। তবে দাম কিছুটা চড়া। কেজিপ্রতি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা দরে। এসব আলুর মধ্যে কিছু দেশি আর কিছু ভারত থেকে আমদানি করা বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পুরনো আলুতে সরকার কেজিপ্রতি খুচরায় সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা এক দিনের জন্যও বাস্তবায়ন হয়নি। বাজারে প্রতি কেজি পুরনো আলু ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বাজারে দেশি কাঁচামরিচ আসতে শুরু করলেও দাম এখনো কমেনি। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ খুচরায় এখনো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, অগ্রহায়ণের শুরুতে দেশি মরিচের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। কেজিপ্রতি দেশি রসুন ১২০ ও চীনের রসুন ১০০ টাকা, মসুর ডাল ১৩০ ও মোটা মসুর ডাল ১০০ টাকা এবং মুগ ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গত জুলাইয়ে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি করে বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভ্যাট-ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে কোনো সাড়া মেলেনি। গত ২২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ২ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এখনো তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড়েছে শীতকালীন সবজি। কিন্তু দাম এখনো অস্বাভাবিক। প্রতিটি বাঁধাকপি-ফুলকপি কিনতে প্রয়োজন পড়ছে ৪৫-৫০ টাকা। আর ভালো মানের বড় বাঁধাকপি-ফুলকপির ক্ষেত্রে ৭০ টাকাও লাগছে। বাজারে শিমের কেজি ৭০-১০০, বরবটি ৮০, ঢেঁড়স ও গাজর ৭০-৮০, বেগুন ৮০-৯০, শসা ৫০, মুলা ৫০, কাঁকরোল ৬০, করলা ৮০, চিচিঙ্গা ৬০-৭০, ঝিঙে ৬০, পেঁপে ৩০-৪০ ও ধুন্দল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি আঁটি লালশাক, ডাঁটাশাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। পালংশাকের আঁটি ১৫ ও মিষ্টি কুমড়া শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। প্রতি আঁটি লাউশাক বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা দরে। বাজারে প্রতিটি লাউ ৬০, মিষ্টি কুমড়া আকারভেদে ৪০-৫০ ও চাল কুমড়া ৪০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি ছোট আকারের রুই-কাতলের কেজি ২০০-২২০ ও বড় আকারের রুই-কাতল ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, পাঙ্গাশ ১৪০, পাবদা ও টেংরা ৪০০-৫০০, হাইব্রিড কই ১৮০-২২০, শিং ৫০০, ছোট চিংড়ি ৫০০, গলদা ও বাগদা ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামে কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম। দামের অস্থিরতায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা পড়েছে বিপাকে। অন্যদিকে কমছে মাছের দাম। নগরীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল কেজিপ্রতি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। কাঁকরোলের কেজি ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা ও গাজর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বাঁধাকপি ৫০ টাকা ও ফুলকপি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনো বেশি। কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বেশিরভাগ সবজির দাম কমবে প্রায় মাসখানেক পর।’
বাজারে কিছুটা স্বাভাবিক মাছের দাম। গতকাল প্রতি কেজি রুই ২৫০ টাকা, কৈ ১২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা, লইট্টা ১০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ৫০০ গ্রাম আকারের কোরাল বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়। রূপচাঁদার কেজি ৫৫০-৬৫০ এবং চিংড়ি ৪০০-৭০০ টাকা। পাঙ্গাশ কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা।
বক্সিরহাট বাজারের ক্রেতা মো. ইসমাইল বলেন, ‘সবজি না কিনে আপাতত ওই দামে মাছ কিনেছি। কিন্তু সবজি ছাড়া তো বড়জোর দুয়েক দিন চলা যায়। কিন্তু এত বেশি দামে সবজি কিনলে সংসার চালাতে ধার-দেনা করতে হবে।’