আগুন কী জ্বলে উঠবে মুসলিম বিশ্বে?

0

আগুন কী জ্বলে উঠবে মুসলিম বিশ্বে?

লেখিকাঃ জান্নাত খাতুন।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক।

ট্রাম্প এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন আফগানিস্তান এবং ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে আনার ব্যাপারে। ট্রাম্পের নয়া ডিফেন্স সেক্রেটারি এটার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন মাত্র ২৫০০ সেনা থাকবে আফগানিস্তানে। এদিকে ইথিওপিয়ায় আগুন জ্বলছে। যা বজায় থাকলে এর উত্তাপ মধ্যপ্রাচ্যেও যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হলে এ দুটি দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। তাহলে কী মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান তথা মুসলিম বিশ্বে কী আগুন জ্বলে উঠবে? চলুন জানা যাক।

ট্রাম্প নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা কমিয়ে আনবেন। এখন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্পের নয়া সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স সেটা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে তালেবান স্বাগত জানিয়েছে এবং তালেবান এই ঘোষণায় আনন্দ প্রকাশ করেছে। এটা সকলের জানা যে, আমেরিকার পাহারায় টিকে আছে আফগানিস্তানের সরকার। আর সেখানে তালেবানও সরকার এর সমতুল্য এক শক্তি। ট্রাম্পের ঘোষণা অনু্যায়ী যদি সত্যি সত্যিই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা কমিয়ে আনা হয়, তাহলে আফগানিস্তানে তালেবানের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আরও বেশী নড়বড়ে হবে আফগানিস্তানের সরকারের অবস্থান। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি এবং জাতীয় রাজনৈতিক সমঝোতা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ভীত আফগানিস্তানে নতুন গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশংকায়। বিশ্লেষকরা বলছেন গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। পতন হতে পারে আফগান সরকারের। বাকী আমেরিকান সৈন্যের মধ্যে অনেকেই নিহত হতে পারে। এসবের মধ্যেই আজ কাবুলে পৌঁছেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই তার প্রথম আফগানিস্তান সফর। ইমরান খান একদিনের সফরে কাবুল গেছেন। তিনি পাকিস্তানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও আফগান শান্তি আলোচনা নিয়ে আফগান সরকারের সাথে কথা বলবেন। পাকিস্তানের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা নাগাদ ইমরান খানের পাকিস্তান ফিরে আসার কথা। তবে ইমরান খান আফগান সরকার ও তালেবানকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য কতটুকু রাজি করাতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়। আল্লাহ ইমরান খানকে সফলতা দান করুক। তাও কিন্তু আমেরিকান সৈন্য কমিয়ে আনার পর আফগান গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশংকা থেকেই যাবে।

এবার আসা যাক ইরাকের ব্যাপারে। ট্রাম্পের নয়া সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ইরাক থেকেও সৈন্য কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। যার ফলে ইরাকের সরকারও গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশংকায় ভীত। ইতিমধ্যে দায়েশ অন্যান্য সংগঠন ইরাকে তাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী করেছে আর মধ্যে রয়েছে পিকেকেও। ফলে ইরাকে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। ইরাকে ইরানের মিলিশিয়া থাকায় এ ব্যাপারে ইরান গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। ইরাকে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও পড়বে। সব মিলিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ বা অস্থিরতা শুরু হলে তা পার্শ্ববর্তী অনেক মুসলিম দেশকে প্রভাবিত করবে। ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট লিখছে ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ সপ্তাহে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রচন্ড বিরোধে জড়াতে পারে। ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে এসে সৈন্য ফিরিয়ে নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে চান। ফরেন পলিসি লিখছে যে, বাইডেন এরদোয়ানকে এড়াতে পারবেন না, তবে তুরস্ক-আমেরিকা সম্পর্ক সঠিক জায়গায় রাখতে পারবে। এর মধ্যেই মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্স, তুরস্ক, জর্জিয়া ঘুরে ইসরাইলে পৌঁছান। ইসরাইলে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এখান থেকেও শুরু হতে পারে নতুন সমীকরণ।

এবার আসা যাক ইথিওপিয়া পরিস্থিতিতে। ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে সীমান্তবর্তীদেশ ইরিত্রিয়া। বলা রাখা ভালো ইরিত্রিয়া ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ দেশ। আর ইরিত্রিয়ায় আরব আমিরাতের সামরিক ঘাঁটি আছে। ইথিওপিয়ার সীমান্তাবর্তী আরেকদেশ সুদান। সুদান কিছু দিন আগে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো। সুদানেও ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইথিওপিয়ার সীমান্তাবর্তী আরেকদেশ হলো জিবুতি। যেখানে চীনের সামরিক ঘাঁটি আছে। জিবুতি ও সোমালিয়া তুরস্ক ও কাতার ঘনিষ্ঠ দেশ। এই দুটি দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠুক তা চীন, তুরস্ক এবং কাতার কেউ চাইবে না। তবে ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধ চলমান থাকলে এই সব কটি দেশই অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এই দেশগুলো অস্থিতিশীল হওয়ার ফলে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যা মুসলিম বিশ্বের জন্য কল্যাণজনক নয়। এই সকল ঘটনা হলো এক একটি বিন্দু যেগুলো মুসলিম বিশ্বে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পথে গিয়ে শেষ হয়। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবে যেন ঠিকঠাক হয়ে যায়।

তথ্যসূত্রঃ AlJazeera
Foreign Policy
The Washington Post
Business Insider
DAWN
The Independent

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com