ভারত কেন এত ভয় পায়?

0

পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (আসিয়ান), অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নতুন এক বাণিজ্য এলাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রথমবারের মতো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া একত্রিত হয়ে চীনের সাথে বাণিজ্যচুক্তি করেছে। এই বাণিজ্য জোট দুনিয়া-কাঁপানো।

এতে ক্রয়শক্তির হিসাবের (পিপিপি)পরিভাষায় পৃথিবীর মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ আছে।আসিয়ানের সূচিত এই উদ্যোগে পরিষেবা, বিনিয়োগ, ই-কমার্স, টেলিকমিউনিকেশন্স, মেধাসত্ত্ব অন্তর্ভুক্ত। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার সময় রিজিওন্যাল ইকোনমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপিতে ভারতও ছিল। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী দিল্লি গত বছরের এ সময়ে এ থেকে সরে যায়।

ভারত কি ভয় পায়?
ভারতের তত গতিশীল না থাকা অর্থনীতির কি চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে সংরক্ষণবাদী প্রতিবন্ধকতা স্থায়ীভাবে রক্ষা করা প্রয়োজন? মধ্য মেয়াদে ভারত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার অনেক কথা বলা হলেও আসলে দেশটি পূর্ব এশিয়ান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে ভয় পায়।
দেশটি মৌনভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দেশ রফতানি-চালিত অর্থনীতি নয়। তাদের রফতানির বেশির ভাগই কাঁচামাল বা নিম্ন প্রযুক্তির সামগ্রী। এ কারণেই মূলত চীনের সাথে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। আইটি সফটওয়্যার নয়, লোহার আকরিক, সুতা ও রত্নপাথরই চীনে তাদের প্রধান রফতানি পণ্য।

অবশ্য দুট বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, ১৭টি দেশের জোটে সবচেয়ে ধনী অর্থনীতি জাপান অনেক আলোচনা করেছে, বিশেষ করে কৃষি ও খাদ্য নিয়ে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও লাওসের মতো গরিব দেশগুলো বিশ্বজয়ী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত নয়। তাহলে ভারতীয় হাতি যেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়, সেখানে কিভাবে এসব দেশ উত্তর-পূর্ব এশিয়ার ম্যানুফেকচারিং হ্যারিকেন প্রতিরোধ করতে পারবে বলে মনে করছে?

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মোদির ব্যবসায়ী সঙ্গীরা ভারতের অর্থনৈতিক গোলকধাঁধার দুর্নীতিতে চলাচল করতে দক্ষতার কারণে ছোট পুকুরে বড় মাছ হতে থাকতে চায়।উদারিকরণের তিন দশকের পরও মনে হচ্ছে তারা স্টিল, টেক্সাইল ও ডেইরি খাতে প্রতিযোগিতা করতে অক্ষম। এর দক্ষিণ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া অপ্রাসঙ্গিক। আরসিইপি থেকে তার সরে আসার আরেকটি কারণ রয়েছে।

চীন নিয়ে আমেরিকার সাথে বাজি
২০১৯ সালে শেষ মিনিটে ভারতের সরে আসার অন্যতম কারণ হলো আমেরিকার তাকে পেছন থেকে ডাকা। আমেরিকান চাপের কারণেই ইরানের কাছ থেকে সে সরে এসেছিল। আরপিইসির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল।

ভারত দাবি করছে, তারা বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়াতে চায়। আসিয়ানের সাথে তার আগে থেকেই মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি ছিল। মূলত, চীনের সাথে যোগাযোগ সীমিত করার আকাঙ্ক্ষাতেই সে পরিচালিত হচ্ছে। আসিয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামোর মধ্যেই বিকশিত হতে না চাওয়াটা প্রায় বিরক্তির পর্যায়েই পড়ে। এর বদলে ভারতকে আমেরিকা উৎসাহিত করছে চীনের সাথে বিপর্যয়কর মুখোমুখি হতে।
মনে রাখতে হবে, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া কোয়াডের (চীনবিরোধী গ্রুপিং) সদস্য হলেও তারা আরসিইপিতেও আছে।ভারতও তা করতে পারত। এখন ভারত আরো ৩০ বছরের জন্য এই অর্থনৈতিক এলাকা থেকে উপকৃত হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখল।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com