চীনের গোপন শক্তি

0

একটি বিষয় অনেক সময় আমাদের বিবেচনার বাইরে থেকে যায় সেটি হলো বিশ্বের শক্তি নির্বিশেষে সব দেশের দৃশ্যমান অর্থনীতির পাশাপাশি একটি অদৃশ্যমান অর্থনীতি থাকে। মুক্তবাজার ও উদারনৈতিক দেশগুলোতে অদৃশ্যমান অর্থনীতির অবয়ব ততটা বড় হয় না যতটা নিয়ন্ত্রিত বা আধা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির দেশগুলোর হয়। চীন হলো শেষোক্ত শ্রেণীর এমন একটি দেশ যার তিন থেকে চার ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগযোগ্য নগদ অর্থ রয়েছে। চীনের দৃশ্যমান অর্থনীতির যে আকার আমরা আনুষ্ঠানিক সূত্র থেকে পাই তার তুলনায় দৃশ্যমান অদৃশ্যমান দুই অর্থনীতির আকার সংযুক্ত করা হলে এখনই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে চীন। এ ছাড়া বিশ্ব এখন যেভাবে হাইব্রিড প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে তাতে রেয়ার আর্থ বা বিরল ধাতবের ব্যবহার সামরিক বেসামরিক উভয় শিল্পে ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আর বিশ্বের ৮০ শতাংশ বিরল ধাতবের সরবরাহকারী দেশ হলো চীন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফাস্ট’ স্লোগান দিয়ে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদেরকে অভিবাসী আমেরিকানদের বিরুদ্ধে যেভাবে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন সেভাবে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধকে দেশে বা দেশের বাইরে কোথাও কাজে লাগাতে পারেননি। দেশে কাজে লাগাতে পারেননি কম আয়ের আমেরিকানরা সস্তা পণ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা এটাকে সমর্থন করেনি আর অতিধনী কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগ ও পণ্যবাজার হারিয়েছে চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে। অন্য দিকে এশিয়ার মার্কিন মিত্র দেশগুলো ‘আমেরিকাই আগে’ নীতির মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। টিপিপি বাতিল করার সিদ্ধান্ত ছিল তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

ট্রাম্পের হঠকারিতার মূল্য গুনবেন বাইডেন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর চুক্তির ধারাবাহিকতায় জাপান বড় কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি না করে আমেরিকান প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তার আশ্রয়ে থেকেছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই বলেন যে নিরাপত্তা ছায়ার জন্য মিত্র দেশগুলোকে আমেরিকানদের মূল্য শোধ করতে হবে। এই অবস্থায় জাপান ভেতরে ভেতরে চীনের সাথে বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার ব্যাপারে এক ধরনের সমঝোতায় চলে গেছে। অস্ট্রেলিয়াও ট্রাম্পের চাপে পড়ে যতই ‘কোয়াড’ জোটভুক্ত হোক না কেন আমেরিকার কথায় চলতে গিয়ে অর্থনীতিকে চীনা বয়কটের বিপদে ফেলতে চায়নি। আর চীনের সাথে দক্ষিণ চীনসাগর নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরোধের মধ্যে থাকা ভিয়েতনামও চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বাণিজ্যযুদ্ধে নিজের বিপদ দেখতে পেয়েছে। মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইন থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোও বাস্তবতার বাইরে যেতে পারেনি। তাদের সামনে করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক বৈরিতাকে সামাল দিতে চীনা নগদ অর্থ বিনিয়োগের মূল্য অনেক বেশি মনে হয়েছে।

টিপিপি থেকে সরে আসার বিপ্লবী বা হঠকারী ঘোষণা দেয়ার সময় বারাক ওবামা নিজেও এর পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমেরিকান থিংকট্যাংকগুলোর বক্তব্যকে ডেমোক্র্যাট ভাবনার প্রতিধ্বনি হিসেবে চিহ্নিত করে ট্রাম্প প্রশাসন উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ট্যাম্পের বিদায়ের সময় ফুরিয়ে আসার আগেই সেই দৃশ্যপটটিই সামনে চলে এলো যার আশঙ্কা ওবামা-বাইডেনরা করেছিলেন।

জো বাইডেনকে ঠাণ্ডা মাথার পরিণত বয়স ও চিন্তার মানুষ হিসেবে সবাই জানেন। তিনি এশিয়ান মিত্রদের আস্থা ফেরাতে কতটা কী করতে পারবেন বলা মুশকিল। আর বাণিজ্যবলয় তৈরির মতো উদ্যোগ রাতারাতি পরিণতি পায় না। বাইডেন বিকল্প কোনো কিছু নিয়ে হয়তো আসবেন। অথবা টিপিপিতে যোগ দিয়ে এর আগের অবয়বকে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু সময়টাতো নদীর চলমান পানির মতো। একবার নদীর স্রোত লোনা দরিয়ার সাথে মিশে গেলে সেটিকে আর ফেরানো যায় না। তবুও দেখতে হবে দায়িত্ব নেয়ার পর জোশেফ বাইডেন কী করেন। তবে চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যুদ্ধে তিনি যে মাত্রাতেই হোক না কেন ক্ষান্ত যে দেবেন তা বুঝা যাচ্ছে। নতুন ১৫ জাতির বাণিজ্যচুক্তির পর সেটি সম্ভবও হবে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com