আ. লীগ-বিএনপি নয়, হেফাজতের লড়াই আস্তিক-নাস্তিকে: বাবুনগরী
হেফাজতে ইসলামের নবনির্বাচিত আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, রাজনীতি করা হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। হেফাজতে ইসলামের মূল লক্ষ্য ইসলামের আদর্শ ও নবী-রাসূলের মর্যাদা রক্ষায় করা।
তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দেয়ার সময় এখনই। আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই আমরা চাই না। কারণ আওয়ামী লীগ-বিএনপি একই পথের পথিক। রাজনীতি ভিন্ন হলেও এদের উদ্দেশ্য এক। ঈদের জামাত, জুমার নামাজ, বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে এরা পাশাপাশি থাকে। হেফাজতের লড়াই আস্তিক-নাস্তিকের মধ্যে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সোমবার (১৬ নভেম্বর) জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। কক্সবাজারের পুরোনো দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রামু চাকমারকুল আল-জামিয়া আল ইসলামীয়া দারুল উলূম মাদরাসার ইছ্লাহে মাহফিল ও অভিভাবক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখেন।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম দেশবিরোধী নয়, সরকারবিরোধীও নয়। বর্তমান সরকার ১০০ বছর বা ৫০০ বছর দেশ শাসন করলেও হেফাজতের আপত্তি নেই। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে পবিত্র ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ইজ্জতের ওপর কোনো আঘাত এলে দেশ অচল করে দেয়া হবে।’
তিনি সরকার এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, যা খুশি করেন, কিন্তু ইসলামকে মাইনাস করে নয়। কারণ বাংলার মুসলমানরা এমন জাতি, যে জাতি রক্তে সাগর ভাসায়।
হেফাজতের এই শীর্ষনেতা বয়ানে আরও বলেন, ‘একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য মুসলমানদের জীবন উৎসর্গ করতে হবে। মানুষের বড় নেয়ামত, সর্বোৎকৃষ্ট সংবিধান পবিত্র কোরআন চর্চা বেশি করে করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, পবিত্র কোরআন পাঠ এবং আল্লাহর অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমেই দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি লাভ সম্ভব।’
কক্সবাজার জেলা কওমি মাদরাসার ঐক্য পরিষদের সভাপতি, ধাওনখালী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ মুসলিমের সভাপতিত্বে মাহফিলে বিশেষ মেহমান হিসেবে বয়ান করেন ঢাকা মারকাযুল ফিক্য়িল ইসলামী বসুন্ধরার মুহ্তামিম মুফতি আরশাদ রহমানী, আল্লামা জুনাইদ আল হাবীব।
রামু জামেয়াতুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক কাজী এরশাদ উল্লাহর সঞ্চালনায় বিকেল ৩টা থেকে পশ্চিম চাকমারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিশাল এ ইছ্লাহে মাহফিলে কক্সবাজার জেলা কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদের মহাসচিব, রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদরাসার মুহ্তামিম মোহছেন শরীফ, জোয়ারিয়ানালা এমদাদুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস হাফেজ আবদুল হক, চাকমারকুল আল-জামিয়া আল ইসলামীয়া মাদরাসার নির্বাহী মুহ্তামিম সিরাজুল ইসলাম, ইনানী মাদরাসার পরিচালক মো. ইদ্রিস, লেদা ইবনে আব্বাস মাদরাসার পরিচালক ক্বারী মোহাম্মদ শাকের, চকরিয়া চিরিঙ্গা মাদরাসার পরিচালক আনোয়ারুল আলম, বোয়ালখালী মাদরাসার পরিচালক নুরুল হাকিম, রামু মোজাহেরুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মোহাম্মদ হারুন, রামু জামেয়াতুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ শামসুল হক, জোয়ারিয়ানালা মাদরাসার মুহাদ্দিস শামসুল হক, ধলিরছড়া মাছুয়াখালী মাদরাসার নির্বাহী মুহতামিম শাহেদ নুর, চাকমারকুল মাদরাসার মুহতামিম মুফতি কামাল হোসাইন, পোকখালী এমদাদুল উলুম মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম আবু সাঈদ, মশরাফিয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক নুরুল কবির হিলালী, চাকমারকুল মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি ফিরোজ আহমদ প্রমুখ দেশবরেণ্য আলেমেদ্বীন বয়ান করেন।
দুপুর ২টার আগে চাকমারকুল আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া মাদরাসার অভিভাবক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পশ্চিম চাকমারকুল ইসলামী সম্মেলন পরিষদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ইছ্লাহে মাহফিলে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ জনতা শরিক হন। রাত ১২টায় শেষ হওয়া মাহফিল দেশ ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
এদিকে, হেফাজতের আমির নির্বাচিত হওয়ায় আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন চাকমারকুল আল-জামিয়া আল ইসলামীয়া মাদরাসাসহ আরও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।