করোনা-পরবর্তী বিশ্বের জন্য নতুন ধরনের ব্যাংক প্রয়োজন
করোনা পরবর্তী সমাজব্যবস্থায় শ্রমিকদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে নতুন ধরনের ব্যাংক গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবর- ডিডব্লিউ।
তার মতে, এই মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লাখো-কোটি শ্রমিককে সহায়তার জন্য এমন ব্যাংক তৈরি করা দরকার। করোনা পরবর্তী বিশ্বের জন্য অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ় চিন্তাভাবনা এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. ইউনূস।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের বার্ষিক আয়োজন ‘ট্রাস্ট কনফারেন্সে’ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘এই সঙ্কট আমাদের জন্য সুন্দর, সবুজ ভবিষ্যতের পথ তৈরি করেছে।’
করোনা পরবর্তী সমাজে তিনটি ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি:
এক. জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা
দুই. সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন এবং
তিন. যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছে তাই বিষয়টিকে মাথায় রেখে গণ-বেকারত্ব প্রতিরোধ করা।
ইউনূস বলেন, ‘করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার দুর্বলতা।’
তবে সবচেয়ে সঙ্কটের মুহূর্তে সবচেয়ে সুন্দর ভাবনাগুলো বেরিয়ে আসে বলে মনে করেন তিনি।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবীদ বলেন, ‘আমাদের উচিত পুরনো চিন্তাগুলোকে দূরে ঠেলে সাহসের সঙ্গে নতুন ভাবনাগুলো নিয়ে কাজ করা, যেগুলো আগে কখনো করা হয়নি।’
অনলাইন এই সম্মেলনে ড. ইউনূস করোনা পরবর্তী সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধানের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ অর্থ বানানোর রোবট নয়, মানুষকে বাণিজ্যখাতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে, কেবল লাভের কথা ভাবলে হবে না। বাংলাদেশে ৭০ ভাগ শ্রমিকের কোনো সঞ্চয় নেই, করোনার কারণে এই শ্রমিকরা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে।’
ধনী দেশগুলোর করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিক্রির সমালোচনা করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বের একজন ব্যক্তি যদি অরক্ষিত থাকে, তাহলে সবার সুরক্ষিত থাকা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময় এসেছে বিকেন্দ্রীকরণের। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে কেনো গ্রামগুলোতে কল সেন্টার স্থাপন করা সম্ভব নয়?’
অর্থাৎ শহরমুখী অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিকে বিকেন্দ্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
করোনার আগের বিশ্বকে বৈশ্বিক উষ্ণতা, ধনী-গরীব বৈষ্যমের বিশ্ব বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে ফিরে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। কেননা সেটা এমন একটা ট্রেন যা আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো।’
তাই তিনি ‘ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস’ অর্থাৎ- কার্বন নির্গমনের হার শূন্যে নিয়ে আসা, সম্পদের বৈষম্য শূন্যে নামিয়ে আনা এবং বেকারত্বের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন। বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের এখনই সময় বলে মনে করেন তিনি।