বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি

0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে আসবেন, নাকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তার আগে একটু ফিরে তাকানো যাক যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছর কেমন ছিল, সেদিকে।

ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মিত্রপক্ষ রয়েছে, তেমনি রয়েছে কট্টর সমালোচকও। নিজের চার বছরের মেয়াদে এসব দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক কেমন ছিল, সেদিকে নজর দেয়া যাক—

যুক্তরাজ্য: সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক যে সব সময় মধুর ছিল, তা নয়। অবশ্য নিজের প্রেসিডেন্সির আমলে মের সঙ্গেই প্রথম চুক্তির উদ্যোগ নেন ট্রাম্প। কিন্তু ২০১৮ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, মে যদি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হন, তবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না-ও হতে পারে। অবশ্য ওই সফরেই এক সংবাদ সম্মেলনে সুর পাল্টে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও চুক্তি হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, তিনি ব্রেক্সিটকে ‘অভাবনীয় সম্ভাবনা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

গত বছর বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতায় আসার পর এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘অসাধারণ জয়ের জন্য বরিস জনসনকে অভিনন্দন। যুক্তরাষ্ট্র এখন মুক্তভাবে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ের জন্য নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে।’

রাশিয়া: ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক যতটা অতশী কাচের নিচে রাখা হয়েছে, তা সম্ভবত অন্য কারো ক্ষেত্রে হয়নি। সমালোচনা উঠেছিল, পুতিন ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ট্রাম্পের জয়ে পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। তবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে হেলসিঙ্কিতে এক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, এ ধরনের কিছুই হয়নি।

ওয়াশিংটন বরাবরই মস্কোর বিষয়ে কঠোর থাকলেও ট্রাম্প বেশ কয়েকবার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমনকি ২০১৮ সালের মার্চে পুতিন পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য মুখে ট্রাম্প যতই সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলুন না কেন, তার প্রশাসন কিন্তু দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে পিছপা হয়নি।

চীন: দেশটির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক যেন সাপে-নেউলে। সেই ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই চীনের প্রতি বিষোদ্গার জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে আসার পরও তার সেই অবস্থান বদলায়নি। বরাবরই তিনি চীনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তো বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে। বিবদমান দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ, তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তত্পরতা, সর্বশেষ নভেল করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে ট্রাম্প প্রশাসনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো—সাম্প্রতিক সময়ে এগুলো ছিল সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর অন্যতম সংবাদ শিরোনাম।

গত মে মাসে টুইটারে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘চীনের সবচেয়ে বাজে উপহার নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি একেবারেই ভালো নয়।’

উত্তর কোরিয়া: রাশিয়ার সঙ্গে যেমন, উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানও অনেকটা একই ছিল। এ দেশটির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন, তো পরক্ষণেই সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০১৮ সালের জুনে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক করেন। অথচ এর কয়েক মাস আগেই সিউলের বিষয়ে ওয়াশিংটনের মনোভাব ছিল যুদ্ধংদেহী। সে সময় বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। তার প্রতিক্রিয়ায় পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছিলেন কিম। এর জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার কাছেও একটি নিউক্লিয়ার বাটন রয়েছে, যা কিমের চেয়ে অনেক বড় ও শক্তিশালী।

জার্মানি: ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান স্লোগান ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। যখন তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করলেন, তার এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতির কারণে তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল হবেন মুক্তবিশ্বের নতুন নেতা। হোয়াইট হাউজে আসার পর ট্রাম্পও মেরকেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। প্রথম কয়েক মাস তিনি মেরকেলকে ঘন ঘন ফোনকলও করতেন। অথচ এই ট্রাম্পই ২০১৫ সালে টুইটারে লিখেছিলেন, মেরকেল জার্মানিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

ইরান: ক্ষমতায় আসার পর একবারও ইরানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেননি ট্রাম্প। তবে চার বছরে ইরানের বিষয়ে অনেক কথাই বলতে শোনা গেছে তাকে। ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রথম পদক্ষেপ ছিল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জের ধরে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। তেহরান যতই দাবি করুক না কেন, তারা জাতিসংঘের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেনি, ট্রাম্প প্রশাসন তা মানতে নারাজ।

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরো অবনতি হয়, যখন ইরাকে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হন।

জাপান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জাপানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় ছিল। বন্ধুপ্রতিম এ দুই দেশের শীর্ষ নেতা বেশ কয়েকবার একে অন্যের দেশ সফর করেছেন ও বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ট্রাম্প সবসময়ই শিনজো আবেকে বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইরাক: ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে ছিল ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিতাড়ন। তবে তিনি দেশটিতে আর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি। চলতি বছরের আগস্টে টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি মনে করি না ইরাক যুদ্ধ বিচক্ষণ কোনো সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা দ্রুত এখান থেকে বেরিয়ে আসব।’ 

বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com