হেফাজতে ইসলামের জন্মই হয়েছিল নবীর শানে অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবীতে: তুহিন মালিক
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে অবমাননার প্রতিবাদে আগামী ২রা নভেম্বর সোমবার বায়তুল মোকাররম থেকে ফ্রান্স দুতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের জন্মই হয়েছিল নবীর শানে অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবীতে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিদ্বেষের মাত্রা বহুগুন ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে এখন বাতিলের প্রধানতম অস্ত্রই হচ্ছে ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলামকে সন্ত্রাসী হিসাবে দেখানোর নির্লজ্জ প্রপাগান্ডা। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়ার নির্লজ্জতম বিস্তার।
ফ্রান্সের পাশে দাঁড়িয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। আর আমাদের রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতিতে এই মূহুর্তে ভারতের আগ্রাসন যে কতটা প্রসারিত ও সুগভীর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই মূহুর্তে আমাদের চরম ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা ও সর্তকতা অবলম্বনের প্রয়োজনীতা অনস্বীকার্য। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে অবমাননার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জোড়ালোভাবে জানানোই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের এই ক্ষোভ ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অবমাননার বিরুদ্ধে। ফ্রান্সের ইসলামবিদ্বেষী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এটা ফ্রান্সের জনগণ কিংবা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রপ্রধানের দোষে কোন ধর্মকেই দায়ী করা যায় না। তাহলে আমাদের সাথে তাদের পার্থক্যটা কোথায়?
আমাদের প্রতিবাদ, সমাবেশ, ঘেরাও বা বিক্ষোভ মিছিল হওয়া উচিত সম্পূর্ন সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ। ইসলাম বিদ্বেষীরা চাইবে বিশৃঙ্খলা হোক, হানাহানি হোক। আর এই সুযোগে তারা গর্ত থেকে বের হয়ে ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম বলে মিডিয়া ফাটিয়ে দিবে। বিশ্বকে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলবে। দেখ, বাংলাদেশ জঙ্গি দিয়ে ভড়ে গেছে। আর আমরা যেন তাদের সেই পাতা ফাঁদে পা না দেই।
আমাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সবই হোক ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে অবমাননার প্রতিবাদে। এটা আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা সরকার পতন কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোন ইস্যু হতে পারে না। যেহেতু সরকার এই ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এখনও কোনপ্রকার বাঁধা দেয়নি। তাই কোনভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে বা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার উসকানি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। ব্যানার-পোষ্টারে কোনভাবেই আপত্তিকর কিছু যেন না থাকে। তাহলে সেটাই সর্বাগ্রে হলুদ মিডিয়া নেতিবাচকভাবে তুলে ধরবে। ঘেরাও মিছিলে পুলিশ বাঁধা দিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করে আগে না বাড়াটাই উত্তম। কর্মসূচিতে কোন নাশকতাকারী ঢুকেছে কিনা, তার উপর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেহেতু এটা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে নির্লজ্জতম আঘাতের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। তাই এটা হতে হবে দেশের সরকারী ও বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের সব মানুষেরই প্রতিবাদ। তাই এই কর্মসূচিতে সকলেরই শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হোক। সকলের সহযোগিতা নেয়া হোক। সকল দল এবং বিশেষ করে সকল ইসলামী দল নিজেদের মতভিন্নতা ভুলে নবীর সম্মানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি সুশৃঙ্খল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি সফল করি। বিশ্ব দেখুক, আমাদের সর্বকালের সর্ববৃহৎ ঐক্যবদ্ধ এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।
তুহিন মালিক
সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাষ্ট্র চিন্তক, লেখক।