‘র’ কেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী ওলির সরকারকে উৎখাত করতে চায়?

0

ভারতের প্রধান বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’-এর প্রধানের নেপাল সফরের পরপরই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র পূর্ণ গতিতে শুরু হয়েছে। সৌজন্যতার কারণে তার সামনে থাকা নেপালের নতুন মানচিত্র প্রদর্শন করছেন না। অবশ্য, তিনি র-প্রধানের কথায় কর্ণপাত করেননি।

র-প্রধান ওলিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ভারত থেকে আর্থিক সহায়তা না এলে নেপালের অর্থনীতি টিকে থাকতে পারবে না। তিনি তাকে বলেছেন যে এক লাখ ২৭ হাজার পেনশনভোগীর (৯০ হাজার প্রতিরক্ষা ও ৭৭ হাজার আধা সামরিক, বাকিরা বেসামরিক) অর্থের পরিমাণ ভারতীয় ৪,৬০০ কোটি রুপি (নেপালি রুপিতে ৩৬০১.৮১ কোটি)।এই পেনশনই নেপালের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেটের চেয়ে বেশি।

এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেপাল সফরেও কোনো কাজ হয়নি। 

নেপালি ভূখণ্ড ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পর নেপালও ওই এলাকাগুলোকে নিজের দাবি করে মানচিত্র প্রকাশ করে। নেপালি এলাকাগুলো হচ্ছে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পয়াধুরা।

ষড়যন্ত্র

ওলির সরকার পতনের জন্য নেপালে ভারতীয় দূতাবাস দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ভারত ওলির স্থানে ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা প্রচন্ডকে তৈরী করছে। প্রচন্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি। প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন ওলি বিরোধীরা কৌশল নির্ধারণে একটি হোটেলে সভা করেছে। পরে তারা ওলিকে পদত্যাগ কিংবা কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের মুখোমুখি হওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

ওলি দলের জনপ্রিয় নেতা মদন ভান্ডারির ৬৯তম বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে ভারতের ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন। ওলি তার সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তিনি বলেছেন, নেপালে ভারতীয় দূতাবাস একই ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে নেপালি মানচিত্র সংশোধন করার পর থেকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তাকে অপসারণ করার জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কেউ চিন্তা করেনি যে একটি মানচিত্র ছাপানোর কারণে একজন প্রধানমন্ত্রীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।

বিরোধীদের যেভাবে উস্কিয়ে দিচ্ছে ভারত

ওলি ভারতবিরোধী অ্যাজেন্ডা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধীদল অভিযোগ করেছে, র-প্রধানের সামনে ওলি খুব বেশি আজ্ঞানুবর্তী ছিলেন।

ভারতের চলমান সম্প্রসারণ

তিনটি নতুন ভূখণ্ড দখল করা ছাড়াও ভারত ইতোমধ্যে উত্তর প্রদেশের কাছে সুস্তা, ত্রিবেনি সুস্তা, লুম্বিনি জোনের ১৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।

শক্তি প্রয়োগ করে ভারতকে রুখে দেয়ার মতো অবস্থায় নেই নেপাল। তবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার জন্য দেশটি তার নতুন মানচিত্রের ৪ হাজার কপি প্রকাশ করে ভারত, জাতিসঙ্ঘ ও গুগলের কাছে বিতরণ করেছে। তাছাড়া আরো ২৫ হাজার কপি নেপালজুড়ে বিতরণ করা হয়েছে।

হুমকিগ্রস্ত চুক্তি

ভারত ও অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের অব্যাহত চাপের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি ভোটারদের আশ্বস্ত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে বলেছেন যে তিনি এখনো ভারতবিরোধী। তিনি ভারতের সাথে থাকা দুটি চুক্তি বাতিল কিংবা সংশোধন করতে পারেন। এর একটি হলো ১৯৫০ সালের শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি। দ্বিতীয়টি হলো ভারত ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে গোর্খা সৈন্যদের নিয়োগ করা নিয়ে চুক্তি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খা

ভারতে বর্তমানে সাতটি গোর্খা রেজিমেন্ট আছে। প্রতিটি রেজিমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন আছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩৯টি গোর্খা পদাতিক ব্যাটালিয়ন আছে। এগুলেতে দুই-তৃতীয়াংশ নেপালি সৈন্য, এক তৃতীয়াংশ ভারতীয়।

ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে গোর্খারা বেশ ভালোভাবে লড়াই করেছে। ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯১ সালের ইন্দো-পাক ও কার্গিল যুদ্ধে তারা লড়াই করেছে, ১৯৬২ সালের চীন-নেপাল যুদ্ধে এবং শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা মিশনেও তারা ছিল। তাদের যুদ্ধের মূলমন্ত্র হলো জয় মহা কালী, আয়ো গোর্খালি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিন প্রধান (এসএইচইজে মানেকশ, দিলব্রি সিং ও বিপিন রাওয়াত) গোর্খা রাইফেলসে কাজ করেছেন।

১৯৬২ সালে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মেজর ধ্যান সিং যুদ্ধ করতে করতে মারা যান। তিনি তার নিজ দেশে ফিরে যেতে চীনাদের অনুরোধ শোনেননি। চীনারা তাকে বলেছিল, তারা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, নেপালের বিরুদ্ধে নয়। গোর্খা ব্রিগেডে প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় ও গোর্খা সৈন্য নিয়ে গঠিত। নেপালে প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পেনশনভোগী রয়েছে।

উপসংহার

ভারতের গোপন কুট যুদ্ধ (অনৈতিক যুদ্ধ) ও মায়া যুদ্ধ (বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যুদ্ধ) কৌশল আঞ্চলিক ভীতি প্রদর্শন করার ভারতের উচ্চাভিলাষকে প্রতিফলিত করছে। গোর্খাদের মতো শিখরাও অস্বস্তিতে রয়েছে, গোল্ডেন টেম্পলে বিরোধী-স্লোগান শোনার পর থেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩২ হাজার অফিসারের মধ্যে ৫ ভাগ শিখ। গোর্খা ও শিখরা চলে গেলে ভারতীয় সামরিক সক্ষমতা হ্রাস পাবে।

ভারতের চাওয়া মতো পরিচালিত করতে ভারত তার দুর্বল প্রতিবেশীদের ওপর দমনমূলক কূটনীতি চালাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে নেপালে ভারতের ট্রানজিট বন্ধ করার কথা বলা যায়। অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে নেপালকে। নেপালে অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয়দেরকে নেপালি নাগরিকত্ব মঞ্জুর করতে বাধ্য করছে নেপালকে।

নেপালি নাগরিকদের অধিকার রয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বা বেসামরিক সার্ভিসে নিয়োগের জন্য আবেদন করার। কিন্তু তবুও তারা ভারতকে ঘৃণা করে এবং মিত্র হিসেবে চীনের সাথে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com