একের পর এক ধর্ষণ আর প্রতারণার হোতা কামাল

0

বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামী মারা যান এক কলেজ প্রভাষক শিক্ষিকার। দুই সন্তান নিয়ে দিন ভালো কাটলেও তার  একাকিত্বের সুযোগ নেয় কামাল। গত জুনে ফোনে মো. কামাল হোসেনের (৪৮) সঙ্গে তার পরিচয় হয় ওই শিক্ষিকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা পরিচয়ে কামাল কৌশলে শিক্ষিকার সঙ্গে সখ্য গড়ে। স্বামী নেই জেনে নিজেরও স্ত্রী মারা গেছে জানায় কামাল। অথচ তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়ে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষিকার সঙ্গে  কামালের আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এভাবে কিছুদিন চলার একপর্যায়ে ভাগিনার চাকরি ও বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছ থেকে কামাল ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারণা বুঝতে পেরে শিক্ষিকা টাকা ফেরত এবং বিয়ের জন্য চাপ দিলে কামাল তাদের মধ্যকার অন্তরঙ্গতার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষিকা রাজধানীর রূপনগর থানায় মামলা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ গত ২৭ সেপ্টেম্বর রূপনগর থেকে কামালকে গ্রেপ্তার করে। এক দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডিবির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কামালের সিরিয়াল ধর্ষণের তথ্য। কামালের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার যাত্রাবাড়ীতে।

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর কামালের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সে সাত থেকে আট বছর ধরে কৌশলে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে আসছে। আত্মীয়-স্বজনরাও তার লালসা থেকে রক্ষা পায়নি। অপরিচিত নারীদের কাছে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে নানা অপকর্ম করত কামাল। সম্পর্কের একপর্যায়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিত।’

এ বিষয়ে ডিবির ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম ইনচার্জ অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ বলেন, ‘কামাল তাদের টার্গেট করত, যারা একাকিত্বে ভোগে। তাদের পরিচিতদের থেকে ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলত। নিজেকে কোরআনে হাফেজ পরিচয় দিয়ে কৌশলে সখ্য গড়ে সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতো। কামালের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কামাল তার অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে আদালতে। কামালের প্রতারণার শিকার অন্য নারীদের থানায় অভিযোগ করতে বলা হচ্ছে।’

রাজধানীর রূপনগর থানায় কামালের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। এরই মধ্যে গত জুনে কামাল আমার ফোনে কল করে বলে, আমার ভাশুরের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে সে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ফোন করত। কথা বলার একপর্যায়ে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। কামালের গ্রামের বাড়িতে এতিমখানা ও মাদ্রাসা আছে জানিয়ে সেখানে দান করতে বলত। এভাবে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিত সে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পর্ক চলাকালে কামাল আমার ভাগিনার চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ ২০ হাজার এবং আমার ছোট বোনের স্বামীর জামিনের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়। প্রতারণা জানতে পেরে বিয়ের জন্য চাপ ও টাকা ফেরত চাইলে কামাল অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। তার এই প্রতারণাচক্রে আরও অনেকে আছে।’ তিনি বলেন, আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। আমি চাই কামালদের মতো প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে আর কেউ এমন করার সাহস না পায়।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com