আল্লাহ যে কারণে দোয়াকারীকে ভালোবাসেন
আল্লাহ তাআলা প্রার্থণাকারীকে ভালোবাসেন। যে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না বা প্রার্থণা করে না, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসেন না। কিন্তু কেন আল্লাহ তাআলা দোয়া বা প্রার্থণাকারীকে ভালোবাসেন?
আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ইবাদত। বিশ্বনবির ঘোষণায় দোয়াই ইবাদতের মূল। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক এ দোয়ার মাধ্যমেই তৈরি হয়। বান্দা যত গোনাহগারই হোক না কেন? বান্দার চাহিদা যত বেশিই হোক না কেন? বান্দা যত অবাধ্যই হোক না কেন?
বান্দার এসব চাহিদার বিপরীতে মহান আল্লাহ হলেন আর-রাহমান এবং আর-রাহিম; দয়ালু ও মেহেরবান। তিনি আস-সামি ও আল-কাদির তথা তিনি বান্দার সব প্রার্থণা শোনেন এবং তা বাস্তবায়নে ক্ষমতাবান। তিনি আল-আহাদ, ওয়াস-সামাদ তথা তিনি এমন এক একক সত্ত্বা, যিনি কারো কাছেই মুখাপেক্ষী নন; বরং সবাই শুধু তারই মুখাপেক্ষী।
মানুষ আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর গোলাম বা দাস। আল্লাহর কাছে সব সময় সাহায্য লাভে মুখাপেক্ষী। তিনি দয়া বা সাহায্য না করলে বান্দা একেবারেই সহায়। তিনি ছাড়া যে বান্দার আর কোনো সহায় হওয়ার মতো কেউ নেই।
তাই মানুষ দুনিয়া ও পরকালের সব বিষয়ে আল্লাহর ওপর ভরসাকারী। বান্দা সব বিষয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার কারণে কিংবা কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে দোয়া বা প্রার্থণা করার কারণেই আল্লাহ তাআলা দোয়াকারীকে ভালোবাসেন।
অনেককে বলতে শোনা যায়-
আল্লাহ তাআলার কাছে খুব বেশি চাওয়া যাবে না। চাওয়া বা প্রার্থণা হতে হবে কম। অল্প চাওয়াই যাতে আল্লাহ তাআলা পূরণ করেন। এ ধারণাটি একেবারেই ঠিক নয়। বরং হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া হলো ইবাদতের মূল।’ (তিরমিজি)
তিনি বেশি বেশি দোয়া করতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে অধিক ভালবাসেন, যে তাঁর কাছে অধিক দোয়া করে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তোমাদের জুতার ফিতা ছিড়ে গেলেও তোমরা এর জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া কর।‘ (তিরমিজি) অর্থাৎ বিষয়টি যত ছোটই হোক না কেন, সব কিছু নিয়েই আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে।
সুতরাং মুমিন মুসলমান যখন আল্লাহর কাছে ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, প্রার্থণা করবে তখনই মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে সামান্য বিষয় চাওয়ার জন্যই বেশি ভালোবাসবেন।
বান্দার কোনো দোয়া বা চাহিদাই আল্লাহর কাছে ব্যর্থ হয় না। বরং তিনি সব দোয়াই কবুল করেন। বান্দার দোয়া কবুল না হলেও বান্দার লাভ। কেননা দোয়া কবুল না হলেও শুধু আল্লাহর কাছে আবদার করার কারণেই বান্দার আমলনামায় সাওয়াব যোগ হয়। হাদিসে এসেছে-
দোয়া কবুল না হলেও সাওয়াব হয় এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা এখন থেকে বেশি বেশি দোয়া করব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ (দিতে পারেন) তার চেয়েও বেশি।‘ (তিরমিজি)
মানুষের চাহিদার পরিমাপ
মানুষ কম-বেশি যত দোয়া বা প্রার্থণাই করুক না কেন, মানুষের চাহিদার তুলনায় আল্লাহর ক্ষমতা অনেক বেশি। আল্লাহর ক্ষমতার কাছে যার তুলনা একেবারেই নগন্য। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সমগ্র মানবজাতি এবং জ্বীনজাতি, মুসলমান ও কাফেররা যদি একত্রে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শুরু করে আর তাদের যত চাহিদা আছে, সব একসঙ্গে কামনা করে, তা-ও আল্লাহ তাআলার কাছে তা সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির সমতুল্য।‘
মনে রাখতে হবে,
মহান আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। মানুষের চাহিদা সীমিত। আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার কোনো সীমারেখা নেই। তাই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া বা ক্ষমা প্রার্থণা করা। তাকে স্মরণ করা। এমনটি যেন না হয় যে, শুধু বিপদ-আপদে পড়লেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা নিয়োজিত হই।
মানুষ সাধারণত বিপদে পড়লেই আল্লাহর সাহায্য চায়। এমনটি কোনো মুমিনের কাম্য হতে পারে না। কেননা কুরআনুল কারিমের তাদের সম্পর্কে, তাদের প্রার্থণা সম্পর্কিত একটি নমুনা আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন-
وَإِذَا مَسَّ الإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
‘আর যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, তখন শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই; আর সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় যেন কখনোই কোনো কষ্টের সম্মুখীন হয়ে তারা আমাকে কখনো আমাকে ডাকেনি। এমনিভাবে সীমালংঘনকারীদের কার্যকলাপ তাদের কাছে শোভনীয় মনে হয়।‘ (সুরা ইউনুছ : আয়াত ১২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা। বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থণা করা। সেজদায় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। কাঙ্ক্ষিত জিনিস চাওয়া। আর তাতেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন। আর বান্দার কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ করেন।
দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহর ভালোবাসা লাভে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। যা তিনি নিজেও অধিকাংশ সময় বেশি বেশি পড়তেন। যা ওঠে এসেছে কুরআনুল কারিম। তাহলো-
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ্! আমাকে পৃথিবীতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালের কল্যাণ দান করু। আর দোজখের শাস্তি থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন।’ (বুখারি মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ভালোবাসা লাভের তাওফিক দান করুন। ভালোবাসা লাভের অন্যতম মাধ্যম বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।