পূজা মণ্ডপের বরাদ্দ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

0

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পূজা মণ্ডপের সরকারি বরাদ্দ থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে। ওই উপজেলার ৭০টি দুর্গা পূজা মণ্ডপের সরকারি বরাদ্দ থেকে মন্দির প্রতি ১ হাজার টাকা করে মোট ৭০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন পূজা উদযাপন পরিষদের হাতীবান্ধা উপজেলা কমিটি’র সভাপতি বাবু কেশব চন্দ্র সিংহ। তার দাবি এ টাকা কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। এ নিয়ে মন্দির কমিটি’র সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাধারণ ভক্ত ও সদস্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু অশ্বিনী কুমার বসুনিয়া বলেন, যদি এ টাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে তাহলে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা কাজটি মোটেও ঠিক করে নাই। 

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, প্রতি পূজায় সরকারি বরাদ্দ মন্দিরগুলো পেয়ে থাকেন। করোনাকালে সকলের আর্থিক সংকটের কারণে অনেক মন্দির ঠিকভাবে আগের মত পূজার আয়োজন করতে পারছিলো না। এমন সময় পূজা উৎসবের জন্য সরকারি বরাদ্দ মন্দির কমিটি’র খুব উপকারে এসেছে। কিন্তু সেই টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে কেন্দ্রীয় মন্দিরের নামে কর্তনের বিষয়টি দুঃখজনক। পূজার বরাদ্দ পূজায় ব্যয় করে মানসম্পন্ন মন্ডপ তৈরি করবে ভক্তরা। সেই টাকায় কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়নের সিদ্ধান্তে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

নওদাবাস দোলাপাড়া রাধেশ্যাম হরিমন্দির কমিটি’র সভাপতি মধু সরকার ও বড়খাতা দুর্গামন্দির কমিটি’র সভাপতি যতীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ পেয়েছি। ওই চাল বাজারে ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকা থেকে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ১ হাজার টাকা করে কর্তন করেছেন। বলা হয়েছে, ওই টাকা কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। আমাদের টাকা দিলো পূজা উদযাপনের জন্য। সেই টাকা কেন্দ্রীয় মন্দিরও পেয়েছে। কিন্তু আমাদের পূজার টাকায় কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়ন হবে বিষয়টি যে কেমন ?

গাওচুলকা দূর্গা মন্দিরের সভাপতি গনেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমাদের মন্দিরের নামে বরাদ্দ থেকে তারা চাঁদা নিবেন কি কারণে ? এ নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন পূজা উদযাপন কমিটি’র নেতারা আমার উপর মন খারাপ। তাই আমিও ১ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি। চাউল উত্তোলন, বিক্রি ও ১ হাজার করে টাকা চাঁদা উঠানোসহ সব কিছু করেছেন পূজা উদযাপন কমিটি’র সভাপতি বাবু কেশব চন্দ্র সিংহ।

পশ্চিম ধওলাই রাধা গোবিন্দ সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সভাপতি মনোরঞ্জন রায় বলেন, বরাদ্দ পেয়েছি পূজা উদযাপনের জন্য। সম্পূর্ণ টাকা পূজা উৎসবে ব্যয় করার নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু সেই টাকা থেকে কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়নের কথা বলে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু কেশব চন্দ্র সিংহসহ কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটি’র লোকজন মন্দির প্রতি ১ হাজার টাকা করে কর্তন করেছে। সবাই দিয়েছে তাই আমিও দিয়েছি। 

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি’র সভাপতি বাবু কেশব চন্দ্র সিংহ মন্দির প্রতি ১ হাজার করে ৭০ হাজার টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্য মন্দিরের পূজা উৎসবের টাকায় কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়ন কতটা ঠিক হয়েছে ? এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই। ফোনে কথা বলার এ পর্যায়ে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে একাধিক বার তার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

হাতীবান্ধা উপজেলা হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু অশ্বিনী কুমার বসুনিয়া বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছেন তা পূজা উৎসবে ব্যয় করতে হবে। এ বরাদ্দ কেন্দ্রীয় মন্দিরও পেয়েছে। করোনাকালীন এ বরাদ্দ পেয়ে আমার খুশি। সেই টাকা থেকে যদি কেন্দ্রীয় মন্দিরের উন্নয়নের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে তাহলে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা কাজটি মোটেও ঠিক করেন নাই।

হাতীবান্ধার ইউএনও সামিউল আমিন বলেন, প্রতিটি মন্দিরের নামে পূজা উৎসবের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই বরাদ্দ কেন্দ্রীয় মন্দিরও পেয়েছে। অন্য মন্দিরের টাকা কেন্দ্রীয় মন্দির নিতে পারে না। বিষয়টি খোঁজ খবর নেওয়া হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com