‘আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে এসআই আকবর’

0

পুলিশ ফাঁড়িতে মার খেয়ে দাবি করা ১০ হাজার টাকা দিয়ে হলেও মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন রায়হান। বাবাকে ফোন করলেন, বাবা টাকা নিয়ে আসতে চাইলেন। কিন্তু সময় দিলেন না এসআই আকবর। বাবা-মা এসে হাসপাতালে পেলেন রায়হানের নিথর দেহ।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন রায়হান। তাকে হারিয়ে দু’মাস বয়সী মেয়ে আলফাকে নিয়ে বাকরুদ্ধ রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তিন্নি (২২)। রায়হানের বড় বোন রুবা আক্তার থাকেন লন্ডনে। ভাইকে শেষ মুহূর্তে একটি পলক না দেখতে পেরে আক্ষেপের শেষ নেই তার। দেশে না এলেও তিনি ভাই হত্যার বিচার চেয়ে লন্ডনে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেনসহ অন্য সহযোগীদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছেন তারা।

রায়হানের মা সালমা বেগম জানান, ‘অনেক কষ্ট করেছি আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে- যা কেউ না দেখলে বুঝতে পারতো না। আজ আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে এসআই আকবর ও তার সহযোগীরা। এমন পরিণতি হবে আমার, জীবনেও ভাবিনি।’

তিনি আরো জানান, ‘২০১৭ সালে দিকে ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। ছোটখাটো চাকরি করলেও আমাদের সংসার ছিল খুবই সুখের। স্ত্রী ও মায়ের প্রতি রায়হানের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। প্রতিমাসে বেতন পাওয়ার পর আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে ছেলে বলতো এগুলো তুমি খরচ করো। সংসার যেহেতু চলতো একমাত্র ছেলের আয়ের ওপর, যার জন্য আমি তার দেয়া টাকা খরচ করতাম খুবই কম। অভাব-অনটনের সংসারে একটু ভালো থাকার আশার পাশাপাশি রায়হানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে আমেরিকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি তার এক চাচার মাধ্যমে। তিনি আমেরিকায় থাকেন। গত জুলাই মাসের দিকে আমেরিকা থেকে সব কাগজপত্র আমাদের কাছে আসে। দেনা করে ছেলের মেডিক্যালসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত সম্পন্ন করি। আমেরিকা অ্যাম্বেসির (দূতাবাসের) ফি জোগাড় করার পর তার অ্যাম্বেসিতে ওঠার (ভিসা পাওয়ার জন্য দাঁড়ানোর) কথা ছিল। কিন্তু এই ফি জোগাড় করতে দেরি হওয়াই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সারাজীবন কষ্ট করে মানুষ করা ছেলেটাকে হারাতে হয়েছে আমার। তাও আবার কোনো কারণ ছাড়াই। নির্দোষ ছেলে পুলিশের কাছে নিরপরাধ বলে কান্নাকাটি করে পায়ে ধরলেও তাকে বাঁচতে দেয়া হয়নি। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয় সেজন্য হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই আমি।’

জানা যায়, রায়হানের বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সৈনিক পদে কমর্রত ছিলেন। নিহত রায়হান যখন তার মায়ের গর্ভে (৭ মাসের) ছিলেন তখন তার বাবা চাকরিরত অবস্থায় বিডিআর ক্যাম্পেই মারা যান। এরপর থেকে শুরু হয় রায়হানদের পরিবারের সংগ্রামের ইতিহাস। অসহায় পরিবারটির প্রতি অনেকটা সময় ধরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন রায়হানের আত্মীয়-স্বজনরা। ২০১৫ সালে সবার সহযোগিতায় রায়হানের বড় বোন রুবা আক্তারের বিয়ে হয় বিশ্বনাথের এক লন্ডন প্রবাসীর সাথে। বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর মা ও ছোট ভাই রায়হানকে রেখে লন্ডনে পাড়ি দেন তিনি। এর দু’ বছর পর রায়হানের বিয়ে হয়।

নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বলেন, ‘আমার জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে। অভাব-অনটন থাকলেও সংসার ছিল খুব সুখের। কিন্তু সেই সুখটা নষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। সেই সাথে আমার মেয়েকে বাবার কাছ থেকেও আজীবনের জন্য বঞ্চিত করা হয়েছে। আমার স্বামী নিরপরাধ একজন মানুষ। তাকে পুলিশ প্রথমে ছিনতাইকারী দাবি করেছে। এরা পুলিশের পোশাক পরে অমানুষের কাজ করেছে। এরা নির্লজ্জ ও বেহায়া। আমি এদের ফাঁসি দাবি করছি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com