মনে হয়, এই দেশ অফ দ্য আওয়ামী লীগ বাই দ্য শেখ হাসিনা এবং ফর দ্য শেখ হাসিনার পরিবার: বিএনপি

0

সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক আচরণের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘মনে হয়, এই দেশ অফ দ্য আওয়ামী লীগ বাই দ্য শেখ হাসিনা এবং ফর দ্য শেখ হাসিনার পরিবার।’

প্রধানমন্ত্রী দেশে পুরোপুরি ‘গুণ্ডামির শাসন’ চালু করেছেন বলে অভিযোগ করে সারা দেশে ধর্ষণ-গণধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন রিজভী। 

তিনি বলেন, ‘দেশে গুণ্ডামির শাসন চলছে বলেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভক্তকুল-অনুসারীরা মনে করে, প্রধানমন্ত্রী তো রাতে নির্বাচন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। তাই দেশে যত সুন্দর মেয়ে আছে সবার প্রতি আমাদের অধিকার আছে। আমরা যখন যাকে খুশি তুলে এনে ধর্ষণ-গণধর্ষণ করবো, আমাদের কিছুই হবে না।’

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ডের বিধান’ রেখে অধ্যাদেশ জারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার মাঝে মাঝে কিছু ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টা করে। এটাও তেমনই লোক দেখানো।’

ধর্ষণের বিরুদ্ধে নতুন আইন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি নারী-শিশু নির্যাতন বিরোধী আইন করেছেন, এটা হচ্ছে লোক দেখানো। এই সরকার মাঝে মাঝে এরকম কিছু কিছু ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টা করে। নারী নির্যাতন বিরোধী যে প্রচলিত আইন আছে সে আইনেই তো ৭টি ধারা আছে মৃত্যুদণ্ডের। আপনি মনে করেছেন আবার নতুন করে মৃত্যুদণ্ডের আইন করে আপনি জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবেন। যে বিদ্যমান আইন ছিল সেই আইনেরই তো এতদিন প্রয়োগ হয়নি। কারণ ইউএনও-ডিসি-এসপিরা আপনাদের কথার বাহিরে একচুলও এদিক-ওদিক নড়ে না, যদি নড়তে পারত তাহলে দেশে আইনের শাসন থাকতো। তাহলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা সারা দেশে নারীদের যে সম্ভ্রমহানি করে চলেছে, এটা করতে পারত না।’

গতকাল মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে ইতিহাস বিকৃত করে নাটক বানানোর প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বক্তব্য দেয়ার মতো আর কিছু আসছে না। আমাদের যা ‘শব্দভাণ্ডার’ এই সরকারের একের পর এক অপকর্মে আর কোনও নতুন শব্দ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এই সরকার যে উচিত-অনুচিত এথিকসের ধার ধারে না এসব ব্যাপারে কি আর বলবো? পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে কোনও সরকারের সময়ে এত অনাচার হলে সেই সরকার লজ্জায় পদত্যাগ করত। কিন্তু এই পদত্যাগটা আওয়ামী লীগের বিধানে নাই। আমার এক ভাগ্নে বলেছে, ‘আওয়ামী লীগের রক্ত লোহার মত শক্ত, এই রক্ত কখনও পদত্যাগ করে না’।’ 

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়তে যাবে কেন? এই দেশে তাদের ব্যক্তিগত তাবেদারি বাবার (শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে) মৃত্যুবার্ষিকী পুরো আগস্ট মাস জুড়ে পালিত হয়। কিন্তু তাজরিনের যে ১১৪ জন শ্রমিক অদৃশ্য হয়ে গেল এরা কি এই বাংলার সন্তান নয়? রানা প্লাজা ধসে যারা মারা গেছে এই সরকারের কাছে সেসব গরিব শ্রমিকেরা কিছুই না। শুধুমাত্র শেখ পরিবার, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারই স্বনামধন্য। তাদের সব অপরাধ সব অপকর্মই মাপ।’

রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন নিক্সন চৌধুরীর একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি ইএনওকে ধমকাচ্ছেন। কোনও ভদ্রলোক এভাবে বলতে পারে না। চরভদ্রাসনের ইএনও ভদ্রমহিলার সাথে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন এটা কি কোনও ভদ্র মানুষ বলতে পারে? রাজনীতিবিদদের তো রাজনীতির ভাষায় শক্ত কথা হতে পারে। কিন্তু আপনারা শুনে দেখবেন, চরভদ্রাসনের ইউএনও-ডিসির সাথে নিক্সন চৌধুরী যে ভাষায় কথা বলেছেন এটা পাড়া-মহল্লার বেপরোয়া গুন্ডারা ছাড়া আর কেউ কথা বলতে পারে না। এই ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, কেন আজকে ধর্ষণের মহামারি, কেন সম্ভ্রমহানির এত মহামারি। শুধু নারী-শিশু কেন, ওরা মনে করে ওরা যে কারও ওপর হামলা করতে গালাগালি করতে পারে, যেন এটা ওদের বৈধ অধিকার।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘চরভদ্রাসনের ইএনও-ডিসির সাথে নিক্সন চৌধুরী যে ভাষায় কথা বলেছেন এই রেকর্ডটা যদি কেউ শুনে তবে ভয় পাবে এবং বলবে- ‘ওরে সর্বনাশ’। প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন এমপির কথার মধ্যে দিয়ে মনে হয়, এ দেশের জন্য কি ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে? ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই দেশ? এ দেশ জনগণের না? মনে হয় এই দেশ অফ দি আওয়ামী লীগ বাই দি শেখ হাসিনা এবং ফর দি শেখ হাসিনার পরিবার।’

সিভিল প্রশাসন পুলিশের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জনগণের অধিকার হরণ করে রাত্রে ব্যালট বাক্স পূরণ করে যে আনুগত্য দেখিয়েছেন, এখন তার প্রতিদান পাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আওয়ামী লীগের দ্বারা আপনারা উৎপীড়িত-অত্যাচারিত। অথচ একথা কাউকে বলতেও পারছেন না। এ অভিযোগ আপনারা কারও কাছে দিতেও পারছেন না। কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়রা আপনাদের ধমক দিচ্ছে। আপনারা ভীতুর মতো সেখানে নতজানু হয়ে আছেন। আপনারা পাল্টা প্রতিবাদ করছেন না, অথচ আপনারাই এদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এই ধরনের হুমকির জন্য আপনারা আইন প্রয়োগ করবেন, আইনে সেই বিধান আছে। অথচ সেই বিধান প্রয়োগ করার ক্ষমতা আপনাদের নাই।’

তিনি বলেন, ‘যদি বলা হয় বিএনপির মিছিলে লাঠিচার্জ করুন, বলা শেষ হওয়ার আগেই লাঠিচার্জ করবে গ্রেফতার করবে কারাগারে নিয়ে যাবে। আজ দীর্ঘ ১২ বছর বিরোধী দলের ওপর ট্রাকচাপা দেয়ার মতো দমন-নিপীড়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এটাকে কি আইনের শাসন বলবো? এটাকে কি গণতন্ত্রের শাসন বলবো? নাকি গুন্ডামির শাসন বলবো? প্রধানমন্ত্রী একেবারেই গুন্ডামির শাসন চালু করেছে দেশে। তাই তাঁর ভক্তকুল অনুসারীরা মনে করে প্রধানমন্ত্রী অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে রাতে নির্বাচন করে। ফলে দেশে যত সুন্দর মেয়ে আছে সবার প্রতি আমাদের অধিকার আছে। এটাই তারা মনে করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখুন, দেশে যত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তার অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ঘটাচ্ছে। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। এমসি কলেজের ঘটনার পরের দিনই সিলেটে ছাত্রলীগ এক নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে। আপনাদের বুঝতে হবে, আজকের যে বেপরোয়া পরিস্থিতি এর কারণ হচ্ছে শাসক গোষ্ঠী, যারা দেশ শাসন করছে তারা নিজেরাই তো অপরাধ করছে। তারা নিজেরাই তো একের পর এক অপকর্ম করছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার। আজ কত সাংবাদিক এবং যারা ফেসবুক সোস্যাল মিডিয়া অপারেট করে তারা আজ কারাগারে। উনার (প্রধানমন্ত্রী) লোকেরা অপরাধ করতে উৎসাহিত হচ্ছে, কারণ দেশে অপরাধীদের কিছুই হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা কোনও কিছুই মানছে না। নিক্সন চৌধুরী সেই পরিবারের একজন আত্মীয় তো বটেই সে যেভাবে ধমক দিচ্ছে ওই ডিসি উত্তরও দিতে পারছে না। ‘স্যার, জি স্যার’ বলছে অনুগতের মতো। একজন অপরাধ করে গ্রেফতার হয়েছে, এই গ্রেফতারের জন্য কী ধমক! এমন হুমকিতে প্রশাসন একেবারেই কাচুমাচু হয়ে গেছে। কই, কেবিনেট তো কোনও ব্যবস্থা নিল না। কেবিনেট সেক্রেটারি সচিব তো কোনও ব্যবস্থা নিল না। পারবে না, তারা সবাই নিজের বিবেককে বন্দি রেখেছে শেখ হাসিনার কাছে। কারণ ওনারাই তো অপরাধ করেছে। অফিসার্স ক্লাবে বসে মিটিং করেছে, কিভাবে ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন কব্জা করা যায়। অথচ এখন তারা নির্বাক। আজ প্রশাসন কেবিনেট সেক্রেটারি সচিবরাও নির্বাক। কিছুই বলার নেই। কারণ আওয়ামী লীগের পক্ষে তারা যে অপরাধ করেছে সে বিষয়ে তাদের কিছুই বলার নেই। বলার যদি কিছু থাকতো তাহলে দেশে আজ এত অরাজকতা হতো না।’

রিজভী বলেন, ‘এক চোখ না, দু-চোখ কানা করে বসে আছে সরকার। কোনও কিছুতেই কিছু যায় আসে না তাদের। ‘তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই’- সরকারের মনোভাবটা এমন। তারা ভাবে, আমরা যদি সোনার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারি আরে নারী ধর্ষণ শিশু নির্যাতন ব্যাংক লুট টাকা পাচার ক্যাসিও এগুলোতে কিছুই আসে যায় না। সরকার ভাবছে, তারা গড়ে তুলেছে তাদের ভাবধারার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন। যারা কিছুই বলতে পারবে না। আওয়ামী লীগের এমপিরা চড়-থাপ্পড় দিলেও প্রশাসন চুপ থাকবে।’

ইউএনওকে নিক্সন চৌধুরীর ধমক দেয়া ‘পরিকল্পতি’ দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘এই যে ঘটনা এটাও কিন্তু পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা কোনও অপরিকল্পিত কাজ করে না। নিক্সন ধমক দিয়েছে এটা নিয়ে কথা বলবে বিরোধীদল আর সারা দেশে ধর্ষণ নারী নির্যাতন এগুলো চলতে থাকুক। রাষ্ট্রীয় মদদে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নারী নির্যাতন হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই শেখ পরিবারে একটাও ভদ্রলোক নেই। আমি আজকে নির্দ্বিধায় বলছি, শেখ পরিবারে একটাও ভদ্রলোক নেই। গুন্ডাপান্ডা ছাড়া আমরা এই পরিবারে কোনও ভদ্রলোক দেখছি না।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com