ব্রেন স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে চাওয়া হচ্ছে করোনা সনদ, না থাকলে মিলছে না আইসিইউ

0

শেরপুরের মিয়া সেতাব উদ্দিন গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে জানিয়ে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে করোনা সনদ ছাড়া চিকিৎসা শুরু হবে না বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মিয়া সেতাব উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় হাসপাতাল থেকে বলা হয় তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে অবস্থা গুরুতর হতে পারে, দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যান। আমরা তখনই রওনা হয়ে বাবাকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে ঢাকার পান্থপথে বেসরকারি একটি হাসপাতালে আসি। জরুরি বিভাগে গেলে রোগী ভর্তি না করে করোনা সনদ আনতে বলা হয়। রোগীর পরিস্থিতি, স্থানীয় হাসপাতালের কাগজপত্র দেখালেও তারা ভর্তি নিতে নারাজ। আমরা জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করে করোনা টেস্ট করাতে বলি। কিন্তু তারা জানান করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকলে রোগী নিয়ে যেতে। আবার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পান্থপথেই আরেক হাসপাতালে যাই। সেখানেও চাওয়া হয় করোনা সনদ। পরে একটি বেডে রেখে করোনার টেস্টের জন্য নমুনা দেওয়া হয়। পরদিন টেস্টের রিপোর্ট এলে শুরু হয় চিকিৎসা।’শুধু এই রোগী নন, জরুরি রোগীরা চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের কাছে সনদ চাইছেন দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি সেবা নিশ্চিত না করে চাওয়া হচ্ছে সনদ। আইসিইউতে রোগী ভর্তি করতে গেলেও করোনা সনদ চাওয়া হচ্ছে। করোনা সনদ আনতে রোগী নিয়ে বিপদে পড়ছেন স্বজনরা। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় জীবনঝুঁকিতে পড়ছেন রোগীরা।

গত দুই বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন সাবেরুল ইসলাম। ২ অক্টোবর কেমোথেরাপি দেওয়ার পর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। চিকিৎসকরা জানান তার ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে বাধে বিপত্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নন-কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় করোনা সনদ ছাড়া আইসিইউ বেড দেওয়া সম্ভব নয়। সাবেরুল ইসলামের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি হাসপাতালে বাবাকে করোনা সনদ ছাড়া ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোনোরকম অক্সিজেন দিয়ে রেখে বাবার করোনা টেস্ট করাই। এরপর ওই সনদ দেখিয়ে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। ওই দিন রাতেই বাবা মারা যান। চোখের সামনে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে দেখলাম। করোনা সনদের জন্য হাসপাতালের দুয়ারে রোগী নিয়ে ঘুরতে হয়েছে আমাদের।’ দুই মাস ধরে কাশিতে ভুগছেন জামালপুরের সালেহা বেগম (৮৩)। এর সঙ্গে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, বাতের ব্যথাসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগ। কাশির কারণে গত বুধবার জামালপুর থেকে ডাক্তার দেখাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন তিনি। কিন্তু করোনার টেস্ট ছাড়া চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করোনা রোগীদের নির্ধারিত কক্ষে রেখে তার করোনা টেস্ট করানো হয়। তার করোনার উপসর্গ না থাকলেও কর্তৃপক্ষ করোনা টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরিবারের সন্দেহ হওয়ায় পরদিন আবার টেস্ট করালে তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয় ওই হাসপাতাল থেকেই। সালেহা বেগমের ছেলে শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমার মাকে যে চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা করাই তিনি এ হাসপাতালে কর্মরত আছেন। দুই মাস ধরে মা কাশিতে ভুগছেন, এর সঙ্গে বাতের ব্যথাও বেড়েছে। তাই জামালপুর থেকে মাকে নিয়ে এসে গত বুধবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসি। মাকে জরুরি বিভাগে রাখা হয় করোনা টেস্ট করার জন্য, সেখানে করোনা রোগীও ছিলেন। রাত ১২টায় টেস্টের নমুনা নেওয়া হয়। পরদিন দুপুরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়। দুই মাস কাশি থাকলে তো আর করোনার উপসর্গ হয় না। আমাদের সন্দেহ হওয়ায় ওই হাসপাতালে আবার নমুনা দিই। পরদিন রিপোর্ট আসে করোনা নেগেটিভ। আমার ৮৩ বছর বয়সী মাকে ভুল রিপোর্ট দিয়ে করোনা রোগীদের সঙ্গে রেখে তার জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘জরুরি রোগীদের জন্য হাসপাতালে আগে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা টেস্টের প্রয়োজন পড়লে হাসপাতালেই তার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগী নিয়ে স্বজনরা কোথায় টেস্ট করতে যাবেন? সব হাসপাতাল যে টেস্ট ছাড়া ফিরিয়ে দেয় তাও না। তবে রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলা কখনই উচিত নয়।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com