দেশে অনাচারের জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ‘অনেকাংশেই দায়ী’: রিজভী

0

দেশে অনাচারের জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ‘অনেকাংশেই দায়ী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘অপরাধ করে রেহাই পাওয়ার সংস্কৃতির জন্যই দেশে নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানিসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধগুলো জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, ধর্ষণ ও দুর্নীতি করলে পার পাওয়া যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে আটক করে না- এটি যেন দেশের অলিখিত বিধান হয়ে গেছে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমার (স্টেট ক্লিমেন্সী) কারণে ভয়ঙ্কর অপরাধীরা রেহাই পাওয়াতে তারা এখন সমাজে প্রভু হয়ে বসেছে। খুন, জখম ও নারীর শ্লীলতাহানিকে তারা নিজেদের অধিকার মনে করছে।’

রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খুনের আসামি লক্ষ্মীপুরের তাহেরের ছেলে বিপ্লব এবং নাটোরের যুবদল নেতা গামা হত্যার আসামিসহ ৩০ জন ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। গামা হত্যাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, এক্ষেত্রে তাদেরকে কোনও আবেদনই করতে হয়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে মাদারীপুরের খুনের আসামি যুবলীগ নেতা আসলাম জেল থেকে বেরিয়ে আবারও খুন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে দেশে অনাচারের জন্য রাষ্ট্রপতি অনেকাংশেই দায়ী। তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক হতে পারেননি। তিনি আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীদের অভিভাবক বলেই মানুষ মনে করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ৭ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে খুন ও ধর্ষণের মামলাও ছিল। এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নুর বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক হত্যার ১২ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি এবং চার্জশিটও হয়নি। সুতরাং বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেখানে সরকারের আদর্শ সেখানে আইন করে নারীর সম্ভ্রমহানির আসামীদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মতে দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ধর্ষণ অপরাধের সাজা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া (আইন সংশোধন) শুরু করার জন্য। তাই সাজা বাড়াতে আইন সংশোধন করার যে প্রক্রিয়া তা আমরা শুরু করে দিয়েছি’। আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য ‘আইওয়াশ’ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

রিজভী বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর ‘আইন সংশোধনের’ বক্তব্য চরম ধাপ্পাবাজি। দেশজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠছে সে আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্যই নতুন আইন তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। বিদ্যমান যে যাবজ্জীবন সাজার বিধান আছে সেটি প্রয়োগ হয়নি কেন? কারণ, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারি রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং অপরাধীদের অধিকাংশই পায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাদের শাস্তি দেয়া দূরের কথা, বরং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। ফলে অপরাধীরা যা খুশি তাই করার উৎসাহ পাচ্ছে।’ 

রিজভী আরও বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) চাঁদপুর ও জয়পুরহাটের কালাইয়ে দুটি পৌরসভা নির্বাচন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৪ নং ওয়ার্ডে কমিশনার নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। শতভাগ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হলেও সেসব এলাকায় বিএনপির এজেন্ট ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে, মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। জোর করে শুধুমাত্র নৌকার সমর্থকরাই ভোটকেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। চাঁদপুরে পৌর নির্বাচনে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। সেখানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির ২০/২৫ জন নেতাকর্মীসহ ভোটারদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় এপর্যন্ত কোনদিন নৌকা বিজয় লাভ করেনি। কিন্তু সেখানে এবার জোর করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে কেন্দ্র করে দখল করে নৌকায় সিল মেরে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেবল একটি মাত্র ওয়ার্ডের ভোট, সেটিও তারা জোর করে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ছিনিয়ে নিয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ দেশব্যাপী নারী-শিশু নির্যাতনের মহামারিতে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকেই বেশিরভাগ লিপ্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে, অথচ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ভোট ও গণতন্ত্রের শ্লীলতাহানি করে যাচ্ছেন নিরন্তরভাবে। উপরের নির্বাচনী ঘটনাগুলো আবারও প্রমাণ করলো- বর্তমান নির্লজ্জ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে দেশের সকল নির্বাচনের সম্ভ্রমহানি ঘটতেই থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরাস্থ বাসভবনে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বহিরাগত ব্যক্তি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসার ক্ষতিসাধন করে। আমি সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই- বিএনপি মহাসচিবের বাসায় হামলার ঘটনার পেছনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সরকারের অবিমৃশ্যকারী আইনের শাসনবিরোধী ভয়ঙ্কর রুপটি ফুঠে উঠেছে। সারা দেশ নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতনের যে মহামারী চলছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতেই সরকারের এজেন্টরা দলের মহাসচিবের বাসভবনে এই হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই মর্মে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি জালিয়াতচক্র চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলা ও সংযুক্ত দুটি পৌরসভার বিএনপির কমিটি বাতিল করা হয়েছে বলে মিথ্যা, বানোয়াট ও সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত কমিটিসমূহ দলের মহাসচিব কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এর বাইরে আর নতুন কোনও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। সুতরাং আমার স্বাক্ষর জাল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে চিঠিটি প্রকাশ করেছে সেই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com