অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবার আপনি পদত্যাগ করুন, জনগণ একটু স্বস্তিতে থাকতে পারবে: বিএনপি
‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে স্বাস্থ্য সেবা পেয়েছেন, আমরা করোনায় জনগণকে সেই স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানে হয় এটা ‘গঞ্জিকার’ প্রভাবে বলেছেন।’
গতকাল শনিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মোর্শেদ হাসান খান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিজ্জামান অ্যাপোলোকে অন্যায় ভাবে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘সরকারি হিসেবে ৭০১ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘরের মধ্যে মারা গেছেন। বাড়ি থেকে হাসপাতালে যেতে এ রকম রোগী ৪০ থেকে ৫০ জন মারা গেছেন। ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার সংক্রমণ হয়েছে এবং মারা গেছে অসংখ্য জন। এরপর তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বলেন ট্রাম্প যে সুবিধা পেয়েছেন, যেভাবে চিকিৎসা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের। এই যে ‘চাপাবাজি’ এই যে মিথ্যাচার, তা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ‘
তিনি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকার যে পরিসংখ্যান দিচ্ছেন এবং ডিজি হেলথ সার্ভিসের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছেন এর মধ্যে মিল নেই। করোনায় গ্রামের মানুষ হাসপাতালে আসতে পারছে না, ফলে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে বাড়ির মধ্যে। এই পরিসংখ্যান কিন্তু সরকারের নেই অথচ এই ‘অপদার্থ’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন দেশের জনগণ সেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। এই লোকটাকে কেন টিকিয়ে রেখেছে জানেন? ধনী লোক তো সরকার তার কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা নিয়েছেন। সেটা না হলে এই ধরনের একজন ব্যর্থ ও অকাট মূর্খ লোক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন চিন্তাই করা যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কালকে একটা কথা বলেছেন মুজিববর্ষে মানুষকে আমি সুন্দর জীবন দিব। আল্লাহর দোহাই প্রধানমন্ত্রী আপনি আর জনগণকে সুন্দর জীবন দিয়েন না। আপনি মুজিববর্ষের শুরু থেকে এই ছয় মাসে যে সুন্দর জীবন দিয়েছেন, তাতেই ফেনী থেকে বেগমগঞ্জ, বেগমগঞ্জ থেকে সিলেট, সিলেট থেকে সিরাজগঞ্জ শুধু আর্তনাদ। এই আর্তনাদের জীবন আপনি দিয়েছেন। আপনি যদি আরও ছয় মাস সুন্দর জীবন দিতে যান, তাহলে এই জীবনে আরও কত আর্তনাদ-হাহাকার ও আহাজারি বাতাসে ধ্বনিত হবে তার কোন ঠিকানা নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনার এই ছয় মাসের সুন্দর জীবন হবে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের। তারা আনন্দে থাকবে আরও কত ক্যাসিনো গড়ে উঠবে। কত তরুণী লাঞ্ছিত হবে। আপনি আর সুন্দর জীবন দিয়েন না। এবার আপনি পদত্যাগ করুন। জনগণ একটু স্বস্তিতে থাকতে পারবে।
‘কারও দয়ায় ক্ষমতায় নেই আওয়ামী লীগ’ গতকাল দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জনগণের দয়ায় আপনারা তো ক্ষমতায় নেই এটা তো সত্যি। সত্যি কথাই বলেছেন ওবায়দুল কাদের। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে তারা তো ক্ষমতায় নাই। তারা অন্য দেশের দয়ায় ক্ষমতায় আছেন। তবে দেশের জনগণের দয়ায় নয়।
রিজভী বলেন, ‘সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে শুধু ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন হয়েছে। বাদ জায়নি ৫ বছরের শিশু থেকে ৭২ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্তও। এগুলোর চমৎকার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তিনি। এছাড়া এই আমলে মাদকের ছড়াছড়ি। মাদক ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করা যায় না। মাদকের সঙ্গে মাদক কারবারিরা যুক্ত থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু মন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে মাদকের বিস্তার মন্ত্রিসভা পর্যন্ত লাভ করেছে।
ঢাবির শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মোরশেদ খান একজন তারুণ্যদীপ্ত শিক্ষক। তার স্ত্রী যখন ক্যান্সারে ভুগছেন, সেই সময় তিনি বার্তা পেলেন তার চাকরি নেই। শুধুমাত্র ভিন্নমতের কারণে। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ছিলাম, সিন্ডিকেট মেম্বার ছিলাম। ৭৩ এর অ্যাক্টে যে বিধান রয়েছে সেটা আমার মোটামুটি জানা আছে। ভিন্নমতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি যেতে পারে না। নৈতিক স্খলনের জন্য হয়তো তার কিছু হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আজকে মোরশেদ খান এবং অ্যাপোলো তাদের যে চাকরিচ্যুতি এটাও হচ্ছে ভিন্নমতের কারণে। তারা শুধুমাত্র একটি প্রবন্ধ লিখেছেন জিয়াউর রহমানের উপরে। এত কাপুরুষ, এত দুর্বল সরকার যে জিয়াউর রহমানের উপর একটি প্রবন্ধ লেখাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে গেছে। এই কাপুরুষতার কারণেই তাদের অনুগত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ঢাবি ভিসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, নৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী বর্তমান এই ভাইস চ্যান্সেলর। ভাইস চ্যান্সেলরকে গলায় গামছা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে আনা দরকার। তা না হলে সু-শিক্ষা থাকবে না। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হতে পারবে না। সরকারের প্রকৃতভাজন হওয়ার আশায় এই ধরনের একজন ভাইস চ্যান্সেলর নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন।