ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

0

ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। একটানা আদায় প্রায় বন্ধ হওয়ার ৯ মাস পার হয়ে ১০ মাসে পড়েছে। বেশির ভাগ মেয়াদি ঋণের গ্রাহকই এ সুযোগে ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে জানুয়ারির পর থেকে হঠাৎ করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে প্রভিশন সংরক্ষণ করা কষ্ট হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি থেকেই ঋণখেলাপি নীতিমালায় ছাড় দেয়া হচ্ছে। প্রথমে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত, পরে সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ে ছোট-বড় প্রায় সবধরনের ঋণগ্রহীতাই ঋণ পরিশোধ করছেন না। এমনিতেই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়ায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে একধরনের অনীহা বিরাজ করছে বড় বড় রাঘব বোয়াল ঋণখেলাপিদের মধ্যে, এর ওপর ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ায় আরো সুযোগ পেয়ে যান ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ফলে এত দিন ব্যাংকের কোনো ঋণ আদায় হয়নি বললেই চলে। বিপরীতে আমানত প্রত্যাহারের চাপ বেড়ে গেছে। এতে ব্যাংকের আয় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ব্যাংকাররা আশা করেছিল, সেপ্টেম্বরের পরে তারা ঋণ আদায় করতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবেন; কিন্তু আরো তিন মাসের সময় দেয়ায় পুরো বছরই কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলো চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের খুশি করতে গিয়ে অর্থের জোগানদাতা ব্যাংক খাতকে বেকায়দায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, ব্যাংকের ঋণ আদায় বলা চলে হচ্ছে না। যারা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও এখন আর ব্যাংকের ধারের কাছেই আসছেন না। ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের প্রকৃত আয় হচ্ছে না। প্রতি মাসেই পুঞ্জীভূত ঋণের ওপর সুদ বেড়েই যাচ্ছে। এ সুদ হিসাবের খাতায় যোগ করা হচ্ছে। বাস্তবে কোনো আয় হচ্ছে না। এতে সামনে ব্যাংকগুলো দুই ধরনের সমস্যায় পড়বে।

প্রথমত, গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের কারণে সংশ্লিষ্ট ঋণ খেলাপি করা যাবে না। আর ঋণ খেলাপি করা না গেলে ওই ঋণের ওপর আর্জিত সুদ ব্যাংকের আয় খাতে আনতে কোনো বাধা থাকবে না। এতে অনেক ব্যাংকই প্রকৃত আয় না হলেও কৃত্রিমভাবে আয় দেখানোর সুযোগ পাবে। দ্বিতীয়ত, প্রকৃত আয় না করে কৃত্রিম আয় দেখাতে গিয়ে সরকারের ৪০ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। কারণ ব্যাংকগুলো মুনাফা দেখালেই তার ওপর করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। এতে প্রকৃত মুনাফা না করে কৃত্রিম মুনাফার প্রায় অর্ধেক করপোরেট কর পরিশোধ করতে হলে ব্যাংকের মূলধন আরো কমে যাবে। শুধু তাই নয়, সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদেরকেও মুনাফা বণ্টন করতে হবে। সবমিলে ব্যাংকের মূলধনের ওপর হাত পড়ে যাবে। আবার মুনাফা দেখানো না হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হবেন। সবমিলেই উভয় সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত।

অপর দিকে, একটানা এক বছর ঋণ পরিশোধ না হলে জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করে ঋণ আদায়ের ওপর চাপ পড়বে। কারণ অনেকেই একটানা ঋণ পরিশোধ করছেন না। জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের কার্যকারিতা থাকবে না। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ না হলেই খেলাপি হয়ে যাবে। আগের ১২ মাসের কিস্তি বকেয়া থাকায় ব্যবসায়ীরা একসাথে ১২ মাসের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন না। আর ১২ মাসের পুঞ্জীভূত ঋণের কিস্তি আদায় না হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাবে। আর হঠাৎ করে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা কষ্টকর হবে। সবমিলে সামনে ব্যাংকগুলো অনেকটা দুর্দিনে পড়ে যাবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com