আত্মহত্যা সমর্থনযোগ্য নয়

0

আত্মহত্যা বর্তমান সমাজে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ই শোনা যায় নানা পেশার ও স্তরের মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিশেষ করে এই করোনা-পরিস্থিতি ও লকডাউনে আমরা যত বেশি আত্মহত্যার খবর শুনেছি এত সম্ভবত অন্য কোনো সময় শুনতে হয়নি। কিছুদিন পরপরই আত্মহত্যার খবর মেলে সংবাদপত্রে।

মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন কেড়ে নেওয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াই হলো আত্মহত্যা। আরবিতে যাকে বলে ‘ইনতিহার’। বিশে^ প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ডব্লিওএইচও-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের নিচে যারা মারা যায় তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা।

পরিণাম

ইসলাম মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সুউচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। ইসলামে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার প্রতি বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করতে বলা হয়েছে।

ইসলামে অন্যকে হত্যা করা যেমন মারাত্মক কবিরা গুনাহ, তেমনি আত্মহত্যা করাও কবিরা গুনাহ। আত্মহত্যা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)

এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে যেভাবে নিজেকে হত্যা করবে, জাহান্নামেও সে সেভাবেই নিজেকে আহত করবে। তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস হলো, যারা ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যাবে, তারা স্থায়ী জাহান্নামি হবে না। যে হাদিসে আত্মহত্যাকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের কথা রয়েছে, তার ব্যাখ্যা হলো, তা ওই লোকের জন্য, যে তাকে হালাল মনে করেছে। তখন তো সে কাফির হয়ে যাবে। তাই আত্মহত্যাকারীকে যত দিন ইচ্ছা আল্লাহ শাস্তি দিয়ে পরে ইমানের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আল-মিনহাজ, ইমাম শরফ আন-নববী : ২/১১৮)

প্রতিকার

মানুষ সাধারণত হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে। ইসলামে হতাশ হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)

আবার অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়ে কোনো উপায়ন্তর নেই মনে করে আত্মহত্যা করে। ইসলাম মানুষকে বলে, আল্লাহতায়ালা বিপদাপদ দেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। সুতরাং, বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিপদ যত বেশিই হোক তা একসময় দূরীভূত হবেই। সুতরাং আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।

কখনো অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে মানুষ আত্মহত্যা করে। ইসলাম ধনীদের নির্দেশ দিয়েছে অভাবীদের অভাব মোচনে এগিয়ে আসার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের অধিকার রয়েছে (সুরা আজ-জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

কখনো মানুষ পার্থিব ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে। ইসলাম বলে পার্থিব ব্যর্থতা কোনো ব্যর্থতাই নয়। সাফল্য ও ব্যর্থতার স্থান হলো আখিরাত। পার্থিব জগতে কোনো কিছু অর্জিত না হলে সেজন্য জীবননাশ করা নিরেট বোকামি। এ জীবন অতি তুচ্ছ। আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। আল্লাহ বলেন, ‘এ দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণস্থায়ী উপভোগের বস্তু। নিঃসন্দেহে আখিরাতই চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৩৯)।

অনেক সময় কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীরা প্রেমঘটিত বিষয়ের কারণে আত্মহত্যা করে। ইসলামে বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেম সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে প্রেম তো দূরের কথা গায়েরে মুহাররাম নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাতই নিষেধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তার লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)।

ইসলামে বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক হলো বিয়ে। ইসলাম প্রেমের অনুমতি দেয় না, তবে পছন্দ করে বিয়ের অনুমতি দেয়।

অনেক সময় মানুষ অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অন্যকে অপমান করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ না করে।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

সর্বোপরি, ইসলামে আত্মহত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। আর ইসলাম আত্মহত্যায় ইচ্ছুকদের ধৈর্য ধারণ করতে উৎসাহিত করে। তাদের মানসিক ও আর্থিক সহযোগিতার পরামর্শ দেয়। আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com