দেশে ‘দুর্নীতি ও নারী নির্যাতনের’ মহামারী চলছে: নজরুল
করোনা ভাইরাসের সংক্রামণের মতোই দেশে ‘দুর্নীতি-নারী নির্যাতনেরও’ মহামারী চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
গতকাল সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক মানবন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই অভিযোগ করেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন শুধু একটা মহামারী চলছে না। শুধু কোবিড মহামারী না, বাংলাদেশে দুর্নীতির মহামারী চলছে, বাংলাদেশ নারী নির্যাতনের মহামারী চলছে। এই মহামারী থেকে আমাদেরকে রক্ষা পেতে হবে, জনগণকে রক্ষা করতে হবে।’
দ্রব্যমূল্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম ‘শ খানেক টাকার কাছাকাছি। যে কোনো শাক-সবজী ৮০/৯০/১০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আমি গতকাল এক বাজারে মলা মাছের দাম করছি, বাতাসী মাছের দাম করছি- প্রায় ৭শ টাকা কেজি। তাহলে সাধারণ গরীব মানুষ খাবে কী? এমনকি যারা চাকরি-বাকরি করেন, হালাল উপার্জন দিয়ে তারা চলবেন কি করে, ছে্লে-মেয়েদের মুখে খাবার দেবেন কি করে, তাদের লেখা-পড়ার খরচ চালাবেন কি দিয়ে, তাদের চিকিৎসা করাবেন কি দিয়ে- ভাবুন একবার।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপাত্ত তু্লে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পারিবারিক পর্যায়ের ব্যক্তির আয় যেটা ২০১০ সালে ছিলো যা তার চেয়ে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ কমে গেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করেন তাদের আয় ২০১০ সালের তুলনায় কমেছে শতকরা ১২ ভাগেরও বেশি। এক হাজার টাকা যে বেতন পেতো তার ১২০ টাকা কমে গেছে। যখন উপার্জন কমে যাচ্ছে তখন যদি জিনিসের দাম বাড়ে তখন তো কষ্ট তো বেশি হয়। এই সাধারণ সোজা কথাটা সরকারকে বুঝতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ ভাগ মানুষ তাদের আয় বেড়েছে শতকরা ৫৭ ভাগ।আর যারা সবচেয়ে গরীব সেরকম শতকরা ৫ ভাগের আয় কমেছে শতকরা ৫৯ ভাগ। এটা আমাদের কথা না, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ। ২০১০ সালে আমাদের দেশের সবচেয়ে গরীব যারা তাদের আয় ছিলো ১৭‘শ ৯১ টাকা এখন তাদের আয় হলো ৭৩৩ টাকা।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিআইডিএস তার রিপোর্টে বলছে যে, গত কয়েক মাসে এক কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ নতুন করে গরীব হয়ে গেছে। আগে তো গরীব ছিলোই। এডিবি তার রিপোর্টে হিসাব করে বের করেছে, এশিয়ার ৩০টি দেশের মধ্যে সুখে আছে মানুষ কতটা। সেই হিসাবে বাংলাদেশের স্থান হলো ২৬তম। অর্থাত আমাদের চেয়ে কষ্টে আছে আর মাত্র ৪টা দেশ। এতো কষ্টে আছে বাংলাদেশের মানুষ। দি ইকোনোমিস্ট তাদের রিপোর্টে বলছে, ১২৫ টা দে্শের মধ্যে তারা গবেষণা করেছে। সেখানে তারা ৪৩টা দেশ পেয়েছে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার বেশি কিন্তু সুখের হার কম। বাংলাদেশ তার মধ্যে একটা।’
সিলেটে এমসি কলেজে নববধু ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এমসি কলেজের প্রিন্সিপাল সাহেব সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, আমি অসহায়। আপনি অসহায় হতে পারেন কিন্তু যাদের সামর্থ আছে, সাহস আছে তারা তো নামতে পারে ময়দানে। আর যদি তারাও না নামে। তাহলে সবসময়, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা মাঠে নামেছে, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মাঠে নেমেছে, ৯০এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে যারা মা্ঠে নেমেছে, জনগন মাঠে নামবে, নামবেই। এটাই বাস্তবতা, এটাই বার বার প্রমাণিত।’
সংগঠনের সদস্য আজিজুল বারী হেলালের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবি প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এই মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন। দ্রব্য মূলে বৃদ্ধির প্রতিবাদের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করে নেতা-কর্মীরা।মানববন্ধন শেষে ‘ইনডেমনিটি’র নির্মাতা পরিচালকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে একদল কর্মীরা।
এর আগে সকালে নয়াপল্টনে নিচ তলায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল হয়। এতে নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, আনোয়ার হোসেইনসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।