ধর্ষণের কালো থাবা
এমন দিন সম্ভবত কমই আছে, যেদিন পত্রপত্রিকায় ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হয় না। উদ্বেগজনক হারে তা বেড়েই চলেছে। কিছু ঘটনা আছে, যা রীতিমতো লোমহর্ষক। ঘরবাড়ি, পথঘাট এমনকি শিক্ষাঙ্গনে পর্যন্ত এই জাহেলিয়াত থাবা বিস্তার করেছে। শিশু-বৃদ্ধা কেউই এই পাশবিকতা থেকে নিরাপদ নয়।
সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা। এ ধরনের পৈশাচিকতা এখন রোজ ঘটছে। কিছু দিন এসব নিয়ে গণমাধ্যম উত্তাল থাকে। ধর্ষক গ্রেফতার হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, আবার জেল থেকে বের হয়ে আসছে। কিছু দিন পর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত এক সংবাদ অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আমেরিকায়।
চার নম্বরে আছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়ে ২৪ হাজার ৯২৩টি। দেশটিতে ধর্ষণের শিকার ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করে। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে ব্রিটেন।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম : ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৭০ শতাংশ। (প্রথম আলো)
এগুলো হচ্ছে আমাদের প্রতিদিনের হালচাল। এ ধরনের হাজারো ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালে ঘটছে। অনেকেই নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার্তে এ সব প্রকাশ করে না। কেউ বা আবার প্রকাশ করলেও তার ওপর নেমে আসে অন্ধকার এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
কিন্তু এসবের পেছনের কারণগুলো যথার্থভাবে খুব কম লোকই উপলব্ধি করে। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ পৃথিবীতে নির্বিঘেœ আমাদের চলাচলের কিছু বিধানাবলি দিয়েছেন। যিনি আমাদের স্রষ্টা তিনি এ সম্পর্কে ভালো জানেন যে, আমাদের জন্য কোন আইন উপযোগী।
মহান আল্লাহ ধর্ষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন : তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। (সূরা বনি ইসরাইল : ৩২)
ব্যভিচারের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। যেসব জিনিস ব্যভিচারের প্রতি ধাবিত করে তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। জেনা কত নিকৃষ্ট তা বোঝার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট। এখানে ‘জেনা করো না’ এ কথা বলা হয়নি; বরং এর কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, এটা কত জঘন্য অপরাধ। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে কতটুকু নিয়ম মেনে চলি? বরং এসবকে উপেক্ষা করে অশ্লীলতার জাল এমনভাবে বিছিয়ে দিয়েছি, যার ফলাফল আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। যুবক বৃদ্ধ কেউই এ থেকে নিরাপদ নয়।
এক হাদিসে এসেছে : আবু হুরায়রা রা: নবী সা: থেকে বর্ণনা করেন, চোখের ব্যভিচার হলো দেখা। কানের ব্যভিচার শোনা। জিহ্বার ব্যভিচার বলা। হাতের ব্যভিচার হাত দিয়ে স্পর্শ করা। পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬৫৭)
দেখুন নারীদের জন্য আল্লাহ কী বলেছেন, (মুমিন নারীদের বল) তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য অন্যদের কাছে প্রকাশ না করে, তবে তার মধ্যে যা (সাধারণত) প্রকাশ পেয়ে যায় (তার কথা ভিন্ন)। এবং তারা যেন তাদের ওড়না নিজ বক্ষদেশে নামিয়ে দেয় এবং নিজেদের সৌন্দর্য যেন স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, আপন স্ত্রীলোক, যারা তাদের মালিকানাধীন, এমন পুরুষ সেবক, যাদের (নারীদের বিষয়ে) কোনো আগ্রহ নেই এবং নারীদের গোপন বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো সামনে প্রকাশ না করে। আর তারা যেন এমনভাবে পা না ফেলে, যার ফলে তাদের গোপন সৌন্দর্য জানা হয়ে যায়। (সূরা নূর : ৩১)
বর্তমানে নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মহড়া চলে। এটাকে আধুনিকতা বলেও কেউ স্বস্তির শ^াস ফেলতে দেখা যায়। নারীদের ভোগ্যপণ্য বানানোর এক অসভ্য প্রতিযোগিতা চলছে বিশ^জুড়ে। যেসব দেশে ইসলামী আইনকে ফলো করা হয় আমরা একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখব যে, সেখানে ধর্ষণের হার অনেক কম। এর কারণ মূলত আল্লাহ পদত্ত বিধানকে পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন : ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে এক শ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা নূর : ২) কিন্তু আমরা মুসলমান হয়েও বিজাতীয় এসব টোপ সহজেই গ্রহণ করে ফেলি। ধর্ষণের শাস্তি আমাদের দেশে যতটুকু আছে তাও যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। যার ফলে ধর্ষক আর লম্পটদের আপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ধর্ষণ আর ব্যভিচার রোধ করা কোনো দিন সম্ভব হবে না। দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এটা বলা বাহুল্য। তাই চলুন নিজের জীবনকে ইসলামের রঙে রঙিন করি।