নৌকাবিরোধীদের বিরুদ্ধে ক‌ঠোর হওয়ার নির্দেশ(ভিডিও)

0

জেটিভি রিপোর্ট: জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লী‌গের যেসব নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরু‌দ্ধে অবস্থান নি‌য়ে‌ছেন তা‌দের বিরু‌দ্ধে সাংগঠ‌নিক ব্যবস্থা নেয়ার নি‌র্দেশ দি‌য়ে‌ছেন দলীয় প্রধান শেখ হা‌সিনা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) গণভবনে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। ‌বৈঠ‌কে উপ‌স্থিত একা‌ধিক সূত্র বিষয়‌টি নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন।

সভায় আওয়ামী লীগ সভাপ‌তি ব‌লেন, যাদের শোকজ করা দরকার তাদের শোকজ করুন, যাদের সাসপেন্ড করা দরকার তাদের সাসপেন্ড করুন। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার জন্যও বলেন শেখ হাসিনা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্য শেষে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন ও মোহাম্মদ নাসিম।

জানা গেছে, সাংগঠনিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের নাম ও তাদের অপরাধের মাত্রার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন ছাড়াও দলের ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে যারা শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে তাদের বিষয়েও উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে।

উপস্থিত বক্তাদের বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা আগামী সম্মেলনের আগেই দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ নিরসন করার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে দলের কার্যক্রম আরো গ‌তিশীল কর‌তে বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে সজাগ থাকার আহবান জানান শেখ হাসিনা।

এই আলোচনা শেষে আসন্ন শোকাবহ আগস্ট মাসব্যাপী কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপ‌তি শেখ হা‌সিনা। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উদযাপন, ৮ আগস্ট শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উদযাপন, ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণ, ২৪ আগস্ট নারী নেত্রী শহীদ বেগম আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের অঙ্গ ও সংগঠনগলোকেও শ্রদ্ধা নি‌বেদ‌নের পাশাপা‌শি শোকের মাসের কর্মসূচি পালনের বিষয়েও নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের একটা লক্ষ পূরণ করতে পেরেছি, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে যে স্বীকৃতি পেয়েছি সেটাকে আমাদের ধরে রাখা আর এখানে রাজনৈতিক শক্তিটা খুব বেশী প্রয়োজন, সংগঠন প্রয়োজন, জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। আমি মনে করি, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর এ পর্যন্ত যেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং আজকে বাংলাদেশে আমরা সরকার গঠন করে যে জায়গাটাতে নিয়ে আসতে পেরেছি সেখানে মূল শক্তিটাই ছিল আমাদের দেশের জনগণ ও তাদের সমর্থন এবং অবশ্যই মহান আল্লাহর একটা রহমত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পেরেছে। সেজন্য আমি মনে করি যে, একদিকে যেমন আমাদের সংগঠন দরকার শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। পাশাপাশি আমরা যে জায়গাতে এসেছি, রাজনৈতিক দল হিসাবে আমাদের নিজেদের চিন্তা ভাবনা ছিল, পরিকল্পনা ছিল; সরকারে আসলে কি করব সব কিছু আমাদের একটা তৈরি করা ছিল বলেই কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর পরে কাজগুলি করতে পেরেছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে আমরা যেখানে এসেছি সেখান থেকে দেশকে আগামী দিনে কোথায় নিয়ে যাব? কতটুকু করব, সে পরিকল্পনাও আমাদের আছে। সেটা আমরা এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি। সেই প্রস্তুতিটা আমাদের নিতে জবে। সেই পথগুলো আমাদের ধাপে ধাপে অতিক্রম করতে হবে। তার জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলকে শক্তিশালী করা। জনমত সৃষ্টি করার পাশাপাশি আমাদের চিন্তা চেতনাগুলোকে সমন্বিত করে আমরা প্রতি পদক্ষেপ যেন সুষ্ঠুভাবে করে এগিয়ে যেতে পারি। যেন আমাদের চলার পথে যত বাধাই আসুক অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

চলমান অতিবৃষ্টিসহ দেশের জনগণের কল্যাণে সব কিছুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও নেতাকর্মীদের আরও সজাগ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বিএনপি শাসনামলে বন্যায় মানুষ নিহতের ঘটনা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কিন্তু মানুষকে অবহেলা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করি না। আমরা মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে মানুষের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো আর মানুষের কল্যাণে এবং উন্নয়নে কাজ করা-এই নীতি নিয়ে আমরা কাজ করি বলেই আজকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা এটাই চাই। আমাদের এই রাজনৈতিক দল যে দল এ দেশের জনগণের কথা বলার মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছিল, যে দলঠিকে সুসংগঠিত করে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাব। মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, এই বাংলাদেশে এজটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না, অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না। এই দেশটা হবে সার্বিকভাবে একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব বড় বড় উন্নত দেশের মত উন্নয়ন হয়ত করতে পারব না। কিন্তু প্রতিটি মানুষেই তার জীবনটাকে অর্থবহ করবে, দারিদ্রের হাত থেকে তারা মুক্তি পাবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। তাদের জীবনের যে লক্ষগুলি তা পূরণ করা অন্তত সেইভাবে আমাদের দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই। এই বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার দেশ হিসাবে গড়ে উঠবে, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল।’

১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার তো মনে হয়, স্বাধীনতার ৫/৬ বছরের মধ্যে সারাবিশ্বে তথা সাউথ এশিয়া বা সাউথ ইস্ট এশিয়ার মধ্যে একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারত। কিন্তু সেই জায়গাটাই বাধাগ্রস্ত করা হল। জাতির পিতার এই হত্যার পেছনে যারা ছিল পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ধূলিস্মাৎ করে দিয়ে উন্নয়নের ধারাটাকেও ব্যাহত করা হয়। উদ্দেশ্যটাই ছিল এরকম, বাংলাদেশ একটা স্বাবলম্বী রাষ্ট্র হিসাবে যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলকে সংগঠিত করে বিভিন্ন মেয়াদে সরকার গঠনের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছি আজকে ২০১৯ পর্যন্ত;এই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বের মধ্যে একটা উন্নয়নের রোল মডেল, বাঙালি জাতি একটা সম্মান পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীতা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের চলার পথ কিন্তু খুব সহজ ছিল তা নয়। প্রতি পথে পথে বাধা, অগ্নি সন্ত্রাস, খুন, নির্যাতন, অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমরা কিন্তু এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

‘আমরা উন্নয়নের ধারাটাকে অব্যাহত রেখেছি। এই দশ বছরের মধ্যে কখনো কিন্তু হোঁচট খাইনি। আমরা পিছিয়ে যাইনি এবং হঠাৎ করে লাফ দিইনি, জাম্প করতে যাইনি। আমরা সুস্থিরভাবে ধাপে ধাপে স্থিরভাবে এগিয়ে নিয়ে এই পর্যন্ত আসছি। এটাই হচ্ছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, উপদেষ্টারা আমাদের একটা থিঙ্কট্যাঙ্ক। আমি এইটুকু চাইব, আপনাদেরও আরেকটু সকলকে সক্রিয় হতে হবে। আমাদের অফিসের সব ব্যবস্থা করা রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটা বিষয়ে উপ কমিটিও করা আছে এবং আপনারা সেখানে বসেন, মিটিং করেন। সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা সেটাও নিতে হবে এবং আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।‘

এছাড়াও তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক থাকেই তাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যত দূরেই আগাই কিছু লোক সবসময় এটাকে একটা ভিন্ন চোখে দেখার অভ্যাস। এরা আসলে কখনো গণতান্ত্রিক ধারাটা চায় না।’

বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এইচ টি ইমাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, পীযূষ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, ইকবাল হোসেন অপু, এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, মারুফা আক্তার পপিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com