প্রতিমুহূর্তে জনবিস্ফোরণের আতঙ্কে শেখ হাসিনা: বিএনপি

0

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটা মুহূর্তে টেনশনে থাকেন’- এমন মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রতিমুহূর্তে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) টেনশন থাকে, আতঙ্ক থাকে। কোনও দিক দিয়ে যদি জনবিস্ফোরণ ঘটে যায় কিংবা ভোটকেন্দ্রে যদি জনগণের একটা ফ্লো তৈরি হয়ে যায়, তাহলে তো উনি আর ক্ষমতায় টিকতে পারবেন না। প্রতিমুহূর্তে সেই টেনশন সেই আতঙ্কে থাকেন শেখ হাসিনা।’ 

রিজভী বলেন, ‘সে কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা (সরকার) সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে এবং কখনও কখনও সেটাতেও স্বস্তি না পেয়ে পার্সোনালি শারীরিকভাবে আঘাত করে। তার শিকার হয়েছিলেন আমার পাশে বসে থাকা হাবিবুর রহমান হাবিব ভাই।’

সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের চিরাচরিত ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র এটা পাল্টে দিয়েছেন। এখন তো দিনের ভোট রাতে হয়, ভোটাররা তো ভোটকেন্দ্রে যান না। ভোটের দিন এখন ভোটকেন্দ্রে বিচরণ করে কিছু চতুষ্পদী প্রাণী। এগুলোর ঐতিহ্য তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। পাবনায় কতটুকু সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেটা বলা খুব মুশকিল।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রশক্তি, রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোটাই ব্যবহার করা হয় ভোটের বিরুদ্ধে। ভোটের একটা তারিখ থাকে, কিন্তু ভোটের দিন ভোটের বিরুদ্ধে থাকে পুরো রাষ্ট্রশক্তি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে সরকার যেটা চায় সেটা পরিপূর্ণ করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি পাবনা-৪ এ উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আমরা এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্পেসকে বাড়ানোর চেষ্টা করবো। এখানে বাধা দিলে সেই বাধাকে অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যাতে করে নিয়ে যাওয়া যায় সেই সাহস নিয়ে যিনি আমাদের প্রার্থী হবেন তিনি কাজ করবেন।’

‘বিএনপি নির্বাচনে হারার আগেই হেরে যায়’- এদিন সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আমরা যদি হারার আগেই হেরে যাই তাহলে উনারা কেন রাষ্ট্রক্ষমতাকে কব্জা করে পরাজিত হওয়ার আগেই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেন? জনগণ কী রায় দেবেন, সেটার অপেক্ষা না করে কেই তারা নিজেদের আগেই বিজয়ী ঘোষণা করেন? ওই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে অর্থাৎ দিনের ভোট রাতে করে অথবা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না আসতে দিয়ে তারা আগেই যাদের বিজয়ী করবে সেসব প্রার্থীর সমর্থকদের সেট করে রাখে।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের পর থেকে যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও তারা এসব প্রহসন করেছে। কারণ ওনারা যাদের নমিনেশন দেবে সেইতো এমপি, ওনাদের তো ভোটের দরকার নেই। তারা সেট করে রাখে, ‘আমরা এনাকে এমপি করে নিয়ে আসবো’। এমপি নির্বাচিত হওয়ার সকল প্রতিযোগিতা ও প্রক্রিয়া বিদায় করে আওয়ামী লীগ যাকে সিলেকশন দেবে নির্বাচন কমিশনও বিজয়ী হিসেবে তার নামই ডিক্লেয়ার করে। আমাদের কাজ হচ্ছে শেষ পর্যন্ত লড়াই করা। আমরা যদি হেরেও যাই তাহলেও হাবিবুর রহমান হাবিবের মত একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতা যে কিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়েও শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে পাবনা থেকেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দল থেকে যেই নমিনেশন পাক না কেন, তিনি শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করবেন। পুলিশ আমাদের নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেই। আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে, তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

‘ইতিহাসের পটভূমি’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আগেও যখন ডিক্টেটররা শাসন করতো আইয়ুব খান, এরশাদ তখনও দেখা গেছে যে, প্রার্থী বা এই লেবেলের বড় নেতাদের গায়ে হাত দেয়া হতো না। শেখ হাসিনা সেই কালচারও ধ্বংস করে দিয়েছে। তাঁর ক্ষমতা আগলে রাখার জন্য কোর্ট নির্বাচন কমিশন দিয়ে অর্ধেকের মত বিএনপির প্রার্থীকে বাতিল করে দিয়েছেন এবং কাউকে কাউকে কারাগারে রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যে নষ্টামি করছেন সেই নষ্টামিগুলোকে নিশ্চিত করার জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এসমস্ত নোংরা কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে যায় বলেই দিনের ভোট রাত্রে করে। এখন তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করলেই বিজয়ী হওয়া যায় অবৈধভাবে।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, পাবনা-৪ এ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন ও মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহীম প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com