তিস্তার পানি না দেয়ার সিদ্ধান্ত ভারত আগেই নিয়ে রেখেছিল?

0

ভারত যে বাংলাদেশকে তিস্তার তেমন কোনো কিছুই দেবে না- সেটি ২০০৯ সালের আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। পানি টেনে নিয়ে গিয়ে যেখানে যা নেয়ার তা করা হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আর কোনো দিন ভারতকে হাত লাগাতে হবে না। তবু প্রণব মুখার্জি তিস্তা চুক্তি করবেন বলে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন হাসিনা সরকারের সাথে একটা চুক্তি সই করতে যার কোনো বাস্তবায়ন মূলত ভারত কোনো দিন করবে না। মমতা দোষ দেবেন কেন্দ্রকে আর কেন্দ্র দোষ দেবে মমতাকে- এভাবেই পার করে দেয়া হবে সময়।

এ কারণে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নির্ধারিত ঢাকা সফরের তিন দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কলকাতায় সফরে যান। গিয়ে মমতাকে জানান, তিনি যেন কোনো আপত্তি না তোলেন তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে। কারণ তাকে বাংলাদেশকে ‘কোনো পানি দিতে হবে না’। কিন্তু মমতা বলেন, এই অসততার চুক্তি করতে তিনি মনমোহনের সাথে বাংলাদেশে যাবেন না। এমন কাজে তিনি সম্পৃক্ত হতে অপারগতা জানান। আর সেখান থেকেই সব দায় মমতার উপরে চাপিয়ে কংগ্রেস সরকার দায় সারে।

চীন এ বিষয়ে পুরোটাই ওয়াকিবহাল। তাই সে বাংলাদেশকে প্রকল্প সাহায্য দিয়ে হাত বাড়িয়েছে। আর স্বভাবতই এই প্রকল্প বাই ডিফল্ট ভারতবিরোধী এবং বাংলাদেশে জনপ্রিয় হবে আর ভারতীয় চাতুর্যকে আরো ভালো করে সামনে তুলে ধরবে। এগুলো চীনের হোমওয়ার্ক বা পুরনো প্রকল্প রিভিউ। অর্থাৎ এভাবে প্রায় আরো নয়টা নতুন প্রকল্প নিয়ে চীন আগাচ্ছে যাদের মোট মূল্য ৬.৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ‘উন্নয়ন-ই’ দিতে গেলে, নিজের কর্মীদের খাওয়াতে গেলে, চীনই তাদের একমাত্র ভরসা।

ঢাকার কোনো কোনো রিপোর্টে চীনের এই ‘নতুনভাবে’ হাজির হওয়াটাকে চীনের বাংলাদেশে শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়, রাজনীতির ক্ষেত্রেও জড়িয়ে পড়া বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এটা একেবারেই ওভার-রিডিং বলে মনে করার কারণ আছে। এ ছাড়া অনেকে আবার এখানে ভারতের প্রভাব এবং তা ও আবার একচেটিয়া প্রভাব ছিল বলে অনুমান করে থাকেন। এ ধরনের অনুমানও ভিত্তিহীন।

এক কথায় বললে, প্রথমত চীনের বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিকভাবে জড়িয়ে পড়া’ কথাটার কোনো ভিত্তি নেই, এ জন্য যে, চীনের রাজনৈতিক ভূমিকা মানে কী- কোন টাইপের রাজনীতি? যেমন আমেরিকান টাইপ হলে এর মানে হলো হিউম্যান রাইটস সুরক্ষা করতে হবে এবং প্লুরালিজম চর্চা করতে হবে- এরকম? কথা এরকম চিন্তা করে বলতে হবে। চীনের এখনো এমন কোনো বিশেষ টাইপের রাজনীতি নেই। মূল কারণ, হিউম্যান রাইটস এখনো কমিউনিস্টদের চিন্তার সাথে কম্পিটিবল বলে মনে করা হয় না।

তবে কি চীনের রাজনীতি মানে আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো দলের প্রতি আগ্রহ? সে সুযোগও নেই। কারণ যে চীন গ্লোবাল নেতা হতে চায়, সে কেবল একটা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে দাঁড়াতে পারে না। এটা আত্মঘাতী কারণ, চীনকে সবার নেতা হতে হবে।

আর ওদিকে আমেরিকার নেতৃত্বের জমানায় এশিয়ায় ভারতের কখনো একচেটিয়া প্রভাব ছিল বলে অনুমান- এসব কথা অমূলক। খুব সম্ভবত তারা ভারতের একালে চীন ঠেকানোর ‘ক্ষেপ’ নেয়ার কথা মনে রেখে এগুলো বলছেন। সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। ভারতও সেই আগের মতোই গুরুত্বহীন আম-ভারত হয়ে গেছে। কারণ, এতে আমেরিকার কড়া এক আক্কেল হয়ে গেছে। কারণ তাকেই সব স্বার্থলাভের বাইরে রেখে ঢাকা-দিল্লি রুল করে গেছে। এ দিকে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়েছে প্রচুর। টিআইবি, আর সুলতানা কামালরা মিলে এখন এন্টি-ইন্ডিয়ান। তারা এখন অভিযোগ করেছেন সবাই নাকি কয়লা বিদ্যুৎ করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। তা ভালো। কিন্তু ভাসুরের নাম নেন না কেন? দোষ ধরেন চীন আর ভারতের। জাপান আর আড়ালে কি মাতারবাড়িতে আমেরিকা নেই? কাজেই, এতে হবে না। ফ্রেশ সৎ ইমেজ লাগবে।

তবে আগামীতে মানে নভেম্বরের পরে এবং জানুয়ারি থেকে আমেরিকা আবার নিজের গ্লোবাল ভূমিকা ফিরে পেতে চেষ্টা করবে। তা কতটা ফিরে পাবে তা দেখতে হবে। তবে আগামী দিনে আমেরিকার বগলে ভারতকে দেখা যাবে না খুব সম্ভবত।

আর ভারত? বাংলাদেশে ভারতের দিন শুকিয়ে গেল। মনে হচ্ছে সরকারের মোহ কেটে গেছে। তাহলে কি একটা পর্বের সমাপ্তি ঘটল?

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com