শেষ বয়সে এসে মানুষের এত দুর্ভোগ, এত কষ্ট দেখতে হবে কল্পনায়ও ছিল না: মওদুদ

0

৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মানবজাতির জন্য করোনাকালের মতো এমন দুঃসময় আর কখনো দেখেননি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শেষ বয়সে এসে মানুষের এত দুর্ভোগ, এত কষ্ট দেখতে হবে কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা কী পাপ করেছি জানি না! এমন অভিশাপ পৃথিবীর বুকে কেন নেমে এলো! গরিব মানুষের হাহাকার সহ্য করা যায় না। আয়-রোজগার সব বন্ধ। মানুষের এই দুর্ভোগ, কষ্ট দেখতে হবে ভাবতেই পারছি না।’

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত সাড়ে তিন মাস গুলশানের বাসায় স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এই সদস্য। সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ৮০ বছর হলেও তাঁর প্রকৃত বয়স ৮৩ বছর। আর ৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, আইনমন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জেলও খেটেছেন অনেকবার। কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে একটানা এত দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি জীবন যাপন করতে হবে ভাবেননি কখনো। ভারাতুর কণ্ঠে বলেন, ‘এমন জীবন কখনো চাইনি। যথেষ্ট বয়স হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে। এ সময়টায় আমার বাসায় কেউ আসছেন না। আমিও কারো বাসায় যাচ্ছি না। বাজার করছি অনলাইনে। স্ত্রী হাসনা মওদুদ ছাড়া বাসায় আছেন একজন বাবুর্চি। তিনিও বাসার বাইরে যান না। আর আমাদের দেখাশোনা করছে ইব্রাহিম নামে একটি ছেলে।’

ছেলেটির কথা উঠতেই দারুন এক ইচ্ছার কথা জানালেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। ‘মনস্থির করেছি, ইব্রাহিমকে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াব। ও এবার এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। অনেক ব্রিলিয়ান্ট।’ তার পরই আবার ম্লান হয়ে যায় তাঁর কণ্ঠ। ‘আমি তো দুটি সন্তান হারিয়েছি। একমাত্র মেয়ে আনা কাসফিয়া স্বামী-সন্তানসহ নরওয়েতে বাস করছে। তাদের জন্য খুব চিন্তা হয়।’

করোনার এই সময়ে নিজের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন তুলে ধরে জানালেন, ‘বই লেখার জন্য অনেক পড়তে হচ্ছে। ইবাদত, শারীরিক ব্যায়াম, গোসল ও খাওয়া-দাওয়া ছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করি পাঠে। রাত সাড়ে ১০টায় আমি ঘুমাতে যাই, উঠি ভোর সাড়ে ৪টায়। করোনার এই সময়টাকে গঠনমূলক কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। না হলে হতাশা এসে যাবে, দুঃখবোধ তাড়া করবে।’

সফল ও সচ্ছল জীবন কাটানোর পরও হতাশার কথা কেন—জানতে চাইলে পরোক্ষে রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার আমার বাড়িটি নিয়ে গেছে। আমি একজন পেশাজীবী। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাস আদালত বন্ধ থাকায় আমার কোনো আয় নেই। ব্যাংক ব্যালান্স যেটুকু আছে তাও সামান্য। বাড়িভাড়া দিয়ে আমার স্ত্রী সংসার চালান। সব কিছু চিন্তা করলে হতাশা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।’

করোনাকাল পার হলে বিশ্ব এবং বাংলাদেশে পরিবর্তিত এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে বলে আশা করছেন বিশিষ্ট এই রাজনীতিক। তাঁর ভাষায়, ‘করোনাকালে বিশ্ব তথা বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা আমূল বদলে যাচ্ছে। এর প্রভাব রাজনীতিতেও পড়তে বাধ্য। করোনা চলে যাওয়ার পর বিশ্ব তথা বাংলাদেশ সরকারের নীতিও বদলে যাবে বলে আমরা আশা করছি। সরকার সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করবে এবং এখনকার তুলনায় সহনশীল হবে। সুষ্ঠু রাজনীতি এবং আইনের শাসনের ধারা ফিরিয়ে এনে সরকার ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেবে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com