ক্যাসিনো থেকে রিজেন্ট কাণ্ড সুবিধাভোগী শতাধিক সাংবাদিক!

0

রিজেন্ট কাণ্ডের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও গ্রেফতার করা হয়নি করোনার মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রতারণা করে ধরা খাওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা শাহেদ করিম। গতকাল হাসপাতালটি সিলগালা করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সেই প্রতারককে গ্রেফতার করার কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন উঠেছে রাজধানীর মত জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক মহলের বেস্টুনি পেরিয়ে শাহেদ কিভাবে চালাতো এসব কাণ্ড?

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক মহলসহ গণভবন পর্যন্ত রয়েছে প্রতারক শাহেদের ক্ষমতা। ব্যক্তিগত গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার। সঙ্গে গানম্যান নিয়ে চলতেন শাহেদ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি বিলবোর্ডে সাঁটিয়ে দিতেন হাসপাতালের সামনে। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের, তোফায়েল আহমেদ, হানিফ, সেনাপ্রধান, র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজির, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহীদুল হকসহ সরকারের এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নেই যার সঙ্গে শাহেদের ছবি নাই। এছাড়া সাংবাদিক পাড়ায়ও রয়েছে তার পদাচারণা।

দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শাহেদের এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের কথা  জানতো সাংবাদিকরা। এমনকি করোনা টেস্টের নামে ভুয়া রিপোর্ট কাণ্ডেও জড়িত ছিলেনে একাধিক সাংবাদিক। অনুসন্ধান করতে গিয়ে নাম উঠে এসেছে সাংবাদিক নঈম নিজাম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শাবান মাহমুদ, অমাদের সময় ডটকমের নাইমুল ইসলাম খান, আনন্দবাজার পত্রিকার  সাংবাদিক অঞ্জন রায়সহ একাধিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের।

জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি আনা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে সাংবাদিকদের বিশেষ একটি টিম কাজ করেছে। এই ভুয়া  টেস্টের নামে যে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে তার একটি ভাগও সাংবাদিকদের দেওয়া হতো। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েও শাহেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বহু টাকা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহেদের সাথে সাংবাদিক মহলের যে ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের সাথে শাহেদের সৌহার্দ স্পষ্ট।

দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পাওয়ার পর আনন্দবাজার পত্রিকার  সাংবাদিক অঞ্জন রায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে শাহেদের সাথে মতবিনময়ের ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। পরে রিজেন্ট কাণ্ড ধরা পড়লে স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন এই সাংবাদিক। শুধু তাই নয় এই অঞ্জন কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে খয়রাতি বলে প্রতিবেদন প্রকাশসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারনে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বহুবার।

এদিকে শাহেদের সাথে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী, এমপিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের সব নেতারা। এর আগে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যুবলীগের কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক তোপের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ক্যাসিনো সুবিধাভোগী ছিলো শতাধিক সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। তাই  বাধ্য হয়ে শুদ্ধি অভিযানের নামে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আন্য কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। সেই প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসেই অসামাজিক নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে যুব মহিলা লীগের একজন নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল।

সমালোচকরা বলছেন, ক্যাসিনো কাণ্ড থেকে শুরু করে রিজেন্ট কাণ্ড সব খানেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি সুবিধাভোগী কিছু সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা। তাই না হলে একজন অপরাধী দিনের পর দিন এভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে না। তারা বলছেন, যেসব ‍মুঠো কয়েক সাংবাদিক অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদেরও আইনের আওয়াতায় নিয়ে আসতে পারলে সাংবাদিকরা নীতি নৈতিকতার বিষয়ে আরও বেশি সোচ্চার হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com