জম্মু ও কাশ্মিরে নতুন রাজনীতির অলীক স্বপ্ন

0

জম্মু ও কাশ্মিরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের একটি চাতুর্যপূর্ণ কৌশল ছিল এই যে কেন্দ্রের জাতীয়তাবাদী সরকার রাজ্যটিতে একটি নতুন গণমুখী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তাদের কথা ছিল, প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো জরাগ্রস্ত ও অপ্রতিনিধিত্বশীল হয়ে পড়েছে।

কাশ্মিরে ভারত সরকার দুই ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছ। রাজ্যটিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া। আর তা করা হয়েছে দীর্ঘ দিনের কৌশল অবলম্বন করে শীর্ষ নেতাদের বন্দী করা। আর অনির্বাচিতদের সামনে হাজির করা, যারা রাজ্যের জনসাধারণের কাছে নয়, বরং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাবদিহিতা করবে।

কিন্তু একটি প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না তা হলো ভারত সরকারের ভাষায় এসব রাজনীতিবিদ অনেক আগেই তাদের মেয়াদ হারিয়ে ফেলেছেন এবং লোকজন আর তাদের কথা শোনে না, তাহলে কেন তাদের এত দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। সম্ভবত এটিই রাজ্যটির সবচেয়ে কঠিন গণতান্ত্রিক উদ্বেগ।

ভারত সরকার কেবল বাইরের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিকেই যথার্থ মনে করে, অন্যদের এখানে জায়গা দিতে রাজি নয়।

কাশ্মিরে কী হতে পারে। বেশির ভাগ যৌক্তিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, দমন-পীড়ন সেখানে অব্যাহত থাকবে, লোকজনকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হবে।

ঘটনাপ্রবাহের আলোকে মনে হচ্ছে, সরকার গুজরাটে যে কায়দায় এগিয়েছিল, এখানেও একই নীতি অনুসরণ করে পশ্চাদপদতার কথা বিরামহীনভাবে প্রচার করে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এই প্রচারণার অংশ হিসেবে মূলধারার রাজনীতিবিদদেরই সবকিছুর জন্য দায়ী করা হবে।

সরকার তার লক্ষ্য পূরণে সম্ভবত দুটি পথ বেছে নেবে। একটি হলো উচ্চ পর্যায়ে তাদের মনোভাবাপান্ন নেতাদের সামনে নিয়ে আসা। আরেকটি হলো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে তাদের পছন্দের লোকদের দায়িত্বশীল পদে বসিয়ে দেয়া। আর সবার উপরে থাকবে অনির্বাচিত ব্যক্তি।

তবে তা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি তরুণ সাহসী সরপঞ্জ অজয় পন্ডিতা ভারতির নিহত হওয়ার ঘটনায়। 

তাছাড়া সরকার হিন্দু কাশ্মিরি পণ্ডিতদের সেখানে ফিরিয়ে আনার যে পরিকল্পনা করছে, সেটিও কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

আবার কাশ্মিরি পণ্ডিতদের কয়েকজন নেতা যে অভিযোগটি করেছেন, তার জবাব ক্ষমতাসীন দলের কিভাবে দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তারা বলছেন যে ২০১১ সালে আদমশুমারির ভিত্তিতে সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। তারা বলছেন, ওই সময়ের আগেই তারা উপত্যকা ত্যাগ করেছেন।

অত্যন্ত চিন্তাপ্রবণ ও দার্শনিক কাশ্মিরিরা প্রায় এক বছর ধরে তাদের জীবনের ওপর ঝুলে থাকা হতাশার কালো মেঘ থেকে আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা গ্রহণ করা শিখেছে।

এটা হয়তো স্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে পারে। দিল্লির ডানপন্থী প্রশাসন হয়তো মনে করতে পারে কাশ্মিরিদের জন্য এটিই স্বাভাবিক অবস্থা। কিন্তু নাগাদের মতো তারাও কখনো এ অবস্থা নীরবে মেনে নেমে না। তারা মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসন চায় সমঅংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com