বিএনপির জন্ম দিয়ে ইতিহাসে অমর জিয়া

0

কিছু অন্ধ, কিছু কানা, বদলোক আছে যারা এমনভাবে কথা বলে যে, মনে হয়, ১৫ই আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পরপর জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং বিএনপি প্রতিষ্ঠার আয়োজন করে ছিলেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্ষমতা নিয়েছিলেন তারই মন্ত্রীসভার লোকজন।
অনেকেই বলেন, জেনারেল জিয়া, আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে মুছে দিতে চেষ্টা করেছেন এবং সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি আওয়ামী বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং এবং বাকশাল ছাড়া অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ছিল না। জেনারেল জিয়া বরং আওয়ামী লীগকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিয়ে পুনর্জন্ম পেতে চাচা/ মামার মতোই ভূমিকা রেখেছিলেন।
অনেকেই বলেন সেনা ছাউনিতে বিএনপির জন্ম হয়েছে। কথা সত্য। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতারই রাজনৈতিক দল গঠনের আগে একটা পরিচয় থাকে। তাই বলে কি আমরা বলি, ওমুক সংগঠন বটতলায় তৈরি হয়েছে, ওমুক সংগঠন কলেজে তৈরি হয়েছে বা ওমুক সংগঠন জমির দালাল তৈরি করেছে? যদি তা বলা হয়ও, তাতে অসম্মানের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। এটা বিএনপির জন্য গর্বের যে তাদের প্রতিষ্ঠাতা একজন বীর যোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রামী সেনানায়ক ছিলেন।
কিছু দুষ্টুলোক এটি বলতে চায় যে, জেনারেল জিয়া বাংলাদেশে আবার পাকিস্তানপন্থী-ধর্মমুখী রাজনীতি শুরু করতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, জিয়া বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং তারা যা চেয়েছে বাংলাদেশে সেই ভাবধারার রাজনীতিরই বিকাশ ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে যাননি। আর এ কারণেই তিনি এই দেশের মানুষের নয়নমণি হয়ে উঠেছিলেন।
অভিযোগের মতো করে বলা হয়, জিয়া অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং সে কারণেই ক্ষমতা দখল করেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতিতে নেমেছেন। সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল একটি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই জনযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সবাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই করেছেন। মেজর জিয়া নিজে থেকেই বিদ্রোহী হয়েছেন এবং যুদ্ধ শুরু করেছেন। একই কাজ খালেদ মোশারফ, তাহের, সফিউল্লাহ, মঞ্জুররাও করেছেন। এঁদের সবার রাজনৈতিক চিন্তা যার যার মতো করেই স্বচ্ছ ও দৃঢ় হয়ে দানা বেঁধে উঠেছিল। কিন্তু এঁদের মধ্যে কর্নেল তাহেরই কেবল সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল ও বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন এবং প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছিলেন। একই সাফল্য পেয়েছিলেন খালেদ মোশাররফও। তিনিও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন।
অন্য দিকে জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় পদচ্যুত ও বন্দী হয়েছিলেন। এবং রাষ্ট্রের চরম সংকটের মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈন্যদের ভালবাসায় তিনি জীবন ফিরে পেয়েছিলেন এবং তাদের সহযোগিতা, নিজের সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে সেদিন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পুনরায় ফিরে পেয়েছিলেন এবং দেশকে ভয়ঙ্কর এক পরিণতির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। এরপর জেনারেল জিয়া যা কিছু করেছেন তা দেশের মঙ্গলের জন্য করেছেন। এবং দেশের মঙ্গলের জন্য তাকে অসংখ্য ষড়যন্ত্র মুকাবিলা করে এগুতে হয়েছে, নিজের ও দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক নিষ্ঠুর ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এবার আমার কয়েকটি মানবিক জিজ্ঞাস। ১৫ই আগস্টের পর জেনারেল জিয়ার ভূমিকা কী হওয়া উচিত ছিল? শফিউল্লাহর মতো বিদেশ চলে যাওয়ার রাস্তা করা? খালেদ মোশারফের মতো বিদ্রোহ করা? তিনি যা করেছেন, সেনা উপপ্রধান ও সেনাপ্রধান হিসেবে সেটিই কি সবচে স্বাভাবিক ও সঙ্গত কাজ নয়? উনি তো ক্ষমতায় থাকা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠদের প্রতি কোনো বিদ্রোহাত্মক আচরণ করেন নি। কোনো ষড়যন্ত্র করার প্রয়োজনও তার পড়েনি। জেনারেল শফিউল্লাহ আনুগত্যের শপথ নেওয়ার পরও যখন সরকার তাকে সরিয়ে দিয়েছে তখন উপপ্রধান জিয়া স্বাভাবিকভাবে সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছেন এবং অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
৭ই নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া জীবন ফিরে পাওয়ার পর উনার কী করা উচিত ছিল? উনি কি খালেদ মোশারফ বা অন্য কারও হাতে নিহত হওয়ার জন্য হাত তুলে বসে থাকলে ভাল হতো? না কি ভাল হতো কর্নেল তাহের ও জাসদকে ক্ষমতা দখলে সহায়তা করা? যদি উনি এর যে কোনো একটি করতেন তাহলে যে আবারও তার জীবন ঝুঁকিতে পড়তো না তার নিশ্চয়তা কি? সুতরাং জিয়ার হাতে এক মাত্র যে বিকল্প ছিল, নিজের জীবন রক্ষার জন্য হলেও নিজের হাতে ক্ষমতা সংহত করা। উনি তাই করেছেন। এবং উনি নিজেকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রক্ষা করেছেন। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের অনেকেরই রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও আকাঙ্ক্ষা ছিল কেবল জিয়াই ভাগ্যক্রমে তার বিকাশ ঘটাতে পেরেছিলেন।
জেনারেল জিয়ার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ছিল বলেই বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের পর বাকশালের নেতৃত্ব তিনি দখল করতে যান নি, যাননি আওয়ামী লীগকে পুনর্জন্ম দিয়ে তার নেতা হতে। দেশের সাধারণ মানুষের অভিপ্রায় তখন তেমন ছিল না। মানুষ যেমন চেয়েছে জিয়া তেমনটিই করেছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্ম দিয়ে জিয়া দেশবাসীকে একটা উদার গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল উপহার দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে গেছেন।
দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার আজ ৩৯ তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে অশেষ শ্রদ্ধা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com