বাউল রণেশ ঠাকুরের মন কি জুড়া লাগবে ? টার্গেট কেন বাউল শিল্পীরা ?
সমাজের ভদ্র এবং নীরব প্রকৃতির মানুষ তাঁরা। আধ্যাতিœক চর্চায় মগ্ন থাকেন সব সময়। অত্যন্ত সাদামাটা জীবনের সাথেই পরিচিত। তাঁরা দামী দামী টুপিও পড়েন না আবার দামী দামী পাঞ্জাবীও পড়েন না আবার ধর্মে লেবাস পরে পবিত্র শিক্ষালয় মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষনও করেন না কিংবা নারী কেলেংকারীর সাথেও জড়িত না। তাহলে তাঁরা করেনটা কি ? কেন তাঁেদর উপর হামলা নীপিড়ন ? বাউল সম্প্রদায় আমাদের একটি আদি ঐতিহ্য। বাউলের একতারার সুরই উদ্বেলিত করেছে আমাদের কিষাণ-কিষাণীর মন। ক্লান্ত কৃষকের মনে একটু তৃপ্তি আর প্রশান্তি দিয়েছে বাউলে ধরাজ কন্ঠের গান। বিনোদিত করেছে গ্রাম বাংলার অগনিত মানুষকে। বাউলেরা গানের মাধ্যমে খোঁজেন তাঁর ¯ সৃষ্টিকর্তাকে। সাধক বাউলরা নিজস্ব দর্শন সৃষ্টিতে বড় দার্শনিক। বাউলের গানে পাওয়া যায় সৃষ্টির রহস্য। হয়তবা আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বাউলেরা উপেক্ষিত। সময়ের শ্রোতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের হাওয়া বইছে সঙ্গীত ভূবনে। কিন্তুু বাউলের খুঁটি উপরে যাবে না বাংলা সংস্কৃতি থেকে। পৃথিবী যতদিন থাকবে বন্ধ হবে না বাউল চর্চা। মুছতে পারবে না লালনকে-মুছতে পারবে না আব্দুল করিমকে-মুছতে পারবে না ক্বারী আমীর উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস বয়াতী,কাঙ্গালিনী সুফিয়া, মমতাজ সহ অগনিত বাউলদের। বাউল সাধকরা শুধু বিনোদনের খোরাক হয়েই বিচরন করেন না তাঁদের প্রতিটি কথায়-গানে-ছন্দে বলে যান খোদা প্রেমের কথা। আজ প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছেন বাউলেরা। মৌলবাদী গোষ্ঠীরা ধর্মের অনুভুতির দোহাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাদের সঙ্গীতালয়,হামলা করছে যত্রতত্র, হত্যা করা হচেছ বাউলদের। দেশের কিংবদন্তী বাউল সম্্রাট আব্দুল করিমের আস্তানায় ২০১০ সালে হামলা করা হয়েছিল। হামলা হয়েছিল লালনের অনুসারীর আস্তানায়। লালন উৎসবেও হামলা হয়েছে। এভাবে অনেক বাউলদের আস্তানায় হামলা হয়েছে বছরের পর বছর। ধর্মবিরোধী প্রচারনার অভিযোগে অনেক বাউলকে ধরে চুল দাড়ি কেটে দেয়া হয়েছে,আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বাউলদের আস্তানা।নিপীড়িত নির্যাতিত বাউলদের পক্ষে প্রশাসন থেকে কোন সময়ই শক্ত হাতে কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো বাউলদের জেলে পুরে রাখা হয়েছে। বাউলদের নির্যাতনের প্রতিবাদের অন্য শিল্পী অঙ্গনের মানুষদেরকেও সাহসী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাউল চর্চার অন্যতম জেলা সুনামগঞ্জের কিংবদন্তী বাউল স¤্রাট আব্দুল করিমের একনিষ্ট শিষ্য রনেশ ঠাকুরের ঘর গত ১৯শে মে গভীর রাতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এটা শুধুই ঘর ছিল ? না এটা নিছকই একটি ঘর ছিল না এটা ছিল একটি সংগীতের পাঠশালা, যে পাঠশালা তৈরী হয়নি ইটে ঘেরা লোহার রড দিয়ে। এটা তৈরী হয়েছিল মাটি-বাঁশ-টিন দিয়ে। যেটাতে মিশেছিল বাউল রমেশের প্ররিশ্রমের ঘাম আর সংগীত মিশ্রিত ভালবাসা। এই ঘর কোন লিল্লাহ্রর টাকায় তৈরী হয়নি। আগুনের লেলিহান শিখায় শুধু রমেশ ঠাকুরের ঘরই পুরে ছারখার হয়নি। পুরে গেছে যতেœ গড়া দোতরা, বাদ্যযন্ত্র, রাতদিন জেগে জেগে লিখা গানের বই, সংগ্রহ করা বাউল সমগ্র বাউল গানের অনেক বই। একজন গীতিকারই একমাত্র জানেন একটি গান লিখতে তাঁর কত পরিশ্রম আর মেধা খরচ হয়। একটি প্রিয় বাদ্য যন্ত্র একজন শিল্পীর কাছে সন্তানের মত প্রিয় । একটি গানের পান্ডু লিপি তাঁর জীবনের চাইতেও প্রিয়। শিল্পী চলে যান পৃথিবী ছেড়ে কিন্তুু এই রেখে যাওয়া স্ম¥ৃতি গুলো গানের সাথেই থাকে কালের সাক্ষী হয়ে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হল ঘর,বাদ্য যন্ত্র,পান্ডু লিপি সবই পুড়ে গেছে এগুলো হয়ত আবার তৈরী করা সম্ভব । কিন্তুু সবচেয়ে বড় জিনিস যা ভেঙ্গেছে সেটা হল শিল্পীর মন । যা সহজে কি জোড়া লাগবে ? একমাত্র রনেশ ঠাকুরই শুনতে পাচ্ছেন তাঁর ভাঙ্গা মনের আকুঁতি আর ঘোঙ্গানীর শব্দ। সব কিছু স্বাভাবিক হলেও রনেশ ঠাকুর হয়তবা তাঁর মনকে আর আগের মত স্বাভাবিক করতে পারবেন না কখনওই। সংগীত সেটা ছেড়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে কখনওই সম্ভভ হবেনা কিন্তু সদা একটি ভয় একটি আতঙ্ক বিরাজ করবে তাঁর মনে। এটাই কি একজন সংগীত পাগলের পাওয়া ?পরিশেষে ধন্যবাদ জানাই স্থানীয় প্রশাসনকে রনেশ ঠাকুরের ভাঙ্গা মন জোড়া লাগাতে না পাওরলেও শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। আর বলতে চাই- এই বাউল অঙ্গন থেকেই কৃতকার্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন বাউল স¤্রাজ্ঞী মমতাজ। বিনীত অুনুরোধ সংসদে দাঁড়িয়ে বাউলদের উপরে নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন-বাউলদের সুরক্ষার জন্য আইন করুন। বার বার যেন ধর্মের দোহাই দিয়ে বাউলদের উপর অত্যাচার না হয়।
লেখক: আরিফ মাহফুজ,যুক্তরাজ্য থেকে ।