কেমন ছিল ১০০ বছর আগে বাঙ্গলীদের ঈদ ?
আমাদের ঈদ -অর্থাৎ বাঙ্গলীদের ঈদ। সিয়াম সাধনার পবিত্র রমাজন মাসের শেষ দিকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের প্রস্তুুতি নেয়া। এর ব্যতিক্রম নয় ঈদুল আযহাতেও । এই দুটোই আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোজার ঈদের প্রস্তুুতিটাই ভিন্ন রকম। কাপড় কেনা, চাঁনরাত-ঈদের চাঁদ দেখা গেল কি না ? আগামী কাল ঈদ হবে কি না ? এর পর ঈদের দিনের মজাই আলাদা। এই ঈদদ্বয়কে নিয়ে যদি ১০০ বছর পিছনে যাই তাহলে কেমন ছিল বাংগালী মুসলমানদের ১০০ বছর আগের ঈদ ?১০০ বছর আগে বাংলায় ছিল বৃটিশ শাসন। তাই বাংলায় মুসলমানরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও বৃটিশদের রাজত্বের কারনে বাংলায় ১ম বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে খ্রিসমাস ডে‘ পালন হত। কারন বৃটিশরা খ্রিষ্ট্রান ধর্মের অনুসারী ছিল। আর ঐ সময়টায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছিল মুসলমানদের থেকে শিক্ষার দিক থেকে বেশী এগিয়ে তাই দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালন হত হিন্দুদের দুর্গাপূজা। হিন্দুদের আধিপত্যের কারনে ঝাঁকঝমকের দিক থেকে দুর্গাপূজাই ছিল আকর্ষনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। বৃটিশ শাসকরা ইচ্ছা করেই মুসলমানদের ঈদ থেকে বেশী গুরুত্ব দিত হিন্দুদের পূজোকে। এটা ছিল বৃটিশদের ইসলাম বিদ্বেষ এর একটি কারন। ঈদের ছুটি এবং পূজোর ছুটিতেও বৈষম্যের শিকার ছিল মুসলমানরা। তৎকালীন সময়ে মুসলমানদের পিছনে পড়ে থাকার আরেকটি প্রধান কারন ছিল মুসলমানদের অজ্ঞতা । তখনকার সময় শিক্ষার বিস্তারে মুসলমানরা পিছিয়ে থাকার কারনে বিশুদ্ধ ইসলাম সম্পর্কে ধারনার ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে অজ্ঞতাটা বেশী ছিল। তবে ১৮১৮ খ্রিষ্ট্রাব্দে ফরায়েজী আন্দোলনের পর থেকে গ্রাম অঞ্চলের অশিক্ষিত সাধারন মানুষের ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ ধারনা আসতে শুরু করে। ১৮৮৫ সালে বৃটিশ লেখক জেমস ওয়াইজ তাঁর একটি বইতে লিখেছেন বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান গ্রামের সরল এবং অজ্ঞ। প্রখ্যাত লেখকআবুল মনসুর আহমেদ তার আত্মজীবনীতে আরও লিখেছেন তাদের গ্রামাঞ্চলে ছিল না কোনো মসজিদ। সে সময় বয়স্করাও সবাই রোজা রাখতেন না। দিনের বেলা তারা তামাক ও পানি খেতেন। শুধু ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। পানি ও তামাক খাওয়ায় রোজা নষ্ট হতো না। এই বিশ্বাস ছিল তখন তাদের মনে। রোজার মাসে মাঠে যাওয়ার সময় একটা বাঁশের চোঙ্গা রোজাদাররা সঙ্গে রাখতেন। পানি বা তামাক খাওয়ার শখ হলে এই চোঙ্গার খোলা মুখে মুখ লাগিয়ে খুব জোরে দম ছাড়া হতো। মুখ তোলার সঙ্গে সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি গামছা, নেকড়া বা পাটের ঢিপলা দিয়ে চোঙ্গার মুখ কষে বন্ধ করা হতো, যাতে বাতাস বের হয়ে আসতে না পারে। তারপর আবশ্যক মতো পানি ও তামাক পান করে চোঙ্গাটা আবার মুখের কাছে ধরা হতো। খুব ক্ষিপ্ত হাতে চোঙ্গার ঢিপলাটা খুলে মুখ লাগিয়ে চুষে চোঙ্গায় বন্ধ রোজা মুখে আনা হতো এবং ঢোক গিলে একেবারে পেটের মধ্যে ফেলে দেয়া হতো। ঈদের জামাতেও লোকেরা কাছা, ধুতি পরিধান করে যেতেন।অজ্ঞতা ও কুসংস্কার তখন বাঙালি মুসলমান সমাজকে নিদারুণভাবে গ্রাস করে। মুসলমানদের এই অধঃপতন দেখে সে সময় ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা হাজী শরিয়তুলস্নাহ (১৭৮১-১৮৪০ খ্রিঃ) স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। হাজী শরিয়তুলস্নাহ দীর্ঘকাল ধরে পূর্ববঙ্গের মুসলমান সমাজ থেকে বহু অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করেন। আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে সত্তর, আশি বছর আগেও ঈদুল ফিতর বাংলাদেশে বড় কোনো ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়নি এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে। সে আমলে জীবনের আধুনিক প্রাপ্যতা, জটিলতা, কৃষিজ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি গ্রামে তখন সহজলভ্য ছিল না।তখনকার সময় বৃটিশ শাসনের কারনে ও হিন্দুদের আধিপত্যের কারনে এবং কিছু অজ্ঞ মুসলমানদের কারনে ্ইসলাম ধর্ম তথা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। আর এই ঈদগুলোর উপভোগের আনন্দ তখন মুসলমানরাও এত অনুধাবন করেনি। কেউ ঘটা করে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করত না, নতুন জামা কাপড়ের সন্ধান করত না। ঈদটা ছিল একটি সাধারন ব্যাপার মাত্র।রাজনৈতিক ভাবে যখন মুসলিম স্বাতন্্রবাদী আন্দোলন শুরু হল তখন থেকে গুরুত্ব পেতে শুরু করল মুসলমানদের ঈদ। তাঁর পর থেকে ত বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদের অবসান হল গুরুত্ব সহকারেই মুসলমানদের জাতীয় উৎসব হিসেবে চলতে লাগল ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহা।। তার পর ভারত বর্ষ থেকে পাকিস্তান-পাকিস্তান থেকে বাংলাদশ । একটি মুসলিম রাষ্ট্র । আমাদের জাতীয় উৎসব দুটি ইদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা আমরা অত্যন্ত মর্যাদর সহিত এবং আনন্দের সহিত পালন করি।(লেখাটি আমি কলামিস্ট জুবায়েল আলীর একটি লেখা থেকে বিষেøশন করে লিখেছি)লেখক : আরিফ মাহফুজ,কলামিষ্ট .যুক্তরাজ্যবর্না আ