সাংবাদিকদের জন্য নাগরিক ভাবনা আছে কি ?
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত আবার সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যান একজন কলম সৈনিক। তাঁর চিন্তা চেতনায় সত্যের সন্ধান। প্রত্যেকটি দেশ ও জাতির একটি বিশাল স্তম্ভ হচ্ছেন সাংবাদিকরা। সমাজের বিবেক,সমাজের চেতনা,প্রতিবাদী হাতিয়ার হলেন সাংবাদিক। দুই ধরনের সাংবাদিক আমাদের মিডিয়ায় পরিলক্ষিত হয়, একধরনের হলেন-যাঁরা একাডেমিকলি ডিগ্রী অর্জন করে জার্নালিজম এ পেশাগত ভাবে আসেন আর একশ্রেনীর সাংবাদিক আছেন যাঁরা পড়ালেখার পাশাপাশি শখের বশত চর্চা করতে করতে এক সময় একজন দক্ষ সংবাদ কর্মী বা সাংবাদিকে রুপান্তরিত হন। আবার আরেক ধরনের সাংবাদিক এর উপস্থিতি সমাজে দেখা যায় যারা হঠাৎ পরিচিতি লাভ করার জন্য সমাজে সাংবাদিক রুপে উদিত হন। যাঁরা আদৌ সাংবাদিকতার স জানেন কি না তা নিয়ে প্রচুর সংশয় থাকে। এঁদের কারনে পেশাদার সাংবাদিকদের অনেক সময় আবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়। বিশেষ করে প্রবাসে এরকম আকস্মিক সাংবাদিকের সংখ্যা খুব বেশী চোখে পড়ে। প্রবাসে আবার মাংলা মিডিয়ায় এরকম অখ্যাত সাংবাদিক তৈরীর জন্য কিছু টেলিভিশন মিডিয়া দায়ী। যেমন টেলিভিশন চ্যানেল এর খরচ বাঁচানোর জন্য অদক্ষ যে কোন কাউকে হঠাৎ করে ক্যামেরা হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিউজ করার জন্য। যার কোন ট্রেনিং নাই বা পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই। এরকম নব্য ক্যামেরা সাংবাদিকদের বেতন দিতে হয় না বা দিলেও স্বল্প। কিন্তুু এত করে চ্যানেলের নিউজ এর কোয়ালিটি আর একে বারেই থাকে না । ইদানিংকালে প্রবাসী বাংলা টেলিভিশনের নিউজ থেকে অবশ্য ইউটিউব বা ফেইসবুক সাংবাদিকদের নিউজ খুব ভাল হয়। সংবাদ পাঠেও একই জিনিস লক্ষ্য করা যায়। যাই হউক হয়ত টেলিভিশন গুলোর আর্থিক দৈন্যতার কারনেই এটা হয়।
আমার কথা ছিল সাংবাদিকদের নিয়ে। নাম মাত্র সাংবাদিকের ত আর অভাব নাই, তবে খাঁটি পেশাগত সাংবাদিকও কিন্তুু নেহাতে কম নয়। সমাজের অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক,শিক্ষক,চাকুরীজীব অধিকাংশ মানুষের কাজের প্রচারের কাজটি কিন্তুু সাংবাদিকরাই করেন। সকাল থেকে টেলিফোর রিং এর যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারেন না একজন সাংবাদিক-বিভিন্ন দলীয় নেতারা ফোন করেন -আমার অমুক মিটিং এর নিউজটির কি হল ত আমার ভাল ছবিটা গেল না কেন? যেন তাঁদের বেতনভোগী কর্মচারী একজন সাংবাদিক। সবার প্রচার প্রসারে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন একজন সাংবাদিক। সবার খবর সংগ্রহ করেন,সবার খবর প্রচার করেন। আবার সত্য প্রকাশের কারনে জীবনও দিতে হয় সাংবাদিকদের। প্রভাবশালীরা হুমকীর মুখেও রাখেন সাংবাদিকদের। কিন্তুু কথা হল যে সাংকবাদিকরা সারাক্ষন মানুষের খবর ছাপতে ব্যাস্ত সেই সাংবাদিকের খবর কে রাখে ? সাধারন সময়ের কথা বাদই দিলাম দুর্যোগময় সময়েও কিন্তুু জীবনের মায়া ত্যাগ করে একজন সাংবাদিক মাঠে কাজ করেন। নেতা,ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে যারা সাংবাদিকের প্রচারনায় নিজেদেরকে লক্ষে পৌঁছানোর জন্য মরিয়া আদৌ কি তাঁ খবর রাখেন এই সাংবাদিকদের জীবন কেমন চলে? হলুদ-দালাল সাংবাদিকদের না একটু দিনপাত ভালই চলে কিন্তুু যাঁরা সৎ এবং আদর্শবান সাংবাদিক তাঁদের জীবন কেমন চলে-একমাত্র তাঁরা নিজেরাই জানেন।
এই করোনা মহামারীতে নিজের বিপদের কথা চিন্তুা না করে দিন রাজ মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের সাংবাদিকরা। অনেকে আক্রান্তও হয়েছেন করোনায়। সাহায্য দেয়া নেয়ার ছবি তুলছেন সাংবাদিক,নিউজ করছেন টিভি ও পত্রিকায়। কিন্তুু সমাজের কোন মানুষ গুলো খোঁজ করছেন এই সাংবাদিকদের কোন সাহয্যের কোন প্রযোজন আছে কি না ? তাঁদের কি কোন নিরাপত্তার দরকার আছে কি না ? তাঁদের সুরক্ষার দরকার আছে কি না ? হয়ত কোন সাংবাদিক পেশাদারিত্বের কারনে ছুটে আসছেন করোনা ময়দানে মানুষের জন্য যুদ্ধ করার জন্যে কিন্তুু এমনওতো হতে পারে এই সাংবাদিক ঘরে রেখে এসেছেন অভূক্ত পরিবারের সদস্যদের। মধ্যবিত্ত নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে কিন্তুু আমাদের দেশের বেশীর ভাগ সাংবাদিকই বড় মধ্যবিত্ত। ঢাকা শহরের অনেক জায়গায়ই সাংবাদিকদের ঘর ভাড়া দিতে চায়না বাড়িওয়ালারা কারন তাঁরা নাকি সময় মত ঘর ভাড়া দিতে পারেন না।
এই করোনা মহামারীতে সাংবাদিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে সরকার থেকে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দুই একটি প্রতিষ্ঠান কিছু পিপিই এবং মাস্ক দিয়েছে যা সাংবাদিকদের জন্য নিতান্তই সামান্য। তাঁদেরকে সরকার থেকে বড় কোন আর্থি সহয়য়তা দেয়া হয়নি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট থাকলে তা থেকে সব সাংবাদিকরা সহযোগিতা পায়না। এখানেও দলীয়করন কাজ করে। তবে আজ প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে দেখলাম তথ্যমন্থী ঘোষনা করেছেন সাংবাদিকদেরকেও কিছু প্রণোদনা দেয়া হবে। তবে তথ্য মতে তা যথা সামান্য।।
এবার আসা যাক প্রবাসী সাংবাদিকদের কাছে। মিডিয়ার এই প্রসারিত সমযে সবদেশেই আমাদের বাংলা মিডিয়ার প্রভাব কম নয়। সবখানেই রযেছে টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ। তাঁরা অনেকেই হয়ত দ্বিতীয় জব বা পুরোনো শখের বশে এখনও সাংবাদিকতা করে যাচেছন। আবার অনেক আছেন ব্যক্তিগত অনেক সমস্য থাকার কারনে পার্ট টাইম হিসেবে কোন মিডিয়ার আন্ডারে সাংবাদিকতা করছেন। আবার কেউ কেউ মুক্তভাবে মিডিয়ায় কাজ করছেন। প্রবাসী কমিউনিটির নিউজ প্রচারে প্রবাসী এই সাংবাদিক বৃন্দের ভুমিকা অকল্পনীয়। আমার জানামতে প্রবাসী সাংবাদিক যাঁরা করোনা সংক্রমনের মধ্যে মিডিয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের সুরক্ষা বা তাঁদের সহযোগিতার ব্যাপারে কোথাও কোন ধরনের ভূমিকা বা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রত্যেক দেশে বাংলাদেশী কমিউনিটির বড় বড় নাগরিক সংগঠন রযেছে সেই সংগঠন গুলোর উচিত প্রবাসী সাংবাদিকদের সুরক্ষা কিংবা অসচ্ছল সাংবাদিকদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া এবং তাদের ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আবার প্রায় দেশে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে যেটাকে আমরা বলি প্রেস ক্লাব। প্রত্যেক প্রেসক্লাবেরই উচিত প্রকৃত সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই মহামারীতে এবং একটি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করা যাতে যে কোন মহামারী বা দুর্যোগে তাঁদের পাশে দাড়ানো যায় । প্রত্যেকটি রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের উচিত তাঁদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া কারন এই সাংবাদিকরাই হলো সবার বান্ধব। তাঁদের কারনেই সবার প্রচার-প্রসারন। সাংবাদিকদের থেকে শুধু সুবিধা নিলেই চলবে না তাঁদের নিয়ে নাগরিকদের ভাবনা থাকা উচিত।
বাংলাদেশ সকারের তথ্য মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন বর্তমান সংকটে থাকা সাংবাদিকদের আর্থি সহযোগিতা ঘোষনা করেছেন কিন্তুু প্রবাসী সাংবাদিকদের কথা কি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? প্রত্যেকটি দেশের হাই কমিশনের মাধ্যমে প্রবাসী সাংবাদিকদেরকেও সাহায্যের আওতায় আনা হউক।
কারন সাংবাদিকরা জাতির প্রতিটা সেক্টরে মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেন।
লেখকঃ আরিফ মাহফুজ, যুক্তরাজ্য থেকে।