মে ১৩, ২০২০/প্রেসবিজ্ঞপ্তি —

0

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভিডিও
প্রেসকনফারেন্সের বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।

করোনা ভাইরাসে গোটা বাংলাদেশ এখন বিপর্যস্ত। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃত্যুর হার। মাত্র দুই মাসেই ‘এশিয়ার হটস্পটে’ পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। জনতত্ত্ব-ঘনবসতি ও আক্রান্তের হার হিসাবে সংক্রমণের এ সূচক ভয়ঙ্করভাবেই স্পষ্ট। আক্রান্তের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের পেছনে থাকলেও সংক্রমণ হারে এশিয়ার অর্ধশতাধিক দেশের শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। আমরা এক অচিন্তনীয় দুর্দিন পার করছি। মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এক অজানা ভয় আর আতঙ্কে। একদিকে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয় অপরদিকে বেশুমার পরিবারে খাদ্যাভাব। চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি।

দেশে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আরো অধিক সংখ্যক মানুষকে টেষ্টের আওতায় আনা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে এমনটাই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। টেস্ট করতে না পারায় প্রতিদিনই থাকছে করোনা উপসর্গ নিয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর। সরকারের দেয়া তথ্যমতেই, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে। করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরও কি সরকারের কোনো বোধোদয় হয়েছিল ? করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকেই যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন বাংলাদেশের আদৌ কোনো প্রস্তুতি ছিল কিনা এই প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বছরব্যাপী সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটা পরিকল্পনা তৈরী করেছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গত ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি ইস্যু করে ১৮ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক আহবান করা হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিটি বিভাগের প্রধান এবং রেডিও ও টেলিভিশনের ডিজিদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৬ মার্চ ইস্যু করা ওই চিঠিতে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল যক্ষা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, অল্টারনেটিভ কেয়ার প্রচারণাসহ নানা বিষয়। প্রশ্ন হলো, ১৮ মার্চে অনুষ্ঠিত খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ে এতসব বিষয় আলোচনার জন্য স্থান পেলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি কেন আলোচনার জন্য স্থান পেলোনা ?

অথচ আমরা শুরু থেকেই সরকারকে দেশে দেশে করোনা ভাইরাসের তান্ডব সম্পর্কে সতর্ক করে আসছিলাম। প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছিলাম। জনগণকে সচেতন করছিলাম। কী কী করা উচিৎ এবং উচিৎ নয়, সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে। অথচ দেখলাম ভিন্ন চিত্র। ২০ মার্চের প্রাত্যহিক পত্রিকাগুলোতে দেখবেন, নিশিরাতের সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাহেব বলছেন, ‘বিএনপি করোনা সম্পর্কে গুজব ছড়ায়’। ২১ মার্চের পত্রিকায় ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ‘আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী’। আর ফরেন পলিসিতে ‘স্বামী-স্ত্রীর কুটনীতি’ তত্ত্বের জনক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সাহেব তো আগেই বলে দিয়েছেন ‘করোনা মারাত্মক রোগ নয়; এটা সর্দি-জ্বরের মতো’। করোনা ঝুঁকির সময় এই সরকার আতশবাজির আলোকোৎসব করলো, ভোট করলো, কোন কোন মন্ত্রী খুব কনফিডেন্টলি বললেন, ‘করোনা এদিকে আসবে না, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বললেন, ‘চীনের চেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল বানাবো’, এক মন্ত্রী বললেন, দুনিয়ায় যেকোন দেশের তুলনায় আমরাই সবচেয়ে ভালো প্রস্তুত”।

বিশ্বকে থমকে দেয়া মহামারী করোনা ভাইরাসের মতো এমন ভয়াল-বিপদজনক ঘাতক ব্যাধি নিয়ে জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার এবং তাদের মন্ত্রীদের বক্তব্য মন্তব্যের ধরণ দেখলে মনে হয় তারা এটাকেও ‘গুজব আর ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এই মে মাসেই আটক করা হয়েছে আটজন সাংবাদিককে। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, জনগণকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা রেখে কিংবা জনগণের বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। তবে এতদিন পরে এসে অবশেষে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মনে হয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা একটু আঁচ করতে পেরেছেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গতকাল ওবায়দুল কাদের সাহেব স্বীকার করেছেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেভাবে ক্রমশ: বেড়ে চলছে আক্রান্তের সংখ্যা তাতে সামনের দিকে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি।’ তারা যে করোনার চেয়েও শক্তিশালী, তাহলে এখন সেই শক্তি কোথায় গেল ? এখন কেন তারা ঘরের ভিতর বসে শুধু অসত্য ও বিভ্রান্তির ধারাবিবরণী দিচ্ছেন ?

বন্ধুরা,
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। এর উপর লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। সরকার বনিকদের সাথে আপোষ করতেই শিথিল এই লকডাউন। এতে করোনা বিস্তারের পথ আরও প্রশস্ত করা হলো। দেশজুড়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা এখনও নড়বড়ে। একদিকে যেমন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালগুলো ঠিকভাবে সেবা দিতে পারছে না, অন্যদিকে অন্যান্য জটিলতার রোগীরাও চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সচেতন সাংবাদিকগণ,
মরণঘাতী করোনা ভীতির মধ্যেই আরেক আতংক সারাদেশে ‘ত্রাণ চুরি’। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ত্রাণ চুরিতে মেতে উঠেছে। আমরা বলেছিলাম, এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণ প্রতিবাদ করলে আইসিটি আইনে মামলা করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল মিডিয়ায় প্রতিবাদী মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে চোখ তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ভয়াবহ দুর্দিনেও ক্ষমতাসীনরা দেশকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে। কিছু বন্ধ কিছু খোলা, এই বন্ধ এই খোলা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা, আয়হীন মানুষের হাতে খাদ্য ও বাঁচার উপকরণগুলো পৌঁছাতে ব্যর্থতা, ছুটি না লকডাউন তা নিয়ে ধোঁয়াসা এবং এইসবের কারণে মানুষের বাইরে আসা আর এই বাইরে আসার জন্য সরকারের সব ব্যর্থতার দায় জনগণের ওপর চাপাবার চালাকি করা হচ্ছে।

সুহৃদ সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সারাদেশে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গত একযুগ ধরে ক্ষমতাসীনদের জেল জুলুম হয়রানি ও নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার। তারপরও জাতির এই সংকটময় মুহুর্তে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি বসে নেই। ‘সতর্কতা-সহায়তা-মানবিকতা’, এই চেতনায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের আহবানে সারাদেশে চলছে বিএনপির মানবিক সহায়তা কর্মসূচি। তবে জনবিচ্ছিন্ন সরকার বিএনপির এই ইতিবাচক কাজ সহ্য করতে পারছেনা। কোথাও কোথাও আমাদেরকে যেমন ত্রাণ বিতরণে বাধা দেয়া হচ্ছে তেমনিভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপরদিকে নিরাপদ স্থানে বসে গণমাধ্যমে সরকারের মন্ত্রী ও তাদের নেতারা বিএনপির এই মহতী উদ্যোগের বিরুদ্ধে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছেন।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com