সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করুন: সরকারকে ডিইউজে

0

করোনা পরিস্থিতিতে কর্মরত সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ অনুদান প্রদান ও তাদের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। 

বুধবার (১৩মে) ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএনপিপন্থি অংশের নির্বাহী পরিষদের এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেন, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইনে কর্মরত সাংবাদিকরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর ও মফস্বল অঞ্চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করছে। ইতোমধ্যে তিনজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের পেশা, তবুও দুঃখজনকভাবে আজ তাদের অনেককে বিনা বেতনে কাজ করতে হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক এই পরিস্থিতিতেও করোনা আক্রান্ত সাংবাদিকদের জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। এই অবস্থায় সাংবাদিকদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থাসহ অন্য বিষয়গুলো কার্যকর করতে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চ্যুয়াল এ সভায় অন্যদের মধ্যে সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশেদুল হক  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সাজু, কোষাধ্যক্ষ গাজী আনোয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: দিদারুল আলম, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবুল কালাম, জনকল্যান সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর,
কার্যনির্বাহী সদস্য রফিক মুহাম্মদ ,শহিদুল ইসলাম,  খন্দকার হাসনাত করিম পিন্টু, জেসমিন জুঁই , আবুল হোসেন খান মোহন , কাজী তাজিম উদ্দিন , রফিক লিটন,  মো: আব্দুল হালিম, শামসুল আরেফিন, আলমগীর শিকদার,আবু বকর ও আবু হানফ অংশ নেন।

সভার এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, করোনা দুর্যোগে যে পেশাজীবীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা তাদের অন্যতম। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরই এ দুর্যোগে সম্মুখসমরের যোদ্ধা সাংবাদিকরা। সাধারণ ছুটি ও লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশ থেকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের মধ্য দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে করোনার বিস্তার রোধে জনমত সৃষ্টি করা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম তুলে ধরা এবং করোনা চিকিৎসার নানা দিক ও সংকটগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সাংবাদিকরা। 

সেখানে বলা হয়, বিশ্বজুড়েই করোনাকালে সাংবাদিকতার এ ভূমিকার কথা আলোচিত ও প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় যেমন বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, তেমনি সাংবাদিক ও সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যম শিল্পের সুরক্ষাতেও কোনো সরকারি প্রণোদনা/অনুদান দেয়া হচ্ছে না। অথচ করোনাকালে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ প্রচারে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

সভায় বক্তারা বলেন, রাজধানীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত তিনজন সাংবাদিক মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং দৈনিক পত্রিকার শতাধিক সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কয়েকজন এরই মধ্যে সুস্থও হয়ে উঠলে অনেকেই চিকিৎসাধীন। করোনাকালে সংবাদকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি ও উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল অনেক ক্ষেত্রেই সেটা নিশ্চিত করা যায়নি। কিছু সংবাদমাধ্যম কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ করে দিলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই তা করতে পারেনি। তেমনি মাঠের কাজে নিয়োজিতদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাকও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। উভয় ক্ষেত্রেই বিনিয়োগেরও প্রয়োজন। করোনার কারণে সংবাদমাধ্যম শিল্পে যে মহাআর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে সেটাও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতোই দেশের গণমাধ্যম শিল্প মারাত্মক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশেও ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্তত আটটি জাতীয় দৈনিকের মুদ্রিত সংস্করণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোও অশনিসংকেত দেখছে। শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ থাকা এবং সামগ্রিক অর্থনীতির সংকটের নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়েছে এ শিল্পে। ছাপা পত্রিকার কাটতি কমেছে। বিজ্ঞাপনও প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মী ও সংবাদ বিপণনকর্মী তথা হকার এ কারণে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন। গণমাধ্যম শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষ সরকারি অনুদান জরুরি। 

তারা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা গণমাধ্যমকে বাঁচানোর জন্য সাংবাদিক ও গণমাধ্যম শিল্পের জন্য বিশেষ অনুদানের দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের পাশাপাশি নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), সম্পাদক পরিষদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) ও এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও একই দাবি জানানো হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কোনো সরকারি অনুদান/প্রণোদনার ঘোষণা আসেনি। রপ্তানিমুখী খাতসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের জন্য সরকার ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও সংবাদমাধ্যম শিল্পের জন্য কোনো বরাদ্দই দেয়া হয়নি।

সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে, দায়িত্ব পালনকালে সরকারি চাকুরেরা যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা। আর কেউ মারা গেলে বীমার পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি করে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু করোনাসহ যেকোনো দুর্যোগে সম্মুখসারিতে থাকা সাংবাদিকদের জন্য কোনোরকম বীমা কিংবা প্রণোদনার ঘোষণা দেয়নি সরকার। এমনিতেই সংকটে থাকা গণমাধ্যম শিল্প করোনার অর্থনৈতিক অভিঘাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে। নিয়মিত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠানই ইতিমধ্যে কর্মীদের বেতনভাতা দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে- যোগ করেন বক্তারা। 

ডিইউজে নেতারা বলেন, এ অবস্থায় একদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের দায়িত্ব পালন করা, আরেকদিকে নিয়মিত বেতনভাতা না পাওয়ার অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। কোনো কোনো শিল্পে শ্রমিকদের বেতনভাতা দেওয়ার জন্যও সরকার সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সংবাদমাধ্যম কর্মীরা বঞ্চিত। এমন সংকটকালে সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং গণমাধ্যম শিল্প রক্ষায় আপদকালীন বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার যৌক্তিক দাবির বিষয়ে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ডিইউজে করোনায় কোন সাংবাদিক মারা গেলে তার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপুরণের  দাবি জানায়।

সভায় করোনাকালে গণমাধ্যম কর্মীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিইউজে নেতারা বলেন, করোনা যুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। এ যুদ্ধে যারা মাঠে থেকে কাজ করছেন তাদের মত সাংবাদিকরা সুরক্ষা পাচ্ছেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সাংবাদিকরা; কিন্তু তাদের ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা নেই। আবার অনেকের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনেকের বেতন দেয়া হচ্ছে না, নির্বিচারে ছাটাই হচ্ছেন অনেক সাংবাদিক। ছাঁটাই হওয়া সাংবাদিকদের পাওনাও বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা। এমন বাস্তবতায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সরকারের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া জরুরি।

সভায় বেসরকারি খাতের গণমাধ্যম কর্মীরা যেন চাকরিচ্যুত না হয়, সময় মত যেন বেতন পান এবং সুরক্ষিতভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।

সভার অপর এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, গণমাধ্যম কর্মীদের ঝুঁকি এড়াতে যে ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তা নিতে পারেনি অথবা নেয় নি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য যেসব প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল তাও হাতে গোনা দু-একটা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অনেকেই নেয়নি।

সভায় বলা হয়, সরকার বর্তমান কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোকাবিলায় শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। সংবাদপত্র শিল্পও যাতে সেই প্রণোদনা পায় তা নিশ্চিত করা উচিত। বিশেষ করে দৈনন্দিন পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সংবাদপত্র শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা বাঞ্চনীয় বলে আমরা মনে করি। দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে এখন ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়, যেখানে তৈরি পোশাক শিল্পকে দিতে হয় মাত্র ১৫ শতাংশ। সরকারের এনীতিকে আমরা ‘বিমাতাসুলভ’ বলে মনে করি। এটা কমিয়ে ফেলার বিষয়টি যৌক্তিক। নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘ দিনের। সংবাদপত্র শিল্পের স্বার্থে এটা এখনই প্রত্যাহারে ঘোষণা দেয়ার দাবি জানানো হয় সভায়। 

সভায় বলা হয়, বিজ্ঞাপনের ওপর মূল্য সংযোজন করে ছাড় দেওয়া হলে বেসরকারি খাতের বিজ্ঞাপনদাতারা কিছুটা হলেও ফিরতে পারেন। এছাড়াও সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে,গত প্রায় চার বছর ধরে যেসব সংবাদপত্রে মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন। সংকটের কালে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা উপেক্ষা কিংবা তার স্বাধীনতা খর্ব হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এখন প্রতিনিয়ত এ ধরণের ঘটনা ঘটছে।

সভার অপর এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য ইতোমধ্যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের এই সংকটকালীন সময় দায়িত্ব পালনকালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন-পুলিশ ও প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়োজনমতো ঝুঁকি ভাতা পাবেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যু হলে তার পরিবার পদমর্যাদা অনুসারে এককালীন বিশেষ অর্থ সহায়তা পাবেন। থাকবে বিমার ব্যবস্থাও। এরকম একগুচ্ছ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এতে অনেকের মধ্যে দায়িত্বপালনের ভীতি কাটবে। ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পাবেন এটা অস্বাভাবিক নয়। 

সাংবাদিক নেতারা বলেন, কিন্তু সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যমের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য করোনা পরিস্থিতিতে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। নেই প্রণোদনা। নেই তাদের পেশাগত নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের জন্য নেই আর্থিক, সামাজিক, নিরাপত্তা। মানুষের কাছে দেশের বিদেশের সর্বশেষ খবর তৈরি করে পাঠক –শ্রোতাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেন যে মিডিয়া কর্মীদের ব্যাপারের সরকারের এ উদাসিনতা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমাজের নানা অসঙ্গতি যারা তুলে ধরে সুন্দর একটি সমাজ গড়ে তুলতে যারা কাজ করে যাচ্ছেন সে সাংবাদিকদের প্রতি অবজ্ঞা শুধু অমানবিকই নয় লজ্জারও।

তারা আরও বলেন, ‘সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ স্তম্ভের মর্যাদা আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রকৃত চিত্র এমন যে, গণমাধ্যম কর্মীরা যেনো আজ এক ধরনের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা সেটা নেই বললেই চলে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবী এখনো অপূর্ণই রয়ে গেলো। কখনো সাংবাদিকরা নিরাপত্তার সুযোগ ভোগ করতে পারেনি। ক্ষেত্র বিশেষ যে নাগরিক অধিকার পাওয়ার কথা একজন সংবাদকর্মীর, তাও আজ উপেক্ষিত।

সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে:
১. গণমাধ্যমে ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে,পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই সংবাদকর্মীদের বকেয়াসহ চলতি মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।
২. করোনাকালে চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। 
৩.করোনা মহামারির সময়ে প্রত্যেক গণমাধ্যম মালিককে কর্মরত সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. কোনও সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গণমাধ্যম মালিককে বহন করতে হবে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত সংবাদকর্মীর পরিবারের দেখভাল করতে হবে।
৫. করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনও সংবাদকর্মী মৃত্যুবরণ করলে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রয়াত সংবাদকর্মীর পরিবারকে নগদে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা এবং সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. করোনাকালে সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ আর্থিক অনুদান,ঝুঁকি ভাতা ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
৭. সাংবাদিকদের জন্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে
৮. দেশের এই দূর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে তথ্য প্রবাহ সচল রাখতে গণমাধ্যমের সংকটের কথা বিবেচনা করে গণমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ অনুদান দিতে হবে।
৯. বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর কর‍তে হবে। বিশেষ করে গত চার বছর ধরে যে সব সংবাদপত্রে মোবাইল ফোন কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অঘোষিত নিষধাজ্ঞা চলে আসছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিওসহ সব ধরনের গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা।
১০. সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন, রেডিওসহ সব গণমাধ্যমে বেসরকারি খাতের বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল দ্রুত পরিশোষের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. গণমাধ্যমের সব কর দুই বছরের জন্য স্থগিত করতে হবে এবং টেলিভিশনের জন্য স্যাটেলাইট ফি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখতে হবে।
১২.বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট মওকুফ করতে হবে।
১৩. সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ লক্ষ্যে মিডিয়ার স্বাধীনতা বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৪. প্রবীণ সাংবাদিক, দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ,ফটোসাংবাদিক শহিদুল ইসলাম কাজলসহ গ্রেফতারকৃত সকল লেখক সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজি, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
১৫. বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হবে।
১৬. পক্ষপাতহীনভাবে বেকার সাংবাদিকদের  তালিকা করে অবিলম্বে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
১৭. বয়স্ক, অসচ্ছল, সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য রেশন কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হোক। এ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব মেনে নেয়া হবে না ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com