রাজা সালমানের ৫ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল থেকে উধাও ২৩,৩০০ কোটি ডলার
সৌদি আরব অর্থ কর্তৃপক্ষ বা এসএএমএ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্বীকার করা হয়েছে যে, রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থেকে ২৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ উধাও হয়ে গেছে।
ইয়েমেন যুদ্ধ, পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকার কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় ব্যাপক অস্ত্র-সম্ভার ক্রয় এবং এনইওএম নামে পরিচিত ভবিষ্যৎ-নগরীর মতো বিতর্কিত ‘আত্মগর্ব প্রকল্প’ খাতের খরচের যোগান দিতে গিয়ে বিশাল অংকের এ অর্থ নজিরবিহীন ভাবে সৌদি ধনভাণ্ডার থেকে উধাও হয়ে যায়।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ৮৪ বছর বয়সী রাজা সালমান সৌদি আরবের সিংহাসনে বসেন। একই বছরে সৌদি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার দুইশ কোটি ডলার। কিন্তু ২০১৯ সালে একই ভাণ্ডারে রয়েছে মাত্র ৪৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ পাঁচ বছরে এ ভাণ্ডার থেকে উধাও হয়ে গেছে ২৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। গড়ে প্রতিবছর এ অর্থ-ভাণ্ডার থেকে চার হাজার ছয়শ ৬০ কোটি ডলার কমেছে।
গত পাঁচ বছরে সৌদি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থেকে যে পাহাড় পরিমাণ অর্থ হ্রাস পেয়েছে তা এমইএনএ নামে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির সমপরিমাণ। পরিমাণের দিক থেকে তিউনিশিয়ার বাৎসরিক বাজেটেরও ১৮ গুণ বেশি এ অর্থ।
সালমান ক্ষমতায় বসার মাত্র তিন মাসের মাথায় ইয়েমেনের বিরুদ্ধে একতরফা আগ্রাসন শুরু করে রিয়াদ। আরবের এ দরিদ্র দেশটির বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট গত পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত যুদ্ধের পরও সেখানে বিশেষ ফয়দা হয় নি তাদের। কার্যত ইয়েমেন যুদ্ধের চোরাবালিতে বেশ ভালো ভাবেই আটকে গেছে রিয়াদ। পিতা ক্ষমতায় বসার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদটি বাগিয়ে নেন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি ক্ষমতার প্রধান নেপথ্য নায়ক হিসেবে সালমানকে গণ্য করা হয়। ইয়েমেন যুদ্ধও চলছে তারই নির্দেশে।
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সৌদি মাথাপিছু আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল, ২৫ হাজার দুইশ ৪৩ ডলার। কিন্তু ২০১৮ সালে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার তিনশ ৩৮ ডলারে।
বর্তমানে তেল-বাজারের বিপর্যয়ের আগেই সৌদি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় থেকে হাওয়া হয়ে যায় ব্যাপক অর্থ। করোনার বিশ্ব মহামারি থেকে সৃষ্ট তেল-বাজারের বিপর্যয় সৌদি আরবের জন্য আরও অনেক বড় আর্থিক দুর্গতি বয়ে আনবে বলেই নিশ্চিত আশংকা করা হচ্ছে।