করোনাকালে মাঠে নেই জনপ্রতিনিধিরা

0

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে সারা দেশের মতো খুলনায়ও স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। কর্মহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধারণ মানুষগুলো। জমানো টাকা শেষ হতেই পরিবারে পরিবারে দেখা দিয়েছে আর্থিক অনটন। খাবার জোটাতে না পেরে এসব পরিবারের সদস্যরা তিন বেলার পরিবর্তে দু-এক বেলা খেয়ে দিন পার করছে। আর সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্ন মধ্যবিত্তরা। তারা না পারছে অন্যের কাছে হাত পাততে, আবার না পারছে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে। আপৎকালীন এ সংকট সামাল দিতে সরকার ও শাসক দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও মাঠে নেই জনপ্রতিনিধিরা। এরই মধ্যে আবার অভিযোগ উঠেছে, যতটুকু যা ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তার সবই দলীয় ও চেনামুখ দেখে।

করোনা আতঙ্কে খুলনায় গত ২৬ মার্চ থেকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে নগরীসহ উপজেলাগুলো। রিকশা ও ইজিবাইক চলাচলও একেবারে সীমিত। বন্ধ হয়ে গেছে চায়ের স্টলসহ অন্যান্য দোকানপাট। লকডাউনের কারণে খোলা যাচ্ছে না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। সেই সঙ্গে শ্রমিকের কাজও বন্ধ। বেসরকারি মিল কারখানা বন্ধ থাকায় মিলছে না মজুরি। খুলনায় একজন মেয়র, ছয়জন সংসদ সদস্য, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নয়জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩১ জন কাউন্সিলর ও ৬৮ জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট ১১৬ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। তারা সবাই জনগণের প্রতিনিধি হলেও হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই করোনা সংকটে মাঠে নেই। দেশব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্কের পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব নিয়ে সাধরণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা জেলা প্রশাসন শুরু করেছে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ। পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও র‌্যাব-৬ কর্মসূচি আকারে পালন করেছে খাদ্য বিতরণ। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ ও ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হলেও তা দেওয়া হচ্ছে মুখ চিনে চিনে। যারা সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির কাছের লোক, তারাই নামের তালিকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। অভিযোগ উঠেছে, দলীয় লোক না হলে তাদের ভাগ্যে জুটছে না ত্রাণ।

নগরীর লবণচরা এলাকার বাসিন্দা সুজন আহমেদ বলেন, ‘ভোট এলেই এমপি-কমিশনার প্রার্থীরা রাতের ঘুম হারাম করে দেয়। তখন কত মিষ্টি করে বিপদে পাশে থাকার কথা বলে। এখন এ বিপদে কারও খবর নেই। আমরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছি, তা কেউ দেখতে আসেনি। ত্রাণও পাইনি। তারা এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে।’

দাকোপ উপজেলার বাজুয়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান সবাই হারিয়ে গেছে। সরকার থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তাও আমরা পাচ্ছি না। যার সঙ্গে যার খাতির বেশি তারাই পাচ্ছে। আর এমপি-চেয়ারম্যানরা ব্যক্তিগতভাবে দেবে না বলে এলাকায় আসছে না।’

জনপ্রতিনিধিদের ভোটারদের পাশে না থাকার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ সামছুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হলো কোনো অসহায় মানুষ না খেয়ে থাকবে না। মুখ চিনে কাউকে ত্রাণসামগ্রী দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই এ ধরনের কাজ করছে বলে আমরা শুনেছি। তাদের সতর্ক করা হচ্ছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com