ইরানবিরোধী নৌজোট গঠনের মার্কিন উদ্দেশ্য ও তেহরানের কঠোর প্রতিক্রিয়া
পারস্য উপসাগর, হরমুজ প্রণালি ও ওমান সাগরে মার্কিন সেনা উপস্থিতিকে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে ইরান। একইসঙ্গে তেহরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, মার্কিন সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর যেকোনো বেআইনি ও উসকানিমূলক তৎপরতার কঠোর জবাব দেয়া হবে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ (সোমবার) এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাগরে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা বিধানের অজুহাতে আমেরিকার নেতৃত্বে কথিত নৌজোট গঠন করা ছিল একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ যা পারস্য উপসাগরের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলেছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পারস্য উপসাগরে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন এবং তাদের ঔদ্ধত্য ও বিপজ্জনক চলাফেরার কারণে এ অঞ্চলে আইন অমান্য করার প্রবণতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলে আমেরিকার বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি ইরান বহুবার বিশ্ব সমাজকে অবহিত করেছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে আমেরিকা হরমুজ প্রণালীতে ইরান বিরোধী নৌ জোট গঠনের কথা বলে আসছে। যদিও হোয়াইট হাউজ দাবি করেছে, এ অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা ও আর্থ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করাই নৌজোট গঠনের উদ্দেশ্য। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নৌজোট গঠনের পেছনে আমেরিকার বেশ কিছু অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, আমেরিকা এ অঞ্চলে ইরানভীতি ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, হোয়াইট হাউজ ইরানবিরোধী নৌজোট গঠনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার পথে বাধা সৃষ্টি এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। আমেরিকার তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরাপত্তা দেয়ার নামে আরব দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
আমেরিকা এমন সময় ইরান বিরোধী এ ধরণের তৎপরতা চালাচ্ছে যখন সবাই স্বীকার করে বিশ্বের অন্যত্র জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় ইরানের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ইরান মনে করে বিদেশিদের উপস্থিতি ছাড়াই কেবল এ অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এ ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। ইরানের এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান এ অঞ্চলে কোনো উত্তেজনা ও সংঘাত চায় না। কিন্তু যে কোনো আগ্রাসী শক্তিকে ইরান দাঁতভাঙা জবাব দেবে এবং নিজের ভূমি রক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের বিবৃতিতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে শত্রুর যে কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে এবং আমেরিকাসহ যে কোনো আগ্রাসী শক্তিকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।