সরকারি দলের নেতা কর্মীদের সরকারি ত্রাণ নিয়ে তেলেসমাতির মহাধুমধাম মহাসমারোহে চলছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা পৃথিবী হঠাৎ করে বদলে গেলেও বাংলাদেশ সরকার বদলায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। করোনার কারণে চলমান সংকটে অসহায়দের মাঝে বুধবার এক ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার পর এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো এক ই-মেইলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করে বিএনপি। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি রিজভী বলেন, করোনার মহামারির মধ্যেও বিরোধীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
“ভাইরাস নামক অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে বিশ্বের অধিকাংশ গ্রাম আর নগর প্রাণহীন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। তামাম দুনিয়া জুড়ে শিল্প-কলকারখানার চাকা বন্ধ হয়ে গেছে, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, অর্থাৎ অর্থনীতির চরম বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সমুদ্রগামী জাহাজ, বিমান, সড়ক পরিবহন একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সংকটে চারদিকে হাহাকার শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট শূন্য, স্কুল-কলেজ বন্ধ অর্থাৎ পৃথিবী যেন হঠাৎ করেই বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি বাংলাদেশ সরকার।”
করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সংকটের মাঝেও সরকার নিপীড়ন-নির্যাতন, বিরোধী দল দমন ও ভিন্নমতকে উচ্ছেদ করতে স্বভাবসুলভ স্বৈরাচারী নীতির জয়জয়কার অব্যাহত রেখেছে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “সে জন্যই আমরা দেখতে পারছি, নিরন্ন, ক্ষুধার্ত মানুষের অন্ন কেড়ে নিয়ে চাল, ডাল, তেল, আলু চলে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ঘরের ভেতরে।”
“অনাহারী মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা কর্মীদের দেশজুড়ে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিয়ে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অথচ সরকারি দলের নেতা কর্মীদের সরকারি ত্রাণ নিয়ে তেলেসমাতির মহাধুমধাম মহাসমারোহে চলছে।”
রিজভীর দাবি, সাধারণ ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করছে, ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। অথচ ইসলামপুরে, সিরাজগঞ্জে, লালমনিরহাট, হাতীবান্ধা, বকশীগঞ্জ, জামালপুর, দিনাজপুরসহ দেশের নানা স্থান থেকে হাজার হাজার বস্তা চাল, আটা, ভোজ্য তেল প্রায় প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে। এসবের পেছনে বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা শাসকদলের লোকজনই জড়িত বলে জানালেন বিএনপি’র এই বর্ষীয়ান নেতা।
“বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা, নানা ধরনের কালো আইন প্রণয়ন, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং সরকারের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার কারণেই আত্মসাৎ, চুরি ও লুটের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশে করোনার পদধ্বনি শোনার পরেও কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ না করে নির্বিকার থেকেছে ক্ষমতাসীনরা।”
“এ জন্যই এখন করোনা ভাইরাসের তীব্র আঘাত বাংলাদেশকে সইতে হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের জেলাগুলোর অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য একটি শয্যাও প্রস্তুত হয়নি। করোনা মোকাবিলায় মেডিকেল সরঞ্জামাদি ক্রয় নিয়েও চলছে নানা কেলেঙ্কারি।”
রিজভীর অভিযোগ- যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্ট লাইনে লড়াই করছেন তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় ইতিমধ্যে করো মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবহেলার কারণেই বাংলাদেশে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে দাউদপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রামগুলোতে দুস্থ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য সেখান থেকে কয়েকটি ভ্যানগাড়ি রওনা হয়। স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদ টুটুলের ব্যবস্থাপনায় এই ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়।