কৃষক-শ্রমজীবীকে সেনা সহায়তায় রেশনিং দিন
গ্রামের অভাবী কৃষক ও শহরের শ্রমজীবীদের আগামী তিন মাস সেনাবাহিনীর সহায়তায় রেশনিং সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই মহাবিপদ থেকে দেশকে বাঁচাতে সমন্বিত শক্তি কাজে লাগাতে হবে। এই সংকটে রাজনীতিবিদরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে নাও পারেন। তাই বৈজ্ঞানিক, গবেষক ও চিকিৎসক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার অনেক গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলা করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন এই শীর্ষ বাম নেতা। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, সরকার এই মহাবিপদকে শুরু থেকেই হালকা করে দেখিয়ে আমাদের দেশ ও মানুষের ক্ষতি করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের শিকারে পরিণত করা হয়েছে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের। সরকার পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত অনুদান মালিকদের দিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা না দিলে তা শ্রমিকরা পাবেন না।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা সারা দেশে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখনই কৃষকদের ঋণ ও কিস্তির টাকা মাফ করা হোক। অনুদানের টাকা কৃষকদের আগেই দিয়ে দিন। তার মতে, করোনাভাইরাসজনিত মহাবিপর্যয়কালে হাওরাঞ্চলে দ্রুততার সঙ্গে ধান কেটে নিতে না পারলে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। কৃষকের পাকা ধান কাটতে মৌসুমি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থানীয় ও বহিরাগত মৌসুমি খেতমজুরদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-সুরক্ষাব্যবস্থা সংবলিত সাময়িক অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সকল স্থানীয় ও অস্থানীয় মৌসুমি খেতমজুরদের জন্য প্রতিটি অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্ক ও প্রয়োজনে পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকারের কথা ও কাজের মিল নেই। নেই কোনো সমন্বয়। করোনা মোকাবিলায় সরকার আমলানির্ভর কমিটি গঠন করেছে। এখানে বোঝা যায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তার মতে, এখনই গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় নাগরিক কমিটি গঠন উৎসাহিত করা হোক। ত্রাণ চুরি ঠেকাতে ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি গ্রামে আপৎকালীন জনভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, আমাদের পার্টির নেতা বিকাশ সাহাসহ অন্যান্য রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু আরেকবার প্রমাণ করল চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগার এখনো সরকার গড়ে তুলতে পারেনি। প্রতিটি জেলায় করোনা পরীক্ষাগার চালুর দাবি করছি।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বলেন, আমাদের পার্টি জনগণের সহযোগিতায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য যা করেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ছাড়া এ মহাবিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে এককভাবে এ মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সকল দল ও মহলকে নিয়ে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের মধ্য দিয়েই কেবল এ মহাবিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব।