এই মানুষগুলোর কথা কেউ ভাবে না

0

করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে আমরা যখন সারাক্ষণ ঘরেই থাকছি; ঠিক সে সময়ে ভাসমান মানুষগুলোর ঘর-বাড়ি ফুটপাতে। খোলা আকাশটাই যেন তাদের ছাদ। তাদের পেটে যেন কয়েক দিনের ক্ষুধা। এমনিতেও সারা বছরই দিন-রাত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা ফুটপাতেই কাটান।

সারা বছর ভাসমান এ মানুষগুলোর চেয়ে-চিন্তেই চলে। কেউ আবার নিতান্তই নিম্ন আয়ের মানুষ। খাবার জোগাড় করার সুযোগটুকুও নেই। খাবারের অপেক্ষায় এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন। আশায় আশায় চেয়ে থাকেন, কখন কে একটু আহার নিয়ে আসবেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জন্য নেই করোনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা হাত ধোয়ার কথা বাদই দিলাম। সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব কি, সেটাও জানেন না তারা। তাদের মুখে নেই মাস্ক। তাছাড়া জীবন বাঁচাতে সামান্য চাল-ডাল পেলেও যে রান্না করে খাবেন, সেই পরিস্থিতিও নেই। কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।

jagonews24

সেদিন রাতে খাবার বিতরণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ভাসমান মানুষের সাথে কথা হলো। ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘বাবা, কয়েকদিন ধইরা রাইতে প্রায়ই না খাইয়া ঘুমাইয়া যাই। রাইতে যদি কেউ দিয়া যায়; সেখান দিয়া সকালের জন্য কিছু রাইখা দেই। সকালে তো কেউ নিয়া আয় না বাবা। দুপুরে কপালে থাকলে খাই। ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা বাবা।’

এদের মধ্যে অনেকেই কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন। কাজ না পেয়ে অনেকে ফুটপাতেই থাকছেন সারাক্ষণ। কোনো কাজ নেই। কী খাবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। করোনা দুর্ভোগের এমন সময় তাদের খবর কি কেউ নিচ্ছেন? তারা হয়তো আপনার আশেপাশেই। বেলকনি বা জানালাটা খুললেই তাদের দেখা যায়।

ফুটপাতের এমন মানুষ ছাড়াও সম্প্রতি কথা হলো বেশ কয়েকজন পথশিশুর সাথে। আসলে আমরা অনেকেই এ শিশুদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করি। ওরা ড্যান্ডি খায়, আসলে কেন জানেন? হয়তো ওদের যাতে ক্ষুধা না লাগে। এছাড়া পরিস্থিতি ও সঙ্গ ওদের বাধ্য করে। কিন্তু দুর্যোগের এমন সময়ে তো ওরা না খেয়েই থাকছে। এতটুকু বাচ্চা কী-ই বা বোঝে?

মাঝে মাঝে জরুরি প্রয়োজনে বের হলে প্রায়ই দেখি, বেশ কয়েকজন পথশিশু এলাকার মধ্যেই খাবারের সন্ধানে ঘোরাফেরা করে। হোটেল-রেস্টুরেন্টও বন্ধ। আমাকে পেয়ে বলল, ‘মামা, কয়টা ট্যাকা দিবেন? কিছু খাইতাম।’ দোকানে নিয়ে গিয়ে বললাম, ‘যা মন চায় নিতে পারো।’ কিন্তু দেখলাম, ওদের চাহিদা খুবই সীমিত।

যতবারই এ মানুষগুলোকে খাবারের কথা বলেছি, তাদের সীমিত চাহিদাই দেখেছি। এতটুকু চাহিদা কি আমরা পূরণ করতে পারবো না? তাহলে আসুন, রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে এ অসহায় ভাসমান মানুষগুলোর পাশে সাধ্যমত দাঁড়াই।

লেখক: সচেতনতার ফেরিওয়ালা এবং বস্ত্র প্রকৌশলী

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com