করোনার আঘাত পোশাক খাতে, ভেঙে পড়বে বিশ্বঅর্থনীতি

0

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নেতিবাচক প্রভাব এখন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। সারাবিশ্বের মতো বড় ধরনের ক্ষতির সামনে পড়েছে বাংলাদেশও। এমন পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত বড় আঘাতটি এসেছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। সারাদেশে ৫ হাজার গার্মেন্টসের প্রায় ৩৫ কোটি ডলারের ক্রয় আদেশ ইতিমধ্যে বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৫০টি গার্মেন্টেসের ১০ কোটি ডলারেরও বেশি পণ্য রয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পোশাক শিল্পে এত বড় বিপর্যয় আগে কখনও হয়নি। কাঁচামাল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে, বাতিল হচ্ছে একের পর এক রপ্তানি আদেশ। ফলে গার্মেন্টস শিল্প কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে হঠাৎ করেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের টাকা জোগাড় নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে।

তাদের বক্তব্য, খুব দ্রুত এ সংকট না কাটলে পুরো বিশ্বঅর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। যার ধকল সামলানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের মতো মধ্যমআয়ের দেশের কতটা আছে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের বিজিএমইএ তালিকাভুক্ত ৫০টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি গার্মেন্টসের অর্ডার স্থগিত হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে ২০টি গার্মেন্টসের অর্ডার। অর্ডার বাতিল ও স্থগিতের কারণে চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়েছে। তবে বেশি হবে বলে জানিয়েছেন মালিকরা।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধস নামা শুরু হয়ে গেছে। ১৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়েছে। তবে এমনটা শুধু আমাদের দেশেই হচ্ছে না, সারাবিশ্বে একই অবস্থা।

তিনি বলেন, আমরা প্রথমে জীবন বাঁচানোর চিন্তা করছি। তারপর অর্ডার কী করব সেটা নিয়ে চিন্তা করা যাবে। যেখানে পণ্যগুলো বিক্রি করি তারা এখন অবরুদ্ধ। সারাবিশ্ব এখন খাবার-ওষুধ নিয়ে ব্যস্ত। পোশাক তো লাগবে পরে, আগে লাগবে খাবার এরপর ওষুধ। আমাদেরও একই অবস্থা। তাই আমরা বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সবার একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করা দরকার।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক রাজীব দাশ সুজয় বলেন, করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির সামনে পড়েছে। করোনা সংকট কাটলে এদেশের পোশাক শিল্পকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৫ বছর আগের অবস্থানে। যখন থেকে এদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রগতি শুরু।

তিনি বলেন, এখন আমাদের ক্রেতা নেই। বহির্বিশ্বসহ আমাদের দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন আবার কাজ শুরু করা হবে।

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের বেতন না দেওয়ার তো সুযোগ নেই। আমাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে এজন্য কর্মচারীরা বেতন পাবে না, এটা হবে না। তাদেরকে সম্পূর্ণ বেতন দেওয়া হবে।

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এরকম বিপর্যয় আগে কখনও হয়নি। এভাবে অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়া মানে আমাদের বিশাল ক্ষতি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের যে বেসিক খরচ, ওটাও এখন বিশাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেভাবে এই ভাইরাস ইউরোপের দেশগুলোতে ছড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে এখনও যে অর্ডার আছে সেগুলোও হয়তো বাতিল হয়ে যাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি আমার মতে এদেশের পোশাক শিল্পের জন্য মহাবিপর্যয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি পোশাক শিল্প আর রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এখন দুটিই বন্ধ। এর কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশাল আঘাত আসছে। এ ক্ষতি অপূরণীয়। মাসখানেকের মধ্যে যদি বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে এই বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে। তবে যদি তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের বেতন কিভাবে দিব, এটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। একেবারে কাজ না করে বেতন দেওয়ার সামর্থ্য ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের নেই। কারণ দেশের বেশিরভাগ কারখানা ছোট ও মাঝারি আকারের। এটা একটা বড় ধরনের সংকট। এ সংকট কাটানোর জন্য সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা করবে এবং অন্যান্য দেশের মতো এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com