তড়িঘড়ি করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য উদ্বোধনের পরপরই খসে পড়ল পলেস্তারা

0

কাজ শেষ না করেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের (নির্মাণাধীন) সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাস্কর্যটি তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছাড় হওয়া বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুলের দুটি ভাস্কর্যের কাজ ২০১৯ এর জুন জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুতিয়া করপোরেশন। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের উদ্বোধন হলেও নজরুলের ভাস্কর্যের কোন অগ্রগতিই নেই।

মাসের পর মাস বন্ধ থাকা দুটি ভাস্কর্য নির্মাণকাজের কোনটিই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি কিন্তু ব্যয় বেড়েছে ৩০ লাখ টাকা। নির্মাণ সময়ের বেশির ভাগ সময় কাজ বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ওপর। এছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদাও দাবি করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান জানান, দুই ভাস্কর্য নির্মাণে মোট বরাদ্দ হয়েছিল এক কোটি এক লাখ টাকা । এর মধ্যে শিল্পী শ্যামল চৌধুরীকে দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ বাবদ দেয়ার কথা ৫৫ লাখ। অন্যদিকে ভাস্কর্যের দুই বেদি নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৩ লাখ টাকা। তবে এখন ব্যয় বেড়ে সুতিয়া এন্টারপ্রাইজ পাবে মোট পঁচাত্তর লাখ টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কাজ করতে ব্যয় বেশি হচ্ছে আর এখন দ্রুত কাজ হচ্ছে তাই ব্যয় বেড়েছে।

মেসার্স সুতিয়া করপোরেশন এর মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন, নকশার পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার তাই আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণে ‘কয়েকজন শিক্ষার্থী নেতা অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছিল,’ কিন্তু সেই ‘সহযোগিতা প্রদান’ সম্ভব হয়নি বলেই কাজ বন্ধ ছিল। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। কারা কাজ বন্ধ রেখেছিল সেই নাম জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দুই দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও মো. মাহাবুবুল ইসলাম তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন কাজের চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ লাখ টাকা এবং নকশা পরিবর্তন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে যুক্ত হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুতিয়া করপোরেশনের মালিকের হিসেবে ৮ লাখ টাকার গরমিল রয়েছে।

স্নাতকোত্তর পড়ুয়া জাকির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সারা বছর কাজ করতে দেখিনি কেবল উদ্বোধনের জন্য উদ্বোধন করা হচ্ছে। জাতির জনকের ভাস্কর্যের কাজ এমনই হয়েছে যে নাড়া দিলে নড়ে। অভিযোগটি আমি ডিপিডি মহোদয়কে দিয়েছি।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ফুল দেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জালাল উদ্দীনের সামনেই এর বেদির পলেস্তারা ও বিভিন্ন জায়গার টাইলস খুলে পড়ে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় কাজ শেষ করেছি আর ৯টায় অনুষ্ঠান হলে এমন হতেই পারে। আমাদের কাজে কোন সমস্যা নেই। তবে ভাস্কর্যের কাজ শেষ হলে আশা করি ভালোই হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, শুনেছি কারা যেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। যে কাজটি নিন্দনীয়। অন্যদিকে ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি হতে পারে, এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এখনো ভাস্কর্যের কাজ শেষ হয়নি এটি সত্য।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com