থানা হাজত, উলঙ্গ পেটানো এবং গ্রেফতার পর্ব -১
মধ্যরাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে জেল। সবাই চিৎকার দিলেন। কিন্তু এই ঘটনা কি নতুন ?
স্থানীয় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় একজন সাংবাদিককে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। ওদের বিচার দাবি করবেন সেটাই নৈতিক দাবি।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে পেটাতে পেটাতে জিজ্ঞাসা,
“তোর বাপের নাম কি” ? —- ম্যাজিস্ট্রেট নাজিমউদ্দিন ।
“স্যার আমার বাবা তো বহু আগেই মরে গেছেন ।”
—- সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন … … বল, ডিসি আমার বাপ, ডিসি আমার বাপ !
কিন্তু প্রতিদিন নানা কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে দিনরাত সারা দেশে সাধারণ জনগণকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই বিষয় নিয়ে কেউ কি চিৎকার করেন ?
মা মেয়েকে থানা হাজতে নির্যাতন। কিশোরী মেয়েকে ওসির রুমে নিয়ে কয়েকরাত লাগাতার ধর্ষণ। শেষ রাতে মেয়েকে মায়ের সাথে থানা হাজতে রাখা হতো। মেয়েটি তার মাকে বলতো শাড়িটি দিয়ে আমার গলায় ফাঁস লাগাও। আর কত দিন সহ্য করবো।
তখন আপনারা কোথায় ছিলেন ? তখন তো চিৎকার করেন নাই ?
হাজতে নারীকে গণধর্ষণ : সেই ওসিসহ ৫ পুলিশ
১০ আগস্ট ২০১৯
গত ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা ওই নারীকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করে। পরদিন শনিবার তাকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত ফুলতলায় পাঠানো হয়।
৪ আগস্ট আদালতে জামিন শুনানিকালে বিচারককে ওই নারী জানান, জিআরপি থানায় নির্যাতন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি। থানা হাজতে ওসি উছমান গণি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আদালতের নির্দেশে সোমবার (৫ আগস্ট) তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ জানান, তদন্তকালে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কারণে পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২১ নভেম্বর ২০১২
মা রে নরপশু পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না’ অধিকারের অনুসন্ধানে সীমার ওপর পুলিশি নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী
পুলিশ কলেজছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা সীমা (১৮) এবং তার মা আলেয়া আক্তারের (৫০) ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। বৈদ্যুতিক শকসহ প্রায়ই হাজত থেকে সীমাকে পুলিশ নিয়ে যেত। ৩-৪ ঘণ্টা পর যখন তাকে মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যেত তখন সীমার মাথার চুল এলোমেলো থাকত, তলপেটের ব্যথায় কান্নাকাটি করত এবং সীমাকে খুবই কান্ত দেখাতো। সীমা বলত ‘আমি আর নরপশু পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না’। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা অধিকারের এক অনুসন্ধানে সীমার ওপর এমন লোমহর্ষক নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে।
অধিকার জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী পৌরসভার ১ নম্বর বেড়াডাঙ্গা মহল্লার বাসিন্দা মৃত সালাম মোল্লার স্ত্রী আলেয়া আক্তার (৫০) ও মেয়ে সুমাইয়া সুলতানা সীমাকে (১৮) কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার পুলিশ সদস্যরা কোনো মামলা ছাড়াই আটক করে নিয়ে যায়। ছয় দিন আটকে রেখে পুলিশ তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। পরে ডিবি পুলিশ সদস্যরা মা ও মেয়েকে কুমারখালী থানায় পাঠায়। কুমারখালী থানার ওসি মো: আব্দুর রাজ্জাক মা ও মেয়েকে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কুষ্টিয়া আদালতে পাঠান। মা-মেয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান। ২৫ সেপ্টেম্বর এই নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর মা ও মেয়ে আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাদের অব্যাহতি দেন। পুলিশ ওই দিন একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের ফের জেলহাজতে পাঠায়।
অধিকারের তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সীমার পৈতৃক ভিটা কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার ৯ নম্বর আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বাড়ইপাড়া গ্রামে। সীমার বাবা ছিলেন আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নুরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ। প্রায় চার বছর আগে তার বাবা সালাম মোল্লা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার পর সীমারা তখন নানাবাড়ি এলাকায় চলে যায়। গত ২৮ আগস্ট ওই চেয়ারম্যান খুন হন। পুলিশ সন্দেহ করে যে, সীমা ও সীমার ভাই আরিফ হোসেন (১৪) এবং সীমার মা আলেয়া আক্তার চেয়ারম্যানকে হত্যা করেছে।
সীমা অধিকারকে বলেন, পুলিশ সদস্যরা তাকে কারো কাছে কিছু বলতে নিষেধ করেছে। সীমা এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে চাননি।
আলেয়া আক্তার অধিকারকে জানান, ৯ সেপ্টেম্বর রাতে খোকসা থানার পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। তিনি ঘরের দরজা খুলে দেখেন, অস্ত্র হাতে ১০-১২ জন পুলিশ একটি মাইক্রোবাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ তার ছেলে আরিফকে খুঁজে না পেয়ে দুই মেয়ে রুমা, সীমা ও তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। রুমা পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে সংসার ভেঙে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়ে সীমা ও আলেয়াকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। একজন পুলিশ সীমার বোরকা ও ওড়না খুলে ফেলে। পরে দুইজন পুলিশ সদস্য সীমাকে পেছনের সিটে নিয়ে তার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসে। প্রথমে তাদের খোকসা থানায় নেয়া হয়। দিনের বেলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে এবং সীমার দুই হাতে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা তাদের দুইজনকে লাঠি দিয়ে কোমরে ও পায়ে পেটায়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে কথায় কথায় পুলিশ সদস্যরা চড়থাপ্পর মারে।
খোকসা থানা হাজতে গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, পরনের কাপড় পরিবর্তন করারও সুযোগ ছিল না, টয়লেটের পানি খেতে হতো, ঘুমানোর মতো ব্যবস্থা ছিল না। ঠিকমতো খাবার না পাওয়ায় আলেয়া আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। মহিলা পুলিশ তার দায়িত্বে না থাকায় তিনি ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো কোনো পুরুষ পুলিশ সদস্যদের বলতে পারেননি। তার সামনেই যখন সীমাকে বৈদ্যুতিক শক দিত, সীমা মাগো বলে আর্তচিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত।
সীমাকে হাতের আঙুলগুলোতে সুঁই ঢুকিয়ে দেয়া হতো। ১১ সেপ্টেম্বর আমবাড়িয়ার বাড়ইপাড়া থেকে তার এক ভাতিজী পিয়ারী খাতুন প্রিয়াকে পুলিশ সদস্যরা খোকসা থানায় নিয়ে আসে। প্রিয়া ও সীমাকে একই কায়দায় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়।
প্রিয়াকে তার মোবাইল ফোন দিয়ে পুলিশের পছন্দমতো বিভিন্ন যুবকের সাথে প্রেম আলাপ করতে বাধ্য করে। প্রিয়া যে ছেলের সাথে কথা বলত তাকেই রাতে ধরে থানাহাজতে এনে নির্যাতন করে আবার ছেড়ে দেয়া হতো। দুই দিন পার হলে প্রিয়াকে থানাহাজতে রেখে তাদের দুইজনকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের গোয়েন্দা শাখা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়।
আলেয়া আক্তার অধিকারকে আরো বলেন, ডিবির কার্যালয়ে তাকে এবং সীমাকে রাখা হয় অস্ত্রাগারের পাশে একটি অন্ধকার কক্ষে। পাশের আরেকটি ঘরে ছিল তাহেরপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন মাস্টারের স্ত্রী হুসনে আরা। পুলিশ তাকে দিয়ে অফিসের প্রতিটি ঘর ঝাড়ু দেয়া, ঘর মোছানো, পুলিশ সদস্যদের সাদা পোশাক ধোয়াসহ যাবতীয় গৃহস্থালী কাজ করাতো।
মাঝে মাঝে একজন করে পুলিশ সদস্য সেই কক্ষে এসে সীমাকে নিয়ে যেত এবং কয়েক ঘণ্টা পর আবার নিয়ে আসত। তখন সীমার মাথার চুল এলোমেলো থাকত, তলপেটের ব্যথায় মাগো মাগো বলে কান্নাকাটি করত এবং সীমাকে খুবই কান্ত দেখাতো। সীমার পরনের জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল। সীমা ঘরে ঢুকেই মেঝেতে পরে চিৎকার করে বলত, ‘মা রে আমাকে একটু উঁচু করে তুলে ধর, আমি ছাদের ফ্যানের হুকের সাথে ফাঁসি দিতে চাই। আমি আর নরপশু পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না।’
পালাক্রমে পুলিশ সদস্যরা অত্যাচার চালিয়ে সীমাকে শেষ করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ডিবির এএসআই মাসুদ সীমাকে নিয়ে যেত এবং সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত অবস্থায় তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসত।
১৪ সেপ্টেম্বর তাদের নিয়ে যায় কুমারখালী থানায়। পুলিশ তাদের স্পর্শকাতর স্থানে মরিচ লাগানোর চেষ্টাও করে।
হুসনে আরা অধিকারকে বলেন, নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সন্দেহে তার ভাই তোফাজ্জল হোসেন তোফাকে খুঁজতে এসে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বিনা মামলায় তাকে এক দিন খোকসা থানায় আটকে রাখে এবং পরে কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশ অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, তার আত্মীয় আলেয়া ও আলেয়ার মেয়ে সীমাকে আটকে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে পুলিশ সদস্যরা সীমা ও আলেয়াকে বৈদ্যুতিক শক দিত। কখনো সীমাকে ডিবি অফিস থেকে বের করে নিয়ে যেত এবং কয়েক ঘণ্টা পর আবার নিয়ে আসত। তখন সীমাকে অস্থির দেখাতো এবং সে ছটফট করত। সীমা পুলিশ সদস্যদের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চাইত।
খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল হাসান বলেন, খোকসা থানার পুলিশ সদস্যরা কয়েক দিন ধরে কয়েকজন মেয়েকে কোনো কারণ ছাড়াই থানায় আটক করে রেখেছিল।
খোকসা থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন থানায় আসেন এবং চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের ধরে আনেন। আলেয়া ও সীমাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না।
তবে জয়নুল আবেদীন বলেন, কাউকে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না। তিনি নির্যাতন করেননি বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি অধিকারকে এ বিষয়ে কাজ না করার জন্যও বলেন।
শুক্রবার ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ,
থানা হাজতে মহিলা আসামীকে শ্লীলতাহানি হয়। পিরোজপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুমুর রহমান বিশ্বাস ও থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন জড়িত। সদর থানার চর লখাকাঠী গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে শিমু আক্তার (২৬) ও তার মা মাহমুদা বেগমকে গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে দুইটি মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। রাতে মহিলা হাজতখানা থেকে শিমুকে বের করে উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে কুপ্রস্তাব দেন এবং শরীরের বিভিন্ন গোপন স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। পরের দিন মা ও মেয়েকে আদালতে চালান দিলে বিচারক তাদের জেল হাজতে পাঠান।
মেয়ের শ্লীলতাহানি, মা-বাবাকে লাঠিপেটা
আদালত চত্বরে পুলিশি নিষ্ঠুরতা
তারিখ: ৩০-০৫-২০১২
নালিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন ওই তরুণী। জানান, স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করতে মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরখান এলাকা থেকে আদালতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু দেরি হওয়ায় মামলা করা যাবে না বলে তাঁদের আইনজীবী আজ বুধবার আবার আসতে বলেন। আইনজীবীর কথা শুনে তাঁরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে করে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় ফটকেই তাঁদের আটকায় পুলিশ। তখন দুপুর ১২টার মতো।
মেয়েটি বলেন, ‘পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমার বাবার মোটরসাইকেল বন্ধ করে চাবি নিয়ে নেন। এ সময় আমি ও মা এর প্রতিবাদ করলে পুলিশ বলে, এই মোটরসাইকেলটি চোরাই। বাবার বিরুদ্ধে নাকি ডাকাতির মামলা আছে। একজন পুলিশ তখন বাবার শার্টের কলার ধরে টানতে থাকলে মোটরসাইকেল কাত হয়ে আমরা পড়ে যাই। এরপর পুলিশ বাবাকে মারতে মারতে মা-সহ আমাকে পুলিশ ক্লাবের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে বাবাকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে ও আমার মাকে পৃথক কক্ষে রাখা হয়। একপর্যায়ে দুজন পুলিশ সদস্য আমাকে জড়িয়ে ধরেন। এঁদের একজন জামান (পোশাকের নামফলক অনুযায়ী) আমার সঙ্গে চরম অশালীন আচরণ করেন। আমার গালে-গলায় চুমু দেন। মোটা ও কালোমতো এক পুলিশ সদস্য গলা থেকে চেইন খুলে নেন। আমি প্রতিবাদ করলে গালে চড় মারেন। এতে আমার কানের দুল চামড়া কেটে ভেতরে ঢুকে যায়। তখন আমি চিৎকার করে মাকে ডাকতে থাকি। চিৎকার শুনে মা-ও চিৎকার করতে থাকেন।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ মেয়েটির এই অভিযোগকে ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মেয়েটির বাবা বংশাল থানার একটি ডাকাতি মামলার সন্দেহভাজন আসামি।
পুলিশের লাঠিপেটা: বিকেল সাড়ে চারটার দিকে লালবাগ বিভাগের সহকারী কমিশনার রাজিব আল মাসুদ ও ওসি সালাহউদ্দীন খান একদল পুলিশ নিয়ে পুলিশ ক্লাবের সামনে যান। মেয়েটি ও তাঁর মাকে ঘিরে থাকা সাংবাদিক ও আইনজীবীদের তাঁরা চলে যেতে বলেন। মেয়েটিকে ওসি বলেন, ‘আপনাদের থানায় থাকতে বলছি, আপনারা এখানে কেন? থানায় চলেন।’ তখন মেয়েটি বলেন, ‘থানায় যাব না। ওখানে আমার আব্বুকে মেরে আটকিয়ে রেখেছে।’
তখন ওসি সালাহউদ্দীন বলেন, ‘তোমার বাবার বিরুদ্ধে তো কোনো মামলা হয়নি।’ মেয়েটি বলেন, ‘না, আমি একা যাব না। সাংবাদিকদের নিয়ে যাব।’ এ সময় উপস্থিত সাংবাদিক ও আইনজীবীরাও মেয়েটির পক্ষ নিলে ওসি বলেন, ‘এই ধর সব কটাকে; গাড়িতে তোল, মার।’ ওসির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকারকে তখন ধরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করা হয়। আরেক সাংবাদিক তুহিন হাওলাদার তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। পুলিশ আবার তাঁকে ধরার চেষ্টা করলে সাংবাদিক আবদুল জলিল ছাড়িয়ে নেন। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন এই তিন সাংবাদিক। পুলিশ প্রশান্তর কোট ও চশমা খুলে নিয়ে যায়।
এরপর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহা আদালত প্রতিবেদকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের ডেকে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে প্রতিবেদকেরা পুলিশের এসি রাজিব ও ওসি সালাহউদ্দীনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানান।
পুলিশের বক্তব্য: পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন উর রশীদ সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বংশাল থানার একটি মামলায় মেয়েটির বাবাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তাঁদের থামায়। তখনই মেয়েটি ও তাঁর মায়ের সঙ্গে পুলিশের হিচিং হয়। এরপর পুলিশ তিনজনকেই পুলিশ ক্লাবের ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরে মেয়ে ও তাঁর মাকে বের করে দেওয়া হয়।’
ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মারুফ সরদার ও সহকারী কমিশনার (এসি) রাজিব আল মাসুদ।
রাতে ঢাকা মেডিকেলে: রাতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল মেয়েটির বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসকেরা জানান, মেয়েটির বাবার মাথায়, চোখে, কাঁধে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
দিনভর হেনস্তা শেষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের হস্তক্ষেপে রাত পৌনে ১০টায় তিনজনকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ।
গত ১১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ধুরাইল বাজারে সিরাজুল ইসলামের দোকানের সামনে থেকে ঝর্ণা বেগমকে ধরে নিয়ে যায় ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া। থানায় নিয়ে তার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওইদিন রাত ৩টার দিকে নারীকে ওসির রুমে নিয়ে আসে। এ সময় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন এবং ওসি তাকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করে।
মাদ্রাসা শিক্ষকের মেয়েকে উলঙ্গ করে ওসির নির্যাতন অতঃপর গরু চুরির মামলা দিয়ে হাজতে প্রেরণ
২১ ডিসেম্বর ২০১৮
পরদিন রাতেও তাকে নির্যাতন করা হয়। ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরদিন জেলহাজতে ওই নারী অচেতন হয়ে পড়লে কারা হাসপাতালের মাধ্যমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে পুনরায় হাজতে নেয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে হালুয়াঘাট থানায় ৪টি গরু চুরির মামলা দেয়া হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান ঝর্ণা বেগম। পরে চিকিৎসা শেষে ২১ ডিসেম্বর নির্যাতনের অভিযোগ এনে হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া, ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন।
০৭ অক্টোবর, ২০১৯
শেফালি বেগম (ছদ্ম নাম)। বয়স হবে ১৩ /১৪। চুরির অপবাদে সে এখন থানা হাজতে বন্দি। শুধু হতভাগা ওই মেয়েটি নয় সাথে দুই ভাইকেও আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে থানায়। থানার কাস্টডিতে পা ফেলতে পারছে না মেয়েটি। এখনো শেষ হয়নি, চোখের সামনে মেয়েটিকে না পেটানোর আকুতি জানালে মাকেও পিটিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে গেছে মায়ের। উরুতে অনেকটা ক্ষত হয়ে গেছে। পুলিশ কর্তৃক শিশু ও মা নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে হোমিও চিকিৎসক ডা: সাবিহা সুলতানা ও ডাঃ মুসলিম আলীর নামের দম্পতির ফ্ল্যাটে। গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর সুবিদবাজার এক্সেল টাওয়ারের ৯ম তলায় (ফ্ল্যাট নম্বর-এ) এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত মেয়ে ও মায়ের পরিবারের এই অভিযোগ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কতোয়ালী থানার এস আই জুবায়েদ খানের বিরুদ্ধে।
শেফালি বেগমের মা পরিবারের আরো ৪ সদস্যকে নিয়ে গতকাল রোববার রাত সিলেটের ডাক-এর বার্তা কক্ষে হাজির হন। এ সময় সাংবাদিকদের শরীরের আঘাত দেখিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, শিশু মেয়েটিকে পিটিয়ে শান্ত হননি কতোয়ালী থানার এসআই জুবায়েদ খান। শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, মেয়েকে ছুটাতে গিয়ে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি নিজেও। দুই ছেলেকেও ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মেয়ে ও ছেলেকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে থানার কর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। বুঝাতে পারেননি তার সন্তানেরা ‘নির্দোষ’। প্রতিকার না পেয়ে পত্রিকা অফিসে ছুটে আসেন। তিনি মেয়ে ও পুত্রদের নির্যাতন করে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দেন। এ সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই মা।
মেয়ে হত্যার বিচার চাওয়া বাবাকে ডাকাতির মামলা দিলেন ওসি
০৫ ডিসেম্বর ২০১৯
যাদের নির্যাতনে মেয়েকে হারাতে হয়েছে, তাদের বিচার চান আশার বাবা-মা। হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া, আশার বাবাকে ডাকাতির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ওসি আবুল কাশেমের অপসারণ দাবি করেছেন তারা।
আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, আমার মেয়ে হত্যার পর থানায় মামলা নেয়নি। ডাকাতির মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। কোর্টে মামলা করায় এখন নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতেও ওসি চাপ দিচ্ছেন।
এই বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত পাবনার ফরিদপুর থানার ওসি আবুল কাশেম।
১৬ মার্চ ২০১৯
ভয়ঙ্কর কিলার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ
ওসি প্রদীপ হোয়াইক্যং এর আনোয়ার নামের এক ব্যক্তিকে তিন দিন ধরে টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করে। প্রতিকার পেতে তার সুন্দরী স্ত্রী এবং বোন কক্সবাজার আদালতে আসলে খবর পেয়ে সে দুই নারীকে তুলে নিয়ে টানা ৫ দিন গণধর্ষণ করিয়ে প্রত্যেককে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়। তারা বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। যা তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।
শুধু তাই নয়, ওসি হ্নীলার দুবাই ফেরত এক যুবককে ধরে সকালে এক পা ও এক হাতে গুলি করে বাড়িতে ফোন করিয়ে নগদ ২২ লাখ টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় ক্ষতস্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শাপলাপুরের জনৈক হাবিব উল্লাহ নামক এক ব্যক্তি। বৃক্ষ প্রেমিক হিসেবে চ্যানেল আই পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় এক পুলিশ ও এনজিও কর্মকর্তার সাথে বিরোধের জেরে ওসির লেলিয়ে দেয়া পুলিশ হাবিবকে আটক করে শত্রুদের হাতে তুলে দেয়। এরপর শত্রু পক্ষের শহীদ নামের এক খুনি তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও ওসি এই মামলায় এমন একজনকে আসামী করে দেয়, যিনি হত্যাকান্ডের ছয় মাস আগে থেকে জেলে রয়েছেন। প্রদীপের ক্ষমতার অপব্যবহারে বিনা দোষে মিথ্যা মামলার শিকার এই হতভাগ্যের নাম ছৈয়দ হোসেন।
বিজিবির সোর্স হাসান আলী মাদক ও ওসির বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয় প্রদীপ। ফলে হাসান আলীকে তার ফিশিং জাল মেরামত কালে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে পুলিশ তিন দিন আটকিয়ে রেখে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত বলে প্রচার করে। যা স্থানীয় বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্যতা মিলবে। এই ঘটনায় স্বামী হারানো স্ত্রী প্রতিবাদ করায় তার মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানা বসতবাড়ী ভেঙ্গে দেয় এই হিন্দুত্ববাদি ওসি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে বহুবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান টেকনাফের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পরিবার থেকেই অস্ত্র দিয়ে প্রথম সহযোগিতার জনশ্রুতি আছে এলাকায়। মাদক বিরোধী অভিযানের কথা বলে ওসি প্রদীপ এই পরিবারের একমাত্র সন্তান জুনাইদকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে তার বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করে প্রায় ৩০/৪০ লাখ টাকা লুটপাট করে। অথচ সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাফর আলমের নিকট আত্মীয় জুনাইদের পরিবার কোন কালেই মাদকের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। এলাকায় তাদের প্রচুর ধন সম্পদ রয়েছে। পুরো জেলার মানুষ পরিবারটি চৌধুরী পরিবার হিসেবে চিনেন।
হ্নীলা মৌলভী বাজার এলাকার দুবাই প্রবাসী এক ব্যক্তি প্রদীপের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে স্ট্যাটার্স দেওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে তার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
গত ২৪ জুন ঝিমংখালীর একজন ৭০ বছরের অবসর প্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে মাদক মামলা আছে বলে ধরে নিয়ে টেকনাফ থানা পুলিশ ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করে একটি মাদক মামলায় চালান দেয়। শুধু টাকার জন্য ক্ষমতার জোরে ধরাকে শরা করা এই উন্মাদ ওসি যে মাদক মামলায় বয়স্ক শিক্ষকটিকে চালান দেয় ওই সময় তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্ব পালনরত।
আদালত তাঁর পাসপোর্ট ও ভিসা রেখে সম্মানের সাথে মানুষ গড়ার হতভাগ্য এই কারিগরকে জামিনে মুক্তি দেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য আদালত থেকে তিনি জামিন নিয়ে বাড়ি যেতে না যেতেই দূর্নীতিবাজ ওসির লেলিয়ে দেয়া পুলিশ আদালতের রিকল না মেনে তাকে আবার গ্রেফতার করে ১ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা দিয়ে চালানের হুমকি দিয়ে ফের ৩ লাখ টাকা আদায় করে ক্ষান্ত হয়নি, মাদক মামলায় পুনরায় তাঁকে আদালতে চালান দেয়। অবশেষে বিজ্ঞ আদালত শিক্ষকটিকে ছেড়ে দেন।
পশ্চিম লেদা এলাকার মৃত গবি সোলতানের ছেলে মোস্তাক সওদাগর। পেশায় একজন মুদির দোকানদার। তালিকাভুক্ত কোন মাদক ব্যবসায়ী নন তিনি। সারা দিন দোকান করে একটু স্বচ্ছল চলছেন। এতেই ওসির লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার উপর। পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে মোস্তাক সওদাগরকে দিন দুপুরে তুলে নিয়ে যান টেকনাফ থানার চৌকস বাহিনী! তারপর এই ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে পুলিশ একদিন পর ১২শ পিচ ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান দেয়। ঘুষের নেশায় উন্মাদ পুলিশ দোকান থেকে তাকে আটক করলেও সাজানো মাদক মামলায় আটকের স্থান দেখায় হ্নীলা উখিয়াগামী পাকা রাস্তার সংযোগস্থল। অথচ বিষয়টি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো তা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখলে বুঝা যাবে। ফুটেজের চিত্র এবং এজাহারের সাথে কোন কিছুর মিল নেই।
এছাড়া মাদক নির্মূলের অজুহাত দেখিয়ে সীমাহীন ঘুষ দূর্নীতিতে জড়িত দাপুটে ওসি সর্বশেষ মানব পাচারকারী বলে যে দুজনকে বন্দুক যুদ্ধ দেখিয়েছে, তাদের আটক করেছিল একমাস আগে। এতদিন ওসি নিজের টর্চার সেলে তাদের জুলুম নির্যাতন করে নগদ যা পেয়েছে তা হাতিয়ে নিয়ে ঘটনাটি সাজিয়েছে বলে কানাঘুষা চলছে
আশ্চর্যজনক হলেও সবচেয়ে লোমহর্ষক বিষয় হচ্ছে, টেকনাফের ওসিদের ইতিহাসে সবকিছুতেই শ্রেষ্ঠ এই ওসি প্রদীপ মাদক নির্মূলের ঘোষনা দিয়ে এই পর্যন্ত যতগুলো কথিত বন্দুক যুদ্ধ দেখিয়েছে, সবকটিতে মাদক, অস্ত্র ও হত্যা তিনটি মামলা রুজু করেছে। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। এরপর শুরু হয় গ্রেফতার বাণিজ্য। তারপর মামলার চার্জশীট থেকে আসামী বাদ দেওয়া ঢুকিয়ে দেওয়ার অজুহাতে আদায় করেন কোটি কোটি টাকা। তাছাড়া সেতো এখন টেকনাফের মহারাজা! থানায় মামলা নেয়া না নেয়া, আসামী ধরা ছাড়া ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মাসোহারা সহ সব মিলিয়ে মাসে শতকোটি টাকা উপার্জন করে বলে জানা গেছে।
টেকনাফবাসী এও বলছেন, মাদক নির্মূলে তালিকাভুক্ত প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়া দুর্নীতিবাজ উক্ত ওসি বিচার বর্হিভূতভাবে যাদের হত্যা করেছে তা সঠিক তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
সাংবাদিকরা তার টাকায় ভাত খায়। অনেক সাংবাদিক ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত। থানায় মাগনা আসিনি। তার হাত অনেক লম্বা। বাড়াবাড়ির পরিণাম ভালো হবে না। কোথায় হারিয়ে যাবে নিজেও টের পাবে না।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় তার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় স্ত্রীর নামে লক্ষী ম্যানশন নামে একটি বহুতল ভবন, মুরাদপুর মোড়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অভিজাত এলাকায় ৬ কাঠা জমি এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসামের রাজধানীতে নামে বেনামে অনেক সম্পত্তির সত্যতা পাওয়া গেছে।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯
মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে বাবা-মাকে থানায় আটকে রাখল পুলিশ।
পুলিশ জোর করে তাদের মেয়েকে দিয়ে উল্টো পালক বাবা জামিলের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও অকাল গর্ভপাত ঘটানোর মিথ্যা।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামে পালিত মেয়েকে ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে পালক বাবা ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য নিজেই আসামি হয়ে জেল খেটেছেন।
ধর্ষণ ঘটনার মূল আসামি মাসুদ মিয়ার বিচার এবং মিথ্যা ধর্ষণ মামলা থেকে বাবার অব্যাহতি, সুবিচারসহ সাদুল্যাপুর থানা পুলিশের অন্যায়-দুর্নীতির প্রতিকারের দাবি জানিয়ে সোমবার দুপুরে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম রেজানুল ইসলাম বাবুর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ৪নং ওয়ার্ড সদস্যর সঙ্গে মনোমালিন্য চলে আসছিল। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তাকে ফাঁসাতে নানান ফন্দি তৈরি করেন। চেয়ারম্যানের নিকটতম প্রতিবেশী একই ইউনিয়নের দক্ষিণ সনতোলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুদ মিয়া গত ৩ মে রাতে নিজ বাড়িতে জামিলের মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে মাসুদ মিয়া পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় পরের দিন ৪ মে ধর্ষিত মেয়েকে নিয়ে জামিল ও তার স্ত্রী সাদুল্যাপুর থানায় ধর্ষক মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে তাদের আটক করে থানা হাজতে রেখে নির্যাতন করে পুলিশ। শুধু তাই নয়, পুলিশ জোর করে তাদের মেয়েকে দিয়ে উল্টো পালক বাবা জামিলের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও অকাল গর্ভপাত ঘটানোর মিথ্যা অভিযোগে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে মামলা দায়ের করে।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষিতা, ধর্ষিতার বাবা, মা, ও প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
৪১ ঘণ্টা হাজতে রেখে পরে মা-মেয়ে গ্রেপ্তার
প্রতিকার চাইতে থানায় গিয়ে নির্যাতনের শিকার
২০ আগস্ট, ২০১৩
আদালতে যাওয়ার সময় শিশু আসমানি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলে, ‘আজ (সোমবার) স্কুলে আমার পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ছিল। আমি ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে স্কুলে যাওয়ার জন্য পুলিশ স্যারের হাতে-পায়ে ধরেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। মা ও বোনের সঙ্গে আমাকেও তিন দিন ধরে আটকে রাখে।’