আইনমন্ত্রীর নির্দেশেই পিরোজপুরে বিচারককে বদলি!

0

দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আরও একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করছে সরকার। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দুর্নীতিবাজ আওয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন বাতিল করায় বিচারককে তাৎক্ষণিক বদলি করে সরকার প্রমাণ করলো যে দেশের বিচারক ও বিচারপতিরা স্বাধীন নয়। সরকারের নির্দেশেই তাদেরকে উঠবস করতে হয়। আর ব্যতিক্রম হলে বদলি অথবা দেশছাড়া।

বর্তমানে দেশের আদালত কক্ষ আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসের মধ্যে যে কোনো পার্থক্য নেই এটা আরও বহু আগেই প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগীতায় শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখলের পর প্রথমেই সুপ্রিমকোর্ট থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত পর্যন্ত হাতের কব্জায় নিয়ে আসে। বিচার প্রশাসনের প্রতিটি চেয়ার থেকে সৎ, যোগ্য, মেধাবী, নিরপেক্ষ বিচারক ও বিচারপতিদেরকে হটিয়ে দিয়ে সেখানে দলীয় ও অনুগতশীলদেরকে বসিয়েছে সরকার। বিগত ১১ বছর ধরে বিচার বিভাগে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন সবই হচ্ছে শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী। এখানে সরকার আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না।

এছাড়া বিচার বিভাগে সৎ ও নিরপেক্ষ বিচারক ও বিচারপতি থাকলেও তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। নিম্ন আদালতের কোনো বিচারক ও উচ্চ আদালতের কোনো বিচারপতির রায় যদি সরকারের দুর্নীতিবাজ কোনো মন্ত্রী এমপির বিরুদ্ধে যায় তাহলে তাদের আর রেহায় নেই। আর বিরোধী দলের কোনো নেতাকে যদি কোনো বিচারক জামিন দেন তাহলে তার অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়।

বর্তমান সরকারের বিচার বিভাগীয় নীতি হলো সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী এমপিদেরকে জেল দেয়া যাবে না আর বিএনপি জামায়াতের নেতারা নিরপরাধ হলেও জামিন দেয়া যাবে না।

বর্তমান সরকারের আমলে এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি (ষড়যন্ত্রমূলক)মামলায় জামিন দেয়ার পর এক বিচারককে দেশ ছাড়া করেন। ২০১৩ সালে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহার হোসেন (ষড়যন্ত্রমূলক)অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে দুদক। এক পর্যায়ে ওই বিচারক মোহাহের হোসেন দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় যেতে বাধ্য হন।

তারপর দ্বিতীয় ঘটনা হলো বহুল আলোচিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ঘটনা। সংসদ এবং সরকারের হাত থেকে মুক্ত করে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের বিচারক ও বিচারপতিদের নিয়োগ-অপসারণের যখন রায় দিলেন, তখনই শেখ হাসিনার এক সময়ের অনুগত বিচারপতি সিনহা বাবুও হয়ে গেলেন দুর্নীতিবাজ। রায় বিপক্ষে যাওয়ায় একজন প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছেন শেখ হাসিনা। এরপর তার বিরুদ্ধে একেরপর এক দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মামলা দেয়া হচ্ছে।

এরপর সর্বশেষ ঘটনা ঘটলো পিরোজপুরে। দুর্নীতির মামলায় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী মহিলা আ.লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের জামিন আবেদন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নানকে কথিত ‘দুর্নীতির অভিযোগে’ তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল তার স্ত্রী চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা মানুষের বাড়িঘর ও জমি দখল করেছে। এই দুর্নীতিবাজ দম্পতির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোয় বিচারক আব্দুল মান্নানকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয় বলছে, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন, ‘আমি নিরপেক্ষ থাকতে চাই।

এখন প্রশ্ন, বিচারক আব্দুল মান্নান যদি দুর্নীতিবাজ হন তাহলে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এতদিন কোথায় ছিল? সাবেক এমপি আওয়ালের জামিন বাতিল করার পর তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয় কেন? একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশেই বিচারক আব্দুল মান্নানকে বদলি করা হয়েছে। আর তাকে বদলির মূল কারণ হলো দুর্নীতিবাজ আওয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন বাতিল করা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com